শিরোনাম
শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বড় মানুষের দুঃখ

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বড় মানুষের দুঃখ

কেবল আমরা সাধারণ মানুষেরা নই, বড় বড় মানুষেরাও ভুল করেন। কেউ কেউ বলেন, বড় বড় মানুষেরা যে ভুল করেন সেটা ভালোই করেন, তাঁদের দেখে আমরা সান্ত¡না পাই এই ভেবে যে, তাঁরা যদি ভ্রান্ত হন তবে আমরা কোন ছার! তা ব্যক্তিগত ব্যাপারে ভুল করুন ঠিকই আছে, বিপদ হয় রাজনৈতিক ব্যাপারে ভুল করলে। আমরা জড়িয়ে পড়ি। প্রহৃত, বিপদগ্রস্ত, বিপর্যস্ত হই। মারা পড়ি।

মওলানা আজাদ বলেছেন, তিনি ভুল করেছিলেন। মস্ত বড় ভুল। ঠিক একই কথা বলেছিলেন জিন্নাহও। বলেছেন, মস্ত বড় ভুল করেছিলেন। এবং কী আশ্চর্য, পরিহাস কত বড়, একই বিষয়ে ভ্রান্তি তাদের- পাকিস্তান বিষয়ে। দুজনে দুই শিবিরের মানুষ ছিলেন তাঁরা। পাকিস্তান প্রশ্নে ঠিক আকাশ-পাতালের ব্যবধান তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, কিন্তু ঠিক ওই ব্যাপারেই মস্ত বড় ভুল করলেন তাঁরা উভয়েই। পরিহাস তো বটেই। ইতিহাসের? নাকি মানুষের?

মওলানা আজাদের সেই ত্রিশ পৃষ্ঠার রহস্য বিশ বছরের প্রতীক্ষা ও নানা মামলা-মোকদ্দমার বাধা পার হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লিখে গেছেন, তাঁর মৃত্যুর আগে ১৯৪৬ সালে জওহরলাল নেহেরুকে কংগ্রেসের সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ভুলটি করেছেন। কেননা সভাপতি হয়েই নেহেরু একটা কা- করলেন। বলে বসলেন যে, ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান গ্রহণের দ্বারা কংগ্রেসের হাত-পা বাঁধা পড়ে যায়নি, কংগ্রেস ইচ্ছা করলেই ওই প্ল্যান যেমন ইচ্ছা বদলে নিতে পারবে। জিন্নাহ যেন এই বক্তব্যের অপেক্ষাতেই ছিলেন। ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে থাকার ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান জিন্নাহ না পারতে মেনে নিয়েছিলেন, এখন কংগ্রেস তা মেনে নেয়নি বলার সুযোগ পেয়ে তিনিও বলে বসলেন, তাহলে আমরাও মানি না। উল্টো তিনি প্রত্যক্ষ কর্মপন্থা দিবস ঘোষণা করলেন। দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধে গেল। অনিবার্য হয়ে পড়ল পাকিস্তান সৃষ্টি। এভাবে নেহেরু যে পাকিস্তানকে ঠেকাবেন ভেবেছিলেন এবং চেয়েছিলেন, সেই পাকিস্তানকেই প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে দিলেন। মওলানার দুঃখ নেহেরুর নাম তিনিই প্রস্তাব করেছিলেন, না করলে নেহেরু কংগ্রেসের সভাপতি হতেন না এবং ওই কথা বলার সুযোগও পেতেন না।

দুঃখ জিন্নাহরও। মৃত্যুর আগে তিনিও বলে গেছেন পাকিস্তান সৃষ্টি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কাকে বলেছেন? খোদ ‘কায়েদে মিল্লাত’ ‘উজিরে আজম’ লিয়াকত আলী খান সাহেবকে। কথাগুলো মারাত্মক- ‘নিজেকে তুমি এখন মস্ত মানুষ মনে করছ তাই না? তুমি কে? কিচ্ছু না। আমিই তোমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছি। তুমি ভাবছ তুমিই পাকিস্তান বানিয়েছ। তুমি না। বানিয়েছি আমি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি যে, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করে ফেলেছি। এখন যদি সুযোগ পাই আমি দিল্লি যাব, জওহরলালকে বলব অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে আবার বন্ধু হতে।’ মৃত্যুপথযাত্রী জিন্নাহ বলেছেন এ কথা, লিয়াকত আলী খানকে। বলে হাত তুলে ভঙ্গি করেছেন হাত মেলানোর। নেহেরুর সঙ্গে।

সাক্ষী তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক লে. ক. ইলাহি বক্স। পরে লিয়াকত আলী খান সেই তাঁদের পরস্পরের শেষ সাক্ষাৎ সেরে চলে গেলে, ফাতেমা জিন্নাহ বলেছেন ইলাহি বক্সকে, ‘লিয়াকত আলী খান এসেছিলেন নিজের চক্ষে দেখে যেতে ভাই আর কতক্ষণ বাঁচবেন।’ ভ্রাতার রোগশয্যার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন তিনি ও কথা। ফাতেমা জিন্নাহর উক্তিটি এর আগেই প্রকাশ পেয়েছে এবং তার ভিন্ন রকম অর্থ এতদিন করা হচ্ছিল, কিন্তু জিন্নাহর নিজের উক্তির আলোকে ফাতেমা জিন্নাহর উক্তির অর্থ এখন একটাই দাঁড়ায়, অন্য কোনোটা নয়।

জিন্নাহ লিখে যাননি এসব কথা। সময় ছিল না। লিখলেও প্রকাশ পেত না। পাকিস্তানে তখন অন্যরকম অবস্থা। এমনকি ওই যে চিকিৎসক তিনিও এসব কথা লেখেননি নিজে, যদিও জিন্নাহর শেষ দিনগুলোর ওপর একটি বই লিখেছেন তিনি। তবে এক বন্ধুকে বলেছেন সব কথা। সেই বন্ধুও ফেলনা কেউ নন, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন একসময়ে। এই দ্বিতীয় ভদ্রলোক সম্প্রতি পেশোয়ারের এক দৈনিকে একটি প্রবন্ধে ফাঁস করে দিয়েছেন এসব কথা। তিনি বলেছেন, ১৯৫২ সালে লে. ক. ইলাহি বক্স তাঁকে বিবরণ দিয়েছিলেন সমগ্র ঘটনার। ‘আল্লাহ আমাকে শাস্তি দেবেন, যদি ইলাহি বক্সের কথা এক বর্ণও বাড়িয়ে বলে থাকি আমি,’ ইনি কসম খেয়ে বলেছেন। ইলাহি বক্স নিজে একটা বই লিখছেন, কিন্তু তাতে এসব তথ্য কিছু দিলেন না। কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ইলাহি বক্স বলেছেন, জবাব সোজা। ভয়। ‘ভয় ছিল সত্য কথা বললে লোকে আমাকে ফেড়ে ফেলবে।’ কে অস্বীকার করবে এর যথার্থতা?

পাকিস্তান যে একটা ভুল এ তো কংগ্রেস বলবে, জিন্নাহ কেন বললেন? সে প্রশ্ন খুবই জরুরি, বিশেষ করে আমাদের জন্য, আমরা যাঁরা জড়িত এবং ভুক্তভোগী। কিন্তু তারও আগে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা দরকার : ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা কী? পাহাড় বেয়ে গাড়িটা নামছিল তখন ঘোড়া গাড়িকে টানছিল, নাকি গাড়ি ঘোড়াকে ঠেলছিল পেছন থেকে? এ জিজ্ঞাসা টলস্টয়ের তাঁর ‘যুদ্ধ ও শান্তি’ উপন্যাসে। আরও একটি উপমা দিয়েছেন তিনি, আপেলটি যে পড়ে গেল তার কারণ কী? বোঁটাটি শুকিয়ে গেছিল? জোরে বাতাস বইছিল? পাখিতে ঠুকরে দিয়েছিল? নাকি নিচে দাঁড়ানো বালকটি ইচ্ছা করেছিল বলেই টুপ করে পড়ে গেল ফলটি। বালক তাই মনে করে। আমরাও তাই মনে করি। ইতিহাসের গাছের নিচে অপেক্ষমাণ বালক হয়ে যাই। আমরা থেকে থেকে ভাবী যা কিছু ঘটছে সব আমাদের মঙ্গলের জন্যই। না ভাবলেও ভাবানো হয়। এ ক্ষেত্রেও হয়েছে। প্রচার করা হয়েছে পাকিস্তান আমাদের মঙ্গলের জন্যই, যদিও মঙ্গল হয়েছে অল্প কজনেরই। ধনীদের। বিশেষভাবে পাঞ্জাবি ধনীদের। ওদিকে মওলানা আজাদ মনে করেছেন, পাকিস্তান তিনিই সৃষ্টি করলেন, পরোক্ষে। মাউন্টব্যাটেন অবশ্যই মনে করতে পারেন যে, তিনিই তো দিলেন পাকিস্তান হিন্দুস্থান। এটলি বলতে পারেন তিনিই দায়ী। আর জিন্নাহ তো বলবেনই, বলেছেনই। কিন্তু ইতিহাস কি অত সরল, অমন একরৈখিক? না, তা নয়। ইতিহাস বড় জটিল।

এবং ইতিহাস বড়ই পরিহাসপ্রিয়, নইলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ঘোরবিরোধী নেহেরু ও আজাদকে দিয়ে দ্বিজাতিতত্ত্বের সেবা করিয়ে নেবে কেন সে অমনভাবে? জিন্নাহর ক্ষেত্রেও ওই পরিহাস একবার নয়, বার বার দেখা গেছে। এককালে তিনি ছিলেন ‘হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অগ্রদূত,’ কালে তিনিই হলেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রধান প্রবক্তা। ইংরেজি ছাড়া যিনি কথা বলতেন না, সাহেবি পোশাক ছাড়তেন না, খাদ্য-অখাদ্যের ব্যাপারে যার কোনো বাছ-বিচার ছিল না। কোন মাসে রোজা তার খবর রাখতেন না, নিজে বিয়ে করেছিলেন পার্সি মহিলাকে, কন্যা পার্সি যুবককে, তিনিই হলেন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যখন ভারতবর্ষকে দ্বিখ-িত করতে বদ্ধপরিকর সেই সময়েই তিনি মাউন্টব্যাটেনকে বলেছিলেন, ‘পাঞ্জাব ও বাংলার হিন্দুস্থান-পাকিস্তান বিভাজন তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন না।’ যুক্তি কী? যুক্তি খুব স্পষ্ট। ‘আপনি বুঝতে পারছেন না কেন,’ মাউন্টব্যাটেনকে তিনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন ‘পাঞ্জাব হচ্ছে একটি জাতি। (হিন্দু বা মুসলমান তো পরে, আগে আমরা পাঞ্জাবি কিংবা বাঙালি)।’ (ল্যারি কলিন্স ও ডোমিনিক লাপিয়ের, মাউন্টব্যাটেন অ্যান্ড কি পার্টিশন অব ইন্ডিয়া, পৃ. ৪৩)। তাহলে দ্বিজাতিতত্ত্বের বাকি থাকে কী? বাকি তিনি কিছু রাখতে চাননি, যেজন্য পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে, পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, পাকিস্তানে কেউ আর আলাদা করে হিন্দু থাকবে না, মুসলমানও থাকবে না, সবাই মিলে হবে এক জাতি। যে মুসলমানরা ভারতে পড়ে রইল তাঁরা কোন জাতি সে প্রশ্নেরও জবাব দেননি। ওদিকে আবার পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি যখন চঞ্চল হয়েছে, পাঠান অস্থির, বেলুচ উদ্বিগ্ন তখন তিনি তাদের ধমকে দিয়েছেন, বলেছেন, ‘তোমরা কেউ বাঙালি নও, পাঠান নও, বেলুচ নও, সবাই পাকিস্তানি।’ পরিহাসের কি কোনো অবধি আছে?

তা থাক পরিহাস, কিন্তু জিন্নাহ কেন বললেন যে, তিনি ভুল করেছেন পাকিস্তান সৃষ্টি করে, নেহেরুই বা কেন বলতে গেলেন ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান মানি-না-মানি আমার ইচ্ছা? হতে পারে নেহেরু ভেবেছিলেন, সভাপতি হিসেবে তিনি কর্তৃত্ব প্রকাশ করবেন। অন্তত তাই মনে হয় মওলানা আজাদের আত্মজীবনী যদি পড়ি। জিন্নাহ? তাঁর ক্ষেত্রেও ওই একই সন্দেহ আমাদের। তিনি দেখছিলেন পাকিস্তানে তাঁর কর্তৃত্ব নেই। তিনি কর্তৃত্ব ভালোবাসতেন, যেজন্য তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী না হয়ে গভর্নর জেনারেল হয়েছিলেন এবং তাঁর পাকিস্তানে গভর্নর জেনারেলই হবেন সর্বেসর্বা, প্রধানমন্ত্রী আজ্ঞাবহ (প্রাগুক্ত গ্রন্থ, পৃ. ৪৭)। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখলেন এক পাহাড়ি অঞ্চলে তাঁকে ফেলে রাখা হয়েছে, কেউ খোঁজ নেয় না, টেলিগ্রাম পাঠালে ওষুধ আসে না। বুঝে ফেললেন পাকিস্তান কী বস্তু। রেগেমেগে তাই ওই কথা বললেন, লিয়াকত আলী খানকে। লিয়াকত আলী কী করলেন? ইলাহি বক্স বলছেন লিয়াকত আলী একটুও বিচলিত হননি। জিন্নাহকে শায়িত রেখে হেঁটে চলে এলেন। পাশের কামরা পার হয়ে বারান্দায় গেলেন। ‘তারপর তিনি খুব জোরে হাসলেন এবং উঁচু গলায় বললেন, বৃদ্ধ এখন বুঝতে পেরেছেন যে, তিনি ভুল করে ফেলেছেন।’ আবার হাসি।

