বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

লোক দেখানো কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়

মুহাম্মদ আশরাফ আলী

ইসলামে লোক দেখানো ভালো কাজকে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। লোক দেখানো কাজে আত্মগরিমার প্রকাশ ঘটে। এমনকি ইবাদতের ক্ষেত্রে তা যাতে লোক দেখানো না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সোজা কথায় সব ধরনের ইবাদতের উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। লোকে আমাকে ইমানদার ভাববে, সেজন্য সম্মান দেবে এজন্য ইবাদত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। হজরত আবু হুয়ায়রা (রা.) বর্ণনা করেন : রসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আগে যাদের বিচার-ফয়সালা করা হবে, তাদের মধ্যে প্রথম জন যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ-প্রদত্ত সমুদয় নিয়ামতরাজির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে, সে সব নিয়ামতের প্রাপ্তি স্বীকার করবে। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হবে- এসব নিয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে তুমি (আল্লাহর) কী ইবাদত করেছ? জবাবে সে বলবে, আমি তোমার দীনের জন্য যুদ্ধ করে শাহাদাতবরণ করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। প্রকৃতপক্ষে মানুষের কাছে তুমি বীর (মুজাহিদ) হিসেবে পরিচিত হওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছিলে। মানুষ তো (এখন) তোমাকে বীর (সাহসী) বলছে। অবশেষে তাকে আল্লাহর নির্দেশে দোজখে ফেলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়জন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রভূত অর্থসম্পদের অধিকারী হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতরাজির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে সে প্রাপ্তি স্বীকার করবে। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি এ বিত্তবৈভব কোথায় ব্যয় করেছ? সে জবাব দেবে, হে আল্লাহ! আমি তোমার দীনের রাস্তায় যেখানেই যখন প্রয়োজন হয়েছে সেখানেই তোমার (দেওয়া) সম্পদ খরচ করতে কার্পণ্য করিনি। আল্লাহ বলবেন, তুমি (সত্য নয়) মিথ্য বলছ। আমার রাস্তায় নয়, বরং মানুষ যাতে তোমায় দানবীর হিসেবে প্রশংসা করে সেজন্য অর্থ ব্যয় করেছ, মানুষ তো এখন তা-ই বলছে। অবশেষে তাকেও দোজখে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে।

তৃতীয়জন পার্থিব জীবনে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অন্যকেও শিক্ষা দিত এবং পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করত। অনন্তর তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়ামতরাজির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে সে তার প্রাপ্তি স্বীকার করবে। তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, তুমি (তোমার) জ্ঞান দিয়ে কী করেছ? সে উত্তর দেবে, আমি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তা অন্যের কাছে বিতরণ করেছি এবং তোমাকে খুশি করার জন্য (নৈকট্য লাভের আশায়) তোমার বাণী কোরআন চর্চা (অধ্যয়ন) করেছি। আল্লাহ বলবেন, না, তুমি মিথ্যা বলছ। আমাকে খুশি করার জন্য নয়, বরং মানুষ যেন তোমায় (ভালো) কারি বলে বাহবা দেয় সে আশায় তুমি কোরআন অধ্যয়ন করেছ। অবশেষে তাকেও দোজখে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে। (মুসলিম)

ওপরের হাদিসটি প্রমাণ করে আল্লাহর ইবাদত করার ক্ষেত্রে স্রষ্টার সন্তুষ্টি ছাড়া ভিন্ন কোনো চিন্তাভাবনার অবকাশ থাকলে তা কোনো কাজে আসবে না। এ ধরনের ইবাদত জান্নাতের বদলে জাহান্নামের পথই উন্মোচিত করবে। আল্লাহ আমাদের সব ধরনের বিচ্যুতি থেকে দূরে থাকার এবং সব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর