শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

জান্নাতের পথে এগিয়ে চলি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

জান্নাতের পথে এগিয়ে চলি

মাহে রমজানের মর্যাদা আলোচনা করতে গিয়ে রসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের তিন দশকে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তিন ধরনের বৃষ্টি ঝরে। প্রথম দশকে ঝরে রহমতের বৃষ্টি। দ্বিতীয় দশকে মাগফেরাত এবং তৃতীয় দশকে ক্ষমা। প্রথম ১০ দিন ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমতে সিক্ত হবে। দ্বিতীয় দশকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। আর তৃতীয় দশক তথা শেষ দশকে বান্দা কান্নাকাটি এবং ইতিকাফের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে নাজাত-মুক্তি নিশ্চিত করবে।

পাঠক! এখন আমরা রহমতের বৃষ্টিতে ভিজছি। দুনিয়াজুড়ে আরশের মালিক রহমত বর্ষণ করছেন। ভাগ্যবান বান্দা সে, যে প্রভুর রহমত ধারণ করতে পারল। আর যে অবহেলা-অযতেœ প্রভুর রহমত থেকে দূরে থেকেছে, তার ব্যাপারে আমরা আর কী বলব, নবীজি নিজেই বলেছেন, এমন হতভাগ্য বান্দা আরশের নিচে জমিনের ওপরে আর কেউ নেই। বৃষ্টি যখন হয় তখন সব জায়গাতেই বৃষ্টি হয়। কিন্তু সব ভূমি বৃষ্টির পানি ধারণ করে না। যে ভূমিটা উঁচু, বাঁকা, সেখানে বৃষ্টি ঝরলেও পানি জমে না। তেমনি আল্লাহর রহমত সব বান্দার ওপর সমানভাবে ঝরছে, ঝরবে। কিন্তু, যে বান্দার কলবের জমিনটা অহংকারে উঁচু হয়ে আছে, নাফরমানিতে বেঁকে গেছে, সে বান্দা খোদার রহমত ধারণ করার যোগ্যতা রাখে না। কারণ, অহংকারীকে আল্লাহপাক যতটা অপছন্দ করেন আর কাউকে এত বেশি অপছন্দ করেন না। আমার প্রিয় ভাই, সিয়াম সাধনা হলো উঁচু কলবকে নিচু বানানোর মাস। অহংকারী মনকে বিনয়ী করার মাস। বান্দা যখন সিয়াম সাধনা শুরু করে, আস্তে আস্তে মসজিদের সঙ্গে, কোরআনের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলে, তখন অটোমেটিকভাবে হৃদয় নরম হয়ে আসবে। চোখ ভিজে ওঠবে। দুনিয়ার মায়ামোহ তুচ্ছ মনে হবে। কবরের জীবনের জন্য এক ধরনের পেরেশানি, টান অনুভব হবে। কিন্তু, শুরুটা আপনাকেই করতে হবে। অনেক মানুষ মনে করে, কোনো এক অলৌকিক শক্তি তাকে হঠাৎ ভিতরে-বাইরে বদলে দেবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বান্দা যদি নিজেকে বদলানোর জন্য প্রস্তুত না করে, নিজের ভিতরে যদি রহমত ধারণের জন্য সচেষ্ট না হয়, তাহলে আল্লাহ নিজ থেকে কাউকে পরিবর্তন করে দেন না। পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ জালেমদের হেদায়াত করেন না। পথ দেখান না। বছরের অন্যান্য মাসে যে সুযোগটা থাকে না, রমজানে সে সুযোগ আমরা পেয়ে যাই। পুরো রমজানজুড়ে সব জায়গায় এক ধরনের ধর্মীয় আবহাওয়া তৈরি হয়। কেউ চাইলে এ সময়ে খুব সহজেই নিজেকে বদলে নিতে পারে। খারাপ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। অহংকারের উঁচু মনটাকে বিনয়ে গলিয়ে নেওয়ার সুযোগ রমজান ছাড়া আর অন্য কোনো মাসে এত সুন্দর এত চমৎকারভাবে আসে না। যারা প্রভুর সামনে দাঁড়ায় না, নিজেকে প্রভুর কাছে সমর্পণ করে না, তাদের চেয়ে হতভাগা আর কে আছে? রমজানের বৃষ্টিতে যে ভিজল না, রহমতের প্রতিটি ফোঁটা যে যতেœর সঙ্গে গ্রহণ করল না, তার চেয়ে পোড়া কপাল আর কে আছে? হে আমার ভাই! আপনার কি মন চায় না, যে প্রভু এত নিপুণভাবে আপনাকে সৃষ্টি করল, মায়ের পেট থেকে শুরু করে জীবনের এতগুলো বসন্ত তিলে তিলে আপনাকে প্রতিপালন করলেন, শত অন্যায়-অবাধ্যতা সত্ত্বেও যে আল্লাহ আপনার অক্সিজেন, পানি, রিজিক বন্ধ করে দেননি, সেই আল্লাহর রহমতের কোলে ফিরে আসি। একবার প্রভুর কথা মতো চলে দেখুন কী পুরস্কার পান। আপনার জন্য একটি আকর্ষণীয় অফার রেখছেন নবীজি (সা.)। হাদিস শরিফে নবীজি বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেলে বাবা-মা যত খুশি হন, আল্লাহর কোনো পথভোলা বান্দা যখন প্রভুর রহমতের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আল্লাহ তার চেয়ে বেশি খুশি হন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, বাবা-মা যেমন ডানপিঠে সন্তানের জন্য পেরেশান থাকেন, আমি আল্লাহও কথা না শোনা বান্দাটির জন্য আরও বেশি পেরেশান থাকি। অপেক্ষায় থাকি, একদিন না একদিন সে প্রভুকে চিনবেই। প্রভুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বেই। যখন সে অল্প অল্প আমাকে চিনতে শুরু করে, আমি তার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দেই। সে যখন প্রভুর ভাবনায় মন ফেরায় আমি তখন দুই হাত বাড়িয়ে তার অপেক্ষায় থাকি। সে আমার দিকে হাঁটা শুরু করলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। সত্যিই তো! আল্লাহকে ভুলে তার রহমতে না ভিজে যে বান্দা কবরে যায়, তার চেয়ে পোড়া কপাল আর কেউ হয় না। হে সায়েম ভাই! আসো! প্রভুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ি। রহমতের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে জান্নাতের পথে এগিয়ে চলি। আল্লাহতায়ালা আমাদের রহমত বর্ষণ করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন, চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

               www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর