বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক পৃথিবীর জন্য অভিশাপ। অবৈধ সম্পর্কের কারণে আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত খুন, আত্মহত্যা, বাবা-মার অবাধ্যতা কিংবা মাদকাসক্তির মতো বহু ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। নাম প্রেম-ভালোবাসা হলেও এ ধরনের সম্পর্কের মূল গন্তব্য ব্যভিচার। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে : তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ (বনি ইসরাইল)। এখানে কোরআনের বর্ণনাভঙ্গির দিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করা দরকার। আল্লাহ কোরআনে যত জায়গায় বিভিন্ন বিষয় নিষিদ্ধের কথা বলেছেন, সেসব জায়গায় বলেছেন, তোমরা অমুক কাজ কর বা অমুক কাজ তোমাদের জন্য হারাম। ব্যতিক্রম ব্যভিচার। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ বললেন, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। তার মানে, এটা এমন এক পাপ, যার কাছাকাছি গেলেই চূড়ান্ত কর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়। এজন্য আল্লাহ এর কাছেও যেতে নিষেধ করেছেন। আর হারাম সম্পর্ক এই অপকর্মের প্রথম পদক্ষেপ বা দরজা।
পশ্চিমারা নিজেদের দেশে বহু আগেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে স্বাভাবিক করেছে। তাদের দেশে এখন বিবাহ বরং অস্বাভাবিক। কিন্তু বিবাহবহির্ভূত কথিত প্রেম-ভালোবাসা স্বাভাবিক। নিজেদের দেশে স্বাভাবিক করার পর এখন তারা সারা দুনিয়াতেই এই সম্পর্ককে সহজ ও স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে আমাদের দেশের অবস্থা অন্য রকম ছিল। সেই সময় সহজে কেউ হারাম সম্পর্কে জড়াতে পারত না। জড়ালেও প্রকাশ্যে সেটার ঘোষণা দেওয়ার কথা তারা কল্পনাও করত না। অথচ বর্তমান অবস্থা এমন, হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে ছেলেমেয়ে উভয়ই ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন তো বটেই, খোদ বাবা-মাও সন্তানের হারাম সম্পর্কের কথা জানেন এবং অধিকাংশ বাবা-মা এটাকে স্বাভাবিক কাজ মনে করেন। অথচ স্বাভাবিক মানবধারা টিকিয়ে রাখতে এবং আল্লাহর প্রিয় হওয়া ও জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে এই ধরনের সম্পর্ক থেকে নিজেকে পবিত্র রাখার কোনো বিকল্প নেই। এক হাদিসে রসুল (সা.) সাত শ্রেণির মানুষকে কেয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়ায় আশ্রয় পাওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের একজন হলেন সেই যুবক, যে হারাম সম্পর্কের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারে। রসুল (সা.) অন্যত্র বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী অংশ (জিহ্বা) ও দুই পায়ের মধ্যবর্তী অংশ (লজ্জাস্থান) সংযত রাখার দায়িত্ব নেয়, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্বশীল হব (বোখারি)।
বিবাহ একটি সামাজিক চুক্তি। এর সঙ্গে শুধু দুটি মানুষ নয়, দুটি পরিবার এমনটি দুটি সমাজ যুক্ত থাকে। তাদের পরস্পরের মাঝে দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকার তৈরি হয়। ফলে এখানে সহজে জুলুম হয় না। পক্ষান্তরে হারাম সম্পর্ক হয় সঙ্গোপনে, সবার অলক্ষ্যে অথবা একান্ত দুজনের পছন্দের ভিত্তিতে। এখানে কোনো সামাজিক চুক্তি ও পারিবারিক কমিটমেন্ট থাকে না। এর প্রধান গন্তব্য থাকে শরীর। ফলে এখানে জুলুম, প্রতারণার শঙ্কা বেশি থাকে। যার পরিণতি আমরা আমাদের চারপাশে দেখতে পাচ্ছি। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যে জীবনবিধান দিয়েছেন, তা আমাদের কাছে যুক্তিসংগত মনে হোক অথবা না হোক, এর সবই আমাদের জন্য কল্যাণকর। বর্তমানে আমরা ‘ভালো’র মস্তিষ্কপ্রসূত সংজ্ঞা বানিয়ে নিয়েছি। অর্থাৎ যে কাজে অন্যের ক্ষতি নেই সেটাই ভালো কাজ। এই সংজ্ঞার আলোকে বলা হয়, ব্যভিচারে যেহেতু পারস্পরিক সম্মতি থাকে এবং এতে কারও ক্ষতি করা হয় না, তাই এটা খারাপ কাজ নয়।
কথা হলো, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন, কীসে আমাদের কল্যাণ আর কীসে অকল্যাণ। একটি শিশু যখন মোমবাতির মাথায় নাচতে থাকা আগুনের শিখা দেখে, মুগ্ধ হয়। মুগ্ধতা থেকে শিখাটিকে সে ধরতে যায়। কিন্তু বাবা-মা তাকে বাধা দেয়। শিশুটি তখন চিৎকার করে কাঁদে। তার কান্নার ভাষা যদি অনুবাদ করা যেত, তবে বোঝা যেত, সে হয়তো বলছে, এত সুন্দর জিনিসটি আমাকে ধরতে দিচ্ছ না কেন! আমি তো কারও ক্ষতি করছি না! শিশুর মতো পশ্চিমারাও বোঝেনি। ফলে ব্যভিচারকে তারা সহজ, স্বাভাবিক করেছে। এর পরিণতি এখন তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তাদের সমাজ থেকে বৈবাহিক সম্পর্ক বিলুপ্ত হতে চলেছে। আর বৈবাহিক সম্পর্ক হ্রাস পাওয়ার কারণে তাদের জন্মের হারও মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। মানুষ যখন সহজেই পশুর মতো পথেঘাটে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ পায়, তখন সে বিবাহের মতো সামাজিক শৃঙ্খলা ও দায়িত্বের জোয়াল কাঁধে নিতে চায় না। আর বিবাহ হ্রাস পেলে জন্মহারও হ্রাস পাবে এটাই স্বাভাবিক। যার মাশুল এখন পৃথিবীর তথাকথিত প্রায় সব উন্নত দেশকে দিতে হচ্ছে। তাই আসুন, পশ্চিমাদের পরিণতি থেকে আমরা শিক্ষা নিই এবং আল্লাহর বিধানের কাছে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সঁপে দিই।
জুমার মিম্বর থেকে
গ্রন্থনা : সাব্বির জাদিদ