রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আলোর মুখ দেখছে না যেসব ছবি!

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এফডিসির অনুমোদন পাওয়া এমন ছবি রয়েছে ৪১টি। এসব ছবির সেন্সর হয়েছে ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। এসব ছবির নির্মাতার কাছে এফডিসির বকেয়া পাওনার পরিমাণ ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৭০ টাকা।

আলাউদ্দীন মাজিদ

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও আলোর মুখ দেখছে না প্রায় চার ডজন ছবি। এসব ছবির সেন্সরও হয়ে গেছে। তারপরও কেন ছবিগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে- এমন প্রশ্নে এফডিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এসব ছবির নির্মাতারা এফডিসির বিল সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় ছবিগুলোর ম্যারিট নষ্ট হয়ে গেছে। যেমন ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এফডিসির অনুমোদন পাওয়া এমন ছবি রয়েছে ৪১টি। এসব ছবির সেন্সর হয়েছে ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। এসব ছবির নির্মাতার কাছে এফডিসির বকেয়া পাওনার পরিমাণ ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৭০ টাকা। এই কর্মকর্তা