এর কদিন পরই জিন্নাহর মৃত্যু হয়। লিয়াকত আলী খান নিজেও এরপর বেশি দিন বাঁচেননি। বছর তিনেক পরে তিনিও মারা গেলেন। জিন্নাহর তবু স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল, লিয়াকত আলী খুন হলেন। মৃত্যুর আগে সেই প্রসিদ্ধ উক্তিটি করে গেলেন, ‘খোদা পাকিস্তান কি হেফাজত কারে’। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, যাঁরা তাঁকে হত্যা করেছেন তাঁরাই ওই উক্তি বসিয়ে দিয়েছেন তাঁর মুখে। মারলেনই যখন, তখন অমর করে রাখতে অসুবিধা কি। গরু মেরে জুতা দান। পরিহাস।

কিন্তু আরও বড় পরিহাস তো এইখানে যে, ওই দোয়ার খুব প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য। কেননা খোদা ছাড়া পাকিস্তানকে বাঁচাতে পারে এমন শক্তি কারও ছিল না। তাঁরা, যাঁরা খুন করেছিলেন লিয়াকত আলীকে, তাঁরা পাকিস্তান চাননি, পাকিস্তানকে রক্ষার ব্যাপারেও তাঁদের মাথাব্যথা ছিল না, কেবল নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার চেয়েছিলেন। কার স্বার্থ? পুঁজিপতির ও জমিদারের, বিশেষ অর্থে পাঞ্জাবির। জিন্নাহ পাঞ্জাবি ছিলেন না, লিয়াকত আলীও না, পাঞ্জাবিরা পাকিস্তান আনেনি, কিন্তু স্থির হয়ে গিয়েছিল যে তারাই পাকিস্তান শাসন করবে। তাই ঘটল। জিন্নাহ ও লিয়াকতের পরে প্রথম এলো পাঞ্জাবি আমলারা, পরে সেনাপতিরা। খ-িত পাকিস্তানে এখনো পাঞ্জাবিরাই প্রধান। বেনজির ভুট্টোর প্রধান অযোগ্যতা ছিল তিনি যে মহিলা তা নয়, অযোগ্যতা তিনি পাঞ্জাবি নন, সিন্ধি। আর ওই যে মোহাজের, ভারত থেকে এসেছে সর্বস্ব খুইয়ে, তারাও এখন বুঝছে পাঞ্জাবি সাথী কী বস্তু। মোহাজের নেতা আলতাফ হোসেন পাঞ্জাবি নেতা নওয়াজ শরিফকে বলে দিতে কসুর করেননি, ‘আপনারা তো আমাদের ভারতের চর মনে করেন, তাহলে?’ পাঞ্জাবিরা যেহেতু নিজেদের পাঞ্জাবিই বলে পাকিস্তানি না বলে, মোহাজেররা তাই বলছেন, তাহলে স্বীকার করতে হবে যে, পাকিস্তানে এখন জাতিসত্তা চারটি নয়, পাঁচটি- পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ ও মোহাজের। তাহলে? পাঁচ জাতির আবির্ভাব। পঞ্চজাতির সম্মিলন। আসল কথা স্বার্থ। জাগতিক স্বার্থই নানা রকম আধ্যাত্মিক ছদ্মবেশ গ্রহণ করে, নানা সময়ে। বেনজির ভুট্টো নিজেকে সিন্ধি বলেননি, বলেছেন পাকিস্তানি। সিন্ধি বললে সুবিধা নেই, অসুবিধা রয়েছে। সমুহ।

বড় বড় মানুষেরা বড় বড় ভুল করেন এবং দুঃখ প্রকাশ করে আরও বড় হন। কিন্তু তারা কী করবে যারা উলুখাগড়া, রাজায় রাজায় যুদ্ধে যাদের প্রাণ যায়? কিংবা যারা গাছের তলের বালক, যে ভাবে ফলটা তার জন্যই পড়েছে, কিন্তু তুলতে পেলেই দেখে বিপদ, দারোয়ান আসছে ছুটে। ঘাড় ধরে বলে, তুমি চোর। মূল্য যা দেওয়ার এই সাধারণ মানুষই দেয়। দিয়েছে বৈকি সাতচল্লিশেও। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তাদের জন্য ভুল করার কোনো সুযোগ ছিল না, সুযোগ ছিল কেবল প্রাণ দেওয়ার। অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করার।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর