২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতাবিবর্জিত। এতে গুণগত কিংবা কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথমবারের মতো দেওয়া প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রত্যাশা খুবই কম। এ বাজেটে আগের সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে খুব একটা বের হতে পারেনি। বাজেটের সাইজ ছোট হওয়া উচিত ছিল। গুণগত দিক দিয়ে এবারের বাজেটে পরিবর্তন নেই, সংখ্যার সামান্য পরিবর্তন রয়েছে। তাই সরকারের জন্য এ বাজেট বাস্তবায়ন করা খুব একটা সহজ হবে না। গতকাল বিকালে রাজধানীর বনানীতে হোটেল সারিনায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এ বাজেট রাজস্ব আয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। ব্যাংক থেকে সরকার যদি লোন নেয়, তখন প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ হয় না। রাজস্ব আয়ের পুরোটাই পরিচালনা ব্যয়ে চলে যাবে। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে বাজেট করা উচিত। বাজেটের মৌলিক দিক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, এ বাজেটে মৌলিক জায়গায় দূরত্ব রয়ে গেছে। গুণগত দিক থেকে আমরা কোনো পরিবর্তন দেখি না। কাঠামোগতভাবে কিন্তু আগেরটাই রয়ে গেছে। এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবার জাতীয় সংসদ না থাকায় নতুন অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে সম্প্রচার করা হয়। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ অন্য বছরের মতো এবারও বাজেট পেশের দিনে ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান। তবে দলের পক্ষ থেকে আগামীকাল বুধবার (৪ জুন) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে তিনি জানান।
সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বাজেটের প্রত্যাশা খুব সীমিত। কারণ তাদের একটা সীমাবদ্ধতা, সময়ের ব্যাপার আছে। একটি নির্বাচিত সরকারের বাজেটের প্রতি অ্যাপ্রোচ, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার একটা বিষয় আছে- সেটা বুঝতে হবে। এজন্য মনে করি যে, বাজেটের সাইজটা বাড়াতে বাড়াতে আগের সরকার যে জায়গায় নিয়ে গেছে, সেটার সঙ্গে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। রাজস্ব আয়ের পুরোটাই পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে যখন ব্যয় হয়, তখন কিন্তু আপনি উন্নয়ন বাজেট দেশের ভিতর থেকে দেশের বাইরে থেকে চালাচ্ছেন। তার ফলে যে সমস্যা হয় তা হলো- সরকার যখন দেশের ভিতর থেকে এবং বাইরে থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেয় তখন ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। দেশের মানুষকে সেটা দিতে হয় বছরের পর বছর। সেই ঋণের সুদের কারণে উন্নয়ন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আবার দেশের ভিতর থেকে ঋণ নেওয়া হলো বেশি ক্ষতি। এটার সুদ দিতে গিয়ে পুরো বাজেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সরকারকে অনেক বেশি টাকা ঋণ দেওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের রেট-টাও বেড়ে যায়। দেশের ভিতর থেকে যখন সরকার বেশি ঋণ নেয় তখন ব্যক্তি ঋণ কমে যায়। এর ফলে বিনিয়োগ হয় না। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। মানুষের আয় বৃদ্ধি পায় না। যেহেতু প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ পায় না। তারা বিদ্যমান বিনিয়োগ আরও বাড়াতে পারে না। আমীর খসরু বলেন, রাজস্ব আয়ের সঙ্গে বাজেটের আকারের সম্পৃক্ততা থাকা উচিত ছিল। আমি মনে করি সেটা হয়নি। রাজস্ব আয় যেটা আছে সেটার পুরোটাই পরিচালন ব্যয়ে চলে যাবে। পুরোটায় কিন্তু দেশের ভিতর ও বাইরে থেকে ঋণ নিতে গেলে এর প্রভাবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। এটাই মূল বিষয়। আগের সরকারের দেওয়া বাজেটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আগে যেভাবে বাজেট চলে আসছে, সংখ্যার সামান্য কিছু তারতম্য হয়েছে। কিন্তু বাজেটের মূল যে প্রিন্সিপাল ওইখানে কিন্তু আমরা আগের মতোই রয়ে গেছি। ‘প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলছেন কি না’- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ শব্দটা বলতে চাই না। তবে আগের সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে খুব একটা বের হতে পারিনি। রাজস্ব আয়কে বৃদ্ধি করে বাজেট করা উচিত। এতে বেসরকারি খাতের মানি ফ্লোটা থাকল, বিনিয়োগ থাকল, সুদের হারটা কমে এলো, বিদেশ থেকে ঋণ কমে এলো। সে জায়গা থেকে খুব একটা সরে আসতে পারেনি। আমি মনে করি, মৌলিক জায়গায় গলদ রয়ে গেছে।