শিরোনাম
সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিবেকহারাদের বিবেক জাগিয়ে দিন হে আল্লাহ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বিবেকহারাদের বিবেক জাগিয়ে দিন হে আল্লাহ

কী লিখব? কোনটা বলব? এ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে। কয়টা বলব। বলেই বা কী হবে। বোধহয় আমাদের এ সময়ের কথা ভেবেই অনেক আগে আল্লামা ইকবাল লিখে গেছেন- ‘ফুল বাগান নষ্ট করার জন্য একটি হুতুম পেঁচাই যথেষ্ট। কিন্তু হুতুম  পেঁচা এখন ডালে ডালে। ফুল বাগানের অবস্থা কত বীভৎস হবে তা শুধু আল্লাহপাকই ভালো জানেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশ বাংলাদেশ এখন ভেজাল, খুন, মাদক, নষ্টামি, পরকীয়া, চুরি, ঘুষ, দুর্নীতি এক কথায় যত ধরনের অপরাধ মানুষ করতে পারে সব ধরনের অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যে যেভাবে পারছে অন্যায়-দুর্নীতির জোয়ারে নিজেকে জড়াচ্ছে। মৃত্যুর কথা তারা চিন্তা করে না। পরকাল বলে কিছু আছে তা তারা বিশ্বাস তো দূরের কথা জানে বলেও মনে হয় না।

একটা দেশের, একটা জাতির, ছোট থেকে বড় সবাই অন্যায়ের সঙ্গে নিজেকে জড়াচ্ছে এটা কেন হচ্ছে? কখন হয়- এ প্রশ্নের কী উত্তর আছে আমাদের কাছে? কেউ হয়তো বলবেন শিক্ষার অভাব। কিন্তু শিক্ষার হার তো আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কেউ হয়তো বলবেন, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব। এ উত্তরও টিকবে না। কারণ, আগের চেয়ে হাজারগুণ মসজিদ মাদ্রাসা আলেম ওলামা ধর্মীয় জলসা ছড়িয়ে পড়েছে মাঠে ঘাটে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এ জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়েছেন সুফি ছড়াকার ধর্মগবেষক হাফেজ আহমাদ উল্লাহ। তার বিখ্যাত গ্রন্থ আলোকিত মানুষের খোঁজে তিনি বড় সুন্দর করে বলেছেন- পৃথিবী নামক এই রাজ্যে মানুষকে রাজসুরতে সৃষ্টি করেছেন মহান মাবুদ। তাকে এক মূল্যবান রাজপ্রহরী দান করেছেন। এই রাজপ্রহরী হচ্ছে মানব বিবেক।’ আহমাদ উল্লাহ বলেন, যখন এই রাজপ্রহরী মানব বিবেক ঘুমিয়ে পড়ে তখনই মানবরাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় সর্বত্র। তখন মানুষ তো বটেই সৃষ্টিরাজ্যের প্রতিটি সৃষ্টিই অশান্তিতে ভোগে। যন্ত্রণায় কাতরায়।

পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহপাক বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়ার পরই বলেছেন, ইয়া উলিল আলবাব। অর্থাৎ যারা বিবেকবান, বিবেক খাটিয়ে যারা জীবনযাপন করে তাদের জন্যই এ বিধান, এ নির্দেশ অনুসরণ করা সহজ হবে। যেমন কিসাসের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ওয়ালাকুম ফিল কিসাসি হায়াতুন ইয়া উলিল আলবাব। লাআল্লাকুম তুফলিহুম। হত্যার দ-বিধি কার্যকরের মধ্যে তোমাদের জন্য সহজ জীবন রয়েছে। যারা বিবেকবান তারাই বুঝবে। আশা করা যায় তারাই সফল হবে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ওয়াতাযাওয়াদু ফাইন্না খায়রা যাদিত তাকওয়া। ইয়া উলিল আলবাব। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পাথেয় হলো তাকওয়া। বিবেকবানরাই শুধু এ কথা বুঝতে পারে। তো আজকে আমরা বিবেকহারা কাঁকড়া মানুষ হয়ে পড়েছি। তাই নামাজ-রোজা-হজ-জাকাত কোনোকিছুই আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে না। সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের ভিতরের কাঁকড়া ভাব বহুগুণ শক্তি নিয়ে মাথাচাড়া দিচ্ছে বারবার। তাইতো আমরা ধর্মকর্মও করছি আবার কুকর্মেও সেরাদের সেরা হচ্ছি। এভাবে তো কোনো আদর্শ জাতি গড়ে ওঠতে পারে না। কোনো ধর্মই পৃথিবীর বুকে গৌরব নিয়ে এভাবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারে না।

মুসলমানদের অতীত তো এমন ছিল না। হে মুসলমান! আবার জেগে ওঠো। নিভে যাওয়া বিবেকে কোরআনের আলো জ্বেলে দাও। ঘুুমিয়ে পড়া আত্মায় নবীর প্রেম জাগিয়ে তোল। নয়তো ধ্বংস অনিবার্য। পূর্ববর্তী বহু প্রজম্মকেই আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছেন। এসব পাপের জন্য হয়তো আমরা অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাব। এখনো সময় আছে প্রভুর ক্ষমার চাদরে দৌড়ে আসার। তওবা করে জান্নাতের দিকে এগিয়ে আসার। হে আল্লাহ! বিবেকহারা মুসলমানদের বিবেক জাগিয়ে দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর