কয়েক বছর আগের কথা। শীতের আগমনীতে শুরু হতো বিভিন্ন কনসার্টের হিড়িক। শহর মেতে উঠত উৎসবে। দিনব্যাপী চলত। সন্ধ্যার পর পর সমাপ্তি টানতে হতো। তবে সেই চিত্রটার পরিবর্তন ঘটেছে গত ৫ বছর হলো। শহুরে উৎসবমুখর মানুষের অভিজ্ঞতাতে এসেছে পরিবর্তন। রাতভর নির্ঘুম থেকে সংগীতপিপাসুরা দল বেঁধে এখন উপভোগ করছে সংগীতসুধা। দেশ-বিদেশের গুণী সঙ্গীতজ্ঞ ও নৃত্য দলগুলোর অংশগ্রহণে পর্দা নামল উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় সংগীত উৎসবের। বেঙ্গল আয়োজিত পাঁচদিনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে প্রদীপের আলোকচ্ছটায় আর্মি স্টেডিয়ামে অভিবাদন জানানো হয় দর্শকদের। প্রথম দিনে ছিল শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় দলীয় নৃত্য, গোদখিণ্ডি ও রাতিশ টাগডের বাঁশি ও বেহালার যুগলবন্দী, বিদুষী গিরিজা দেবীর খেয়াল পরিবেশনা, প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ওস্তাদ আশিষ খানের সরোদ, বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ডে ও পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ংকর এবং ড. এল সুব্রামিয়ামের বেহালা পরিবেশনা। উৎসবের পরবর্তী দুই দিনে একে একে মঞ্চ আলোকিত করেন বিদুষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগাল, প্রিয়াঙ্কা গোপ, রাহুল শর্মা, পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত উল্লাস কশলকার, বাঁশি ও ম্যান্ডোলিনের জাদুতে পণ্ডিত রনু মজুমদার ও ইউ. রাজেশ, শশাঙ্ক সুব্রামিয়াম, ড. প্রভা আত্রে, পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্ট্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার, পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ওস্তাদ রাশিদ খান। মুনমুন আহমেদ ও তার দল দলীয় কত্থক নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসবের চতুর্থ দিনের আয়োজন শুরু হয়। পরবর্তী পরিবেশনায় ছিলেন নীলেশ রণদেব, জয়তীর্থ মেউন্ডি, পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কর্নাটকি যুগলবন্দীতে রঞ্জনী ও গায়ত্রী, পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ
মজুমদার এবং পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। শেষ দিনের আয়োজনে ছিলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, পণ্ডিত কুশল দাস, আরতী আঙ্কালিকর। রাতের গভীরতার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল মানুষ। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হওয়ার ব্যাকুলতা যখন তুঙ্গে, তখন মঞ্চে আসেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। অপেক্ষমাণ দর্শক-শ্রোতার করতালির মধ্য দিয়ে বাঁশিতে ফুঁ দেন এই কিংবদন্তি। হাজারো দর্শক মুহূর্তেই বুঁদ হয়ে যান সুরের মায়ায়। সুরের মাধুর্যে এ বছরের মতো পর্দা নামে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের। বর্ণাঢ্য এই পাঁচ দিনের উৎসবের মুহূর্তগুলো সাজিয়েছেন— পান্থ আফজাল