ধর্ষণ একটি সামাজিক অভিশাপ।
শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও নীতি নৈতিকতা অবক্ষয়ের অন্যতম হীন অপকর্মের নাম ধর্ষণ। এ অপকর্ম বর্তমান সমাজের সর্বস্তরে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। শিশু ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, কারাগারে ধর্ষণ, হেফাজতকালীন ধর্ষণ ইত্যাদি আজ নিত্যদিনের খবর। বাংলাদেশে বর্তমানে ধর্ষণের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার হার দিনদিন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নারীদের নিরাপত্তা দিনদিন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ধর্ষণের পর এ দেশে উৎসব উদযাপন করা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্ষণের সেঞ্চুরি প্রকাশ করা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত কোনো জায়গা এ পাশবিকতা থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত নয় শিশু, কিশোরী, বিধবা কোনো বয়সের নারী এ নির্যাতনের কবল থেকে। ইসলাম ধর্ষণের কঠোর শাস্তি বেঁধে দিয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ধর্ষণের যাবতীয় উৎস ও উপায়-উপকরণ। হারাম করে দিয়েছে ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত যাবতীয় মাধ্যম। মহান প্রভু ঘোষণা করেছেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা মন্দ কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল-৩২)। উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা ব্যভিচারের কাছেও যেতে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ হলো, যেসব উপায় উপকরণ এবং যে পরিবেশ-পরিস্থিতি ব্যভিচারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, ওইসব কাজ বর্জন করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। অতএব ইসলামের আলোকে ব্যভিচার নিষিদ্ধ এবং হারাম। আর যেসব কাজ ব্যভিচারের প্রতি উদ্বুদ্ধ ও আকৃষ্ট করে ওইসব কাজও ইসলামের বিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ এবং হারাম। মূলত ব্যভিচারকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার লক্ষ্যে ব্যভিচারের প্রতি আকৃষ্ট করে এমন সবকিছু ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। বর্তমান সমাজে এ ধরনের উপায়-উপকরণ দিনদিন বিস্তার লাভ করছে। তাই ব্যভিচার বন্ধ করার সব ধরনের প্রচেষ্টা বিফল হচ্ছে। চলমান বিশ্বে যৌনাচার একটা পেশায় পরিণত হতে যাচ্ছে, পতিতালয়কে কথিক কর্মস্থলে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে, কেউ আবার যৌনাচারকে শ্রমের মর্যাদা দেওয়ার ঘৃণ্য মানসিকতায় মেতে উঠেছে। এসব জঘন্য কার্যক্রম ব্যভিচারকে আরও প্রলোভিত করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্ষণের হার বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে আইনের ফাঁকফোকর, আইন প্রয়োগে অবহেলা, রাজনৈতিক ও সামাজিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ধর্ষণের হার কমাতে হলে নারী-পুরুষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বদলাতে হবে চলমান দৃষ্টিভঙ্গি। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক পরিবেশে নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি কেমন সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, কীভাবে আচরণ করতে হবে, তা ছোটবেলা থেকে শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষা দিতে হবে পরস্পরের প্রতি নীতি-নৈতিকতার আদর্শ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনদের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। মুমিন নারীদের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত কারোর কাছে তাদের আবরণ প্রকাশ না করে।’ (সুরা নুর-৩০)।
কোরআন হাদিসের আলোকে মানুষের যৌন চাহিদা পূরণের একমাত্র উপায় নারী-পুরুষের বিবাহভিত্তিক সম্পর্ক। ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও পবিত্র প্রথা, সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। যেখানে যৌনতা, ভালোবাসা, প্রশান্তি এবং পরিবার ও সমাজ গঠনের বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান লাভ হয়। বিবাহ মানুষকে ব্যভিচার, অনৈতিক সম্পর্ক এবং সামাজিক অস্থিরতা থেকে রক্ষা করে। তাই ইসলাম বিবাহ পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে যৌন চাহিদা পূরণের সমর্থন করে না। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, মুমিনের এটি পরিচয় হলো, ‘যারা তাদের নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত।’ (সুরা মুমিনুন : ৫-৬)। অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে যুগল সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আর রুম-২১)। পক্ষান্তরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে রয়েছে বহুমুখী ক্ষতির সম্ভাবনা। রয়েছে পারিবারিক কলহ, সামাজিক অস্থিরতা, মানসিক চাপ, প্রাণঘাতী ব্যাধি, নারী নির্যাতন ও ব্যভিচারের ছড়াছড়ি। অতএব যৌনকর্ম ও বিবাহবহির্ভূত কোনো পদ্ধতি দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের কাছে ও বিবেকসম্পন্ন সমাজে স্থান পেতে পারে না।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা