শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

হেফাজতের আত্মসমর্পণ

সৈয়দ বোরহান কবীর

হেফাজতের আত্মসমর্পণ

বাঙালির জীবন, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও প্রেমের জন্য বারবার রবীন্দ্রনাথের কাছে যেতে হয়। বিশ্বকবির ঐশ্বর্যভান্ডার থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত ঋণ করতে হয়। তেমনি বাঙালির রাজনীতি, মানবতা এবং অধিকারের জন্য বারবার আমাদের বঙ্গবন্ধুর দ্বারস্থ হতে হয়। মানুষের আবেগ, রাজনৈতিক চিন্তা, দর্শন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর যে প্রাচুর্যে ভরা অভিজ্ঞতা তা আমাদের যে কোনো রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর সহজ করে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজত নিয়ে দেশের রাজনীতির অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা। এ আলোচনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- হেফাজতের কী হলো? তাদের সব শীর্ষ নেতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করছে। হেফাজতের অন্য নেতারা তার প্রতিবাদ তো দূরের কথা, টুঁশব্দটি পর্যন্ত করছেন না। অথচ ২৬ ও ২৭ মার্চ হেফাজতের তান্ডবের পর অনেকেই বলেছিলেন, ‘হেফাজত এখন দানবে পরিণত হয়েছে। এদের নিবৃত্ত করা এত সহজ নয়।’ হেফাজতের নেতারাও হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘হেফাজতের কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হলে সারা দেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ কেউ কেউ আরেক ধাপ বেশি হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, ‘সারা দেশে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লবে।’ কিন্তু হেফাজতের দুই ডজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং শতাধিক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা গ্রেফতারের পর ‘বাঘ’ ‘বিড়ালে’ রূপান্তরিত হলো। এ সময় হেফাজতের আত্মসমর্পণের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ খুঁজতে বঙ্গবন্ধুর দ্বারস্থ হলাম। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে জাতির পিতা আন্দোলন সম্পর্কে কিছু অমূল্য বক্তব্য দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেখানে প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, ‘জনগণকে ছাড়া, জনগণকে সংঘবদ্ধ না করে, জনগণকে আন্দোলনমুখী না করে এবং পরিষ্কার আদর্শ সামনে না রেখে কোনোরকম গণআন্দোলন হতে পারে না।’ ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘আন্দোলন গাছের ফল নয়। আন্দোলন মুখ দিয়ে বললেই করা যায় না। আন্দোলনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হয়। আন্দোলনের জন্য আদর্শ থাকতে হয়।’ সে সময় জাসদের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং হঠকারিতার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু সম্ভবত এ রকম মন্তব্য করেছিলেন। ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, মানুষকে ভয় দেখিয়ে যে আন্দোলন হয় না তা দ্বিধাহীনভাবে উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘যারা মনে করেন রাতের অন্ধকারে গুলি করে কিংবা একটা রেললাইন তুলে দিয়ে টেররিজম করে বিপ্লব হয়, তারা কোথায় আছেন তারা জানেন না। এ পন্থা বহু পুরনো পন্থা। এ পন্থা দুনিয়ায় কোনো দিন কাজে লাগেনি। এ পন্থা দিয়ে দেশের মানুষের কোনো মঙ্গল করা যায় না। একটা রাস্তা ভেঙে দিয়ে ও একজন লোককে অন্ধকারে হত্যা করে শুধু মানুষকে কষ্ট দেওয়া যায়।’ জাসদ সে সময় সে কাজগুলোই করত যা ২৬ ও ২৭ মার্চে এবং ২০১৩-তে হেফাজত করেছে। জাসদ ও হেফাজতের লক্ষ্য এক, অভিন্ন। জাসদ সে সময় চেয়েছিল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করতে। আর এ সময়ের হেফাজত ভেবেছিল শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে ‘ইসলামী বিপ্লব’ ঘটাবে। ’৭৪-এ জাসদ যেমন ব্যর্থ হয়ে এখন আওয়ামী লীগের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে, হেফাজতও তেমনি আত্মসমর্পণে মরিয়া হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করেছে। হেফাজত কেন পারল না? এর উত্তর বঙ্গবন্ধুর ভাষণেই আমাদের খুঁজতে হবে। বঙ্গবন্ধু আন্দোলনের জন্য জনগণকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি। আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ‘জনগণ’। কিন্তু হেফাজতের আন্দোলনে ‘জনগণ’ ছিল না। জনগণকে ভয় দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে হেফাজত ক্ষমতাবান হতে চেয়েছিল। ২০১৩ এবং ২০২১ সালে একই কায়দায় হেফাজত তান্ডব চালিয়েছে জনগণকে ছাড়া। হেফাজত জনগণকে সংঘবদ্ধ করেনি, তাদের চিন্তা ও মত দেশের সিংহভাগ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। হেফাজত যতগুলো আন্দোলন করেছে তার সবই ইস্যুভিত্তিক। তাদের আত্মপ্রকাশ নারীনীতির বিরোধিতা করে। ২০১৩-এর ৫ মে তারা ঢাকায় তান্ডব চালাল গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করল। ২০২১ সালে তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিরোধিতা করল। হেফাজতের অবস্থা হলো পাড়ার মস্তানদের মতো, যারা বিভিন্ন উপলক্ষে এলাকার লোকজনের কাছে এসে চাঁদা নেয়। এদের উত্থান হলে এরা হয়তো বড় মাফিয়া হবে। কিন্তু রাষ্ট্র ও দেশ চালাতে পারবে হেফাজত- এটা সম্ভবত হেফাজতের নেতারাও বিশ্বাস করেন না। হেফাজতের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার মূল ভিত্তি হলো ইসলাম। তাদের কোনো কোনো নেতা বলার চেষ্টা করেছেন, হেফাজত ইসলামের আদর্শ ও নীতি বিরোধী কিছু করতে দেবে না। মানুষ এখন এ কথায় মুখ টিপে হাসে। কারণ ইসলামের নীতি এবং আদর্শ সত্য যদি হেফাজত প্রতিষ্ঠা করতে চাইত তাহলে তো ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে হেফাজতের সবার আগে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হেফাজতের অধিকাংশ নেতাই এসব দুর্নীতিবাজের আর্থিক সহায়তায় চলেন। হেফাজত যদি ইসলামের নীতির জন্য লড়াই করত তাহলে তো মিথ্যাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিত না। কিন্তু হেফাজতের নেতাদের তো মিথ্যার সঙ্গে বসবাস। হেফাজতের এক নেতা নিজের বউ নিয়ে কতবার কত রকমের মিথ্যা বলেছেন, গুনে দেখুন। এমনকি স্ত্রীর কাছে সীমিত পরিসরে সত্য গোপন করা যায় এমন ফতোয়া দিয়েছেন ওই হেফাজত নেতা। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা অপ্রয়োজনীয়। যারা স্ত্রী নিয়ে মিথ্যাচার করে তাদের হাতে ইসলাম নিরাপদ নয়।

হেফাজত আসলে কী? হেফাজতের নেতারাই বলেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নন। এটাকে বলা হয় কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে জনখরা চলছে। পিপাসার্ত মানুষ যেমন মরীচিকাকে পানি ভেবে ছুটে যায়, তেমনি এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো হেফাজতকে জনগণের আড়ত মনে করেছিল। হেফাজত কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ক্রীতদাসের মতো। এ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অনেকেই হেফাজত নেতাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত শারীরিক এবং মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায় হামেশাই। একজন মাদরাসা শিক্ষার্থী দুস্থ। সে জানে এ মাদরাসা থেকে বের হয়ে গেলে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এজন্য শিক্ষকদের ন্যায়-অন্যায় সব নির্দেশ অকপটে মানে তারা। এ সুযোগটি নিয়েছেন হেফাজতের নেতারা। মাদরাসার শিক্ষার্থীরাই তাদের শক্তি। হেফাজত এ শক্তি ব্যবহার করে বাজারে তাদের চাহিদা বাড়ায়। বিএনপি ভাবে এতগুলো মানুষ যদি একসঙ্গে রাস্তায় নামে তা হলেই তো সরকারের পতন নিশ্চিত। বিএনপি তাই হেফাজতের পায়ের কাছে একান্ত অনুগতের মতো বসে থাকে। আওয়ামী লীগ মনে করে এ বিরাট মিলিট্যান্ট যদি রাস্তায় নামে তাহলে তো সরকারের জন্য বিপজ্জনক। তাই আওয়ামী লীগও দুধ-কলা দিয়ে হেফাজত পোষার নীতি নেয়। হেফাজতও দুর্বিনীত মস্তান হয়ে যায়। ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম দাঁড়ায়- ‘টাকা যার হেফাজত তার’। দুষ্ট লোকেরা বলে, আদর্শ কিছু না। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের নতুন নেতাদের লোভাতুর চোখ চারদিকে যায়। এ সময় হেফাজতকে নিলামে তোলে। বিভিন্ন কাজের জন্য যেমন ‘কামলা’ ভাড়া পাওয়া যায়, তেমনি হেফাজতকে ভাড়া করতে মরিয়া হয় দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থাকা কেউ কেউ। তারাই হেফাজতকে সরকারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। হেফাজত হয়ে ওঠে ভাড়াটে সন্ত্রাসী। ২৬ ও ২৭ মার্চে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাস চালিয়ে তারা আরেকবার তাদের শক্তি জানান দিয়েছিল। হেফাজত এসব তান্ডবের মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চেয়েছিল। প্রথমত, বিশেষ মহলের ভাড়াটে হিসেবে তাদের কাছ থেকে প্রণোদনা পেয়ে হেফাজত একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। হেফাজতকে যারা ব্যবহার করেছিল তারা ভেবেছিল যে সরকারকে একটু নড়বড়ে করে তারা চূড়ান্ত আঘাত হানবে। হেফাজতের দ্বিতীয় হিসাব ছিল এ রকম- তান্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পতন না হলেও তাদের ক্ষতি নেই। এ তান্ডবে সরকার ভয় পাবে। এ ভয়ের ফলে তারা হেফাজতের আরও অনুগত হিসেবে কাজ করবে। ২০১৩-তে ভয় দেখিয়ে যেমন সরকারের কাছ থেকে অনেক কিছু হাসিল করেছিল, তেমনি এবার হেফাজত তার রেটটা বাড়িয়ে নেবে। এটা ছিল তাদের পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশ।

২৬ ও ২৭ মার্চ হেফাজতের তান্ডবের পর আওয়ামী লীগ এবং ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বয়ে যাচ্ছিল সমালোচনার টর্নেডো। সরকার কেন হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা করল, হেফাজতকে প্রশ্রয় দিয়ে সরকার ভুল করেছে। ইত্যাদি নানা সমালোচনায় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই লাজবাব। অবশ্য গত কিছু বছর হলো সরকার ও দল পরিচালনায় একজন মানুষের ওপরই সবকিছু নির্ভরশীল। তাঁর দক্ষতা, বিচক্ষণতা এবং দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে নানা সংকট পেরিয়ে, তেমনি আওয়ামী লীগও অনেক সংকট, দুর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যেও টানা এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতায় আছে। তাঁর নাম শেখ হাসিনা। এ কথা তাঁর সমালোচকরাও স্বীকার করেন, রাজনৈতিক চিন্তা এবং কৌশলে তিনি সবার থেকে এগিয়ে। প্রায় একক মেধা ও কৌশলে তিনি সরকার ও দেশ চালাচ্ছেন।

সমস্যা হলো, সরকার এবং আওয়ামী লীগের কেউ জানে না শেখ হাসিনা কী করবেন, কী কৌশল তাঁর। এর কারণ হলো, আওয়ামী লীগ এবং সরকারে আদর্শচর্চা হয় না। তোষামোদকারী, চাটুকাররা শুধু সুযোগের অপেক্ষা করে। তারা কিছু করেও না, শেখ হাসিনা কী করছেন তা জানারও চেষ্টা করে না। শেখ হাসিনাও তাদের ওপর খুব একটা ভরসা করেন বলে মনে হয় না। এদের অযোগ্যতা তাঁর চেয়ে কে বেশি জানে। এ কারণে তিনি সব কাজ করেন নিজে।

শেখ হাসিনা অবশ্য সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে। আওয়ামী লীগ বা সরকারের আর কেউ না জানলেও শেখ হাসিনা ঠিকই জানেন ‘আন্দোলন গাছের ফল নয়’। কিছু ভাঙচুর করলেই সরকার পতন হয় না। শেখ হাসিনা খুব ভালো করেই জানেন দেশের জনগণ হেফাজতের সঙ্গে নেই। এ কারণেই তিনি অপেক্ষা করেছেন। ধীরেসুস্থে আইনের প্রয়োগ করেছেন। মূলত শেখ হাসিনার কৌশলের কাছেই হেফাজত পরাজিত হয়েছে। এমন একসময় হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে যখন বার্ষিক পরীক্ষার পর কওমি মাদরাসার রমজানের ছুটি। চাইলেও হেফাজত তার সংঘবদ্ধ ক্যাডারদের মাঠে নামাতে পারছে না। করোনা সংক্রমণের কারণে দেশে যৌক্তিক লকডাউন চলছে।

২৬ ও ২৭ মার্চের ঘটনার পর কিছু কিছু ঘটনা লক্ষণীয়। এর মধ্যে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারি অন্যতম। এ ঘটনা সারা দেশের মানুষের কাছে হেফাজতের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হেফাজতের মধ্যে যারা সত্যিকার আলেমওলামা তারা হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন অথবা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে হেফাজত নেতাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা হেফাজতের কথায় সবকিছু করতে আগের মতো আগ্রহী নয়। এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে যখন সুনির্দিষ্ট অপরাধে হেফাজতের পরিচয়ধারী দুর্বৃত্তদের ধরা হচ্ছে তখন কোনো প্রতিবাদ নেই কোথাও। হেফাজতের মধ্যে প্রতারক, মতলববাজ মিথ্যাবাদীরা যে ভালোমতো জায়গা দখল করছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল হেফাজতের নেতাদের গ্রেফতারের পর। অতীতের মিছিল ফটোশপে এডিট করে, সমাবেশের ছবি কাট অ্যান্ড পেস্ট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে হেফাজতের নেতাদের মুক্তি দাবি করে নাকি মিছিল হচ্ছে। কোথায়? এগুলো হেফাজতের অসহায়ত্বের উন্মোচন করছে। সাধারণ মানুষ সব বোঝে এবং জানে। তাই মানুষ এসব দেখে হেফাজতকে নিয়ে কৌতুক এবং করুণা দুই-ই অনুভব করছে। যে হেফাজত কদিন আগেও ‘দুর্বার আন্দোলন’ করে সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিল, তারাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এটা অসহায় আত্মসমর্পণ। হেফাজত এখন লেজ গুটিয়ে পালানোর পথ খুঁজছে। হেফাজতের হুঙ্কার এখন অসহায় আকুতিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

হেফাজতের তান্ডবের পর যারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হটানোর স্বপ্ন দেখছিলেন তাদের আশা ভঙ্গ হলো। দলহীন নেতারা দাঁত-মুখ চিবিয়ে যেভাবে সরকারকে বিদায় করে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তাদের হৃদয় বেদনাসিক্ত হলো। তবে হেফাজতের এ পরিণতি আন্দোলনে আগ্রহী ডান, বাম, হঠকারী সব দলের জন্যই একটি বড় শিক্ষা। আন্দোলন করতে হয় জনগণকে নিয়ে, জনগণকে উদ্দীপ্ত করে। যেটি বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন। দূরদেশে বসে কলকাঠি নেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডব করা যায় সরকার পতন করা যায় না। ষড়যন্ত্র করে অস্থিরতা করা যায় কিন্তু জনগণের আস্থা অর্জন করা যায় না। হেফাজতের অসহায় আত্মসমর্পণ আমাদের আবার বঙ্গবন্ধুর মুখোমুখি দাঁড় করায়। ‘আন্দোলন গাছের ফল নয়’।

 

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

ইমেইল : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর