সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন। গতকাল প্রথম দিনের বৈঠকে ২৬টি দলের মধ্যে ২৩টি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কার্যক্রম পাশাপাশি এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় তারা। বাকি তিনটি দল ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছে। বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলগুলো একে একে গণমাধ্যমের সামনে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
সংস্কার প্রশ্নে মতানৈক্য হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে গতকাল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক শুরু হয়। আজও দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। গতকাল বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখানে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এমন একটা কাজে যুক্ত হতে পারায় আমার ভিতরে শিহরণ জাগে। আমাদের ওপরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংস্কার করার জন্য। এজন্য অনেকগুলো কমিশন করে দিয়েছিলাম। খুবই আনন্দের সংবাদ-তারা কাজগুলো করেছে। প্রশ্ন দাঁড়াল কমিশনের প্রস্তাবে কীভাবে ঐকমত্য হবে? আমরা একটা ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম। আপনারা সবাই অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, বিতর্ক করেছেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এমন আগ্রহ নিয়ে আমরা সবাই যদি বসি নিশ্চয়ই এর মধ্যে থেকে ভালো কিছু আসবে। আলোচনার প্রথম পর্বে আমরা জুলাই সনদ করার ব্যাপারে একমত হয়েছি। দ্বিতীয় পর্বে আমরা কী করব? অনেকগুলো বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসে গেছি। আর একটু হলে হয়তো ঐকমত্যের সুপারিশে আরও সুপারিশ যুক্ত করা যাবে। এই সুযোগটা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। যেখানে যতটুকু দূরত্ব আছে, তা ঘুচিয়ে এনে এই দ্বিতীয় পর্বে যেন আরও কিছু সুপারিশে একমত হতে পারি। তাহলে দেখতে সুন্দর লাগবে। জাতীয় একটা সনদ হবে। আমরা যেন গর্বের সঙ্গে বলতে পারি-আমরা বিভক্তির রাজনীতি সৃষ্টি করিনি। আমরা রাজনীতি সৃষ্টি করেছি ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য। আশা করি আমরা সেই পর্বে ঢুকতে পারব এবং অত্যন্ত চমৎকার একটা জুলাই সনদ তৈরি করতে পারব। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দলটির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষ সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের বিস্তারিত মতামত আগেই লিখিতভাবে দিয়েছি। কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে হইনি। এটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সংবিধান সংস্কারের কিছু বিষয় একমত হওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের কথা বলেছি। আর নির্বাচনমুখী যত সংস্কার তা এক মাসেই করা সম্ভব। সংবিধানের সংস্কার জুলাই সনদে নির্ধারিত হলে তা নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার কোনো কারণ নাই। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে ডিসেম্বরে নির্বাচনে তাদের আপত্তি নেই বলে গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে জানান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ সময় দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা দ্রুত নির্বাচনের ডেডলাইন চাই। তবে এ ব্যাপারে একটা নির্দিষ্ট তারিখেই নির্বাচন দিতে হবে সেই ব্যাপারে যেন আমরা স্থির না থাকি। কারণ, সংস্কার না হলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে আগামী নির্বাচনও পূর্বের মতো প্রহসনের নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা বলেছি সংস্কার, নির্বাচন আয়োজন ও গণহত্যার বিচার কার্যক্রম পাশাপাশি চলবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছি। বৈঠকে ২৬টি দল বক্তব্য রেখেছে। তার মধ্যে ২৩টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। কেউ কেউ আরও আগে নির্বাচন দাবি করেছে। শুধু তিনটি দল ভিন্নমত পোষণ করেছে। বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগে জুলাই সনদ ঘোষণা হোক। তার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ঠিক হবে না। জুলাই সনদ কার্যকর হলে পরে আমরা নির্বাচনের সময় জানাব। আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে আমরা জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি জানিয়েছি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা ডিসেম্বর নয়, তারও আগে নির্বাচন দিতে বলেছি। বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।