বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে

মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

আত্মার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। এটি রক্তের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেমন হতে পারে, তেমন বৈবাহিক সম্পর্কের কারণেও হতে পারে। ইসলামে আত্মীয়তা বিশেষত রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘হে মানব জাতি! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাক। এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের সব কর্মকান্ড সূক্ষ্মভাবে প্রত্যক্ষ করছেন’ (সুরা নিসা-০১)। পবিত্র কোরআনের আরও কিছু আয়াতে আত্মীয়তার বিষয়টি আলোকপাত করা হয়েছে। ‘আল্লাহ ন্যায়নীতি, পরোপকার ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার হুকুম দেন এবং অশ্লীলতা ও দুষ্কৃতি এবং অত্যাচার-বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা লাভ করতে পার।’ (সুরা নাহল-৯০)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘কাজেই (হে মুমিন!) তোমরা আত্মীয়দের তাদের অধিকার দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকে (দাও তাদের অধিকার)। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অম্বেষণ করে তাদের জন্য এটা উত্তম এবং তারাই সফলকাম হবে।’ (সুরা রুম-৩৮)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসেও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজের রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি হওয়া পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বোখারি ও মুসলিম)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ইমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ইমান রাখে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের জীবনে বিশ্বাসী সে যেন ভালো কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে। (বোখারি ও মুসলিম)। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে জাহান্নাম থেকে দূরে থাকা যাবে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাহাবি আবু আইউব খালেদ (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে অবহিত করুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর ইবাদত করতে থাক, তার সঙ্গে কোনো কিছুর শরিক কর না। নামাজ কায়েম কর, জাকাত আদায় কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ (বোখারি ও মুসলিম)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (বোখারি ও মুসলিম)। আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা অন্যায়ের শামিল। সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রবণতাও ইসলামের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর