রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের মুভি মোগল এ কে এম জাহাঙ্গীর খান

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঢাকাই চলচ্চিত্রের মুভি মোগল এ কে এম জাহাঙ্গীর খান

এ কে এম জাহাঙ্গীর খান, যিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ‘মুভি মোগল’ নামে পরিচিত। এক সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের অন্যতম দাপুটে প্রযোজক ও খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার এ কে এম জাহাঙ্গীর খান নিজের ব্যবসার রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন বারবার। তার প্রযোজিত ছবির মধ্যে নয়নমণি, শুভদা, কি যে করি, সওদাগর, চন্দ্রনাথ, সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে, আলিঙ্গন, তুফান, রঙিন রূপবানসহ আরও অসংখ্য নাম উল্লেখযোগ্য। এ মুভি মোগল প্রযোজিত সিনেমা টানা ২৫ সপ্তাহ, ৮১ সপ্তাহ এমনকি ১০৩ সপ্তাহ ধরে প্রদর্শিত হয়েছে। অর্থাৎ রজতজয়ন্তী, সুবর্ণজয়ন্তী, হীরকজয়ন্তী ছুঁয়ে সগৌরবে চলেছে। বাংলাদেশে প্রথম যে ছবিটি টানা ১০৩ সপ্তাহ চলার রেকর্ড গড়েছিল সেটি হলো আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’। ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ছবিটি এক কোটি টাকার ব্যবসা করে। আর এ ছবির প্রযোজক হলেন জাহাঙ্গীর খান। ১৯৮৬ সালে তার প্রযোজিত ও চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শুভদা’ ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ১৩টি সম্মাননা অর্জন করে অনন্য রেকর্ড গড়ে। চলচ্চিত্র জগতে এমনই যখন তার আকাশছোঁয়া অবস্থান তখন ‘চিত্রালী’ পত্রিকার সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী তাকে ‘মুভি মোগল’ খেতাবে ভূষিত করেন। আর এ মুভি মোগলকে চলচ্চিত্রের সম্রাট আখ্যা দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত করেন সিনে বোদ্ধারা। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘আলমগীর পিকচার্স’। ১৯৭৬ সালে প্রথম তিনি প্রযোজনা করেন নয়নমণি ছবিটি। এর আগে ১৯৭৩ সালে তার প্রথম পরিবেশিত ছবি ছিল ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’। প্রায় ৪৩টি ছবির প্রযোজক ও পরিবেশক তিনি।

চলচ্চিত্রের এ সফল মানুষটির জন্ম ১৯৩৯ সালের ২১ এপ্রিল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম চিওড়া কাজীবাড়ি মাতুলালয়ে। পুরো নাম আবুল খায়ের মো. জাহাঙ্গীর খান। শৈশবে বেশ দুরন্ত স্বভাবের জাহাঙ্গীর খান মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে সিনেমা দেখা শুরু করেন। সিনেমা দেখা তার কাছে একটি আদর্শের বিষয় মনে হতো। কানন দেবীর ছবির ভক্ত ছিলেন তিনি। শরৎচন্দ্রের মেজদিদির চলচ্চিত্রায়ণ দেখে সিনেমার প্রতি অনুপ্রাণিত হন। সত্যজিৎ রায়ের ছবি তাকে চলচ্চিত্র জগতে আসতে উৎসাহিত করে।

১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পাস, ১৯৬০ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি ও ১৯৬২ সালে বিএসসি পাস করেন। ১৯৬৩ সালে জাপানে ফুজি কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে যোগ দেন।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর নির্মাতা আবদুল জব্বার খানের দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি হৃদয়ের টান জাহাঙ্গীর খানকে মুগ্ধ করেছিল বলেই চলচ্চিত্রে নিজেকে যুক্ত করাটা তার পক্ষে সহজ হয়েছিল বলে জানান তিনি। কর্মজীবনে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। খ্যাতিমান সাংবাদিক প্রায়ত গোলাম সারওয়ার ছিলেন তার অন্যতম ঘনিষ্ঠজন। এ সাংবাদিককে স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গোলাম সারওয়ার ছিলেন একজন নির্ভিক সাংবাদিক। যার লেখনি শক্তি আমাদের জাতীয় জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। আমাদের দুটি পরিবার একই সূত্রে গাঁথা।’

জাহাঙ্গীর খানের সর্বশেষ নির্মাণ ছিল ১৯৯৮ সালে তার প্রযোজিত ‘রঙিন নয়নমণি’ ছবিটি। বর্তমানে নির্মাণ থেকে দূরে থাকলেও চলচ্চিত্র জগতে পদচারণা থেমে থাকেনি কিংবদন্তি এ মুভি মোগলের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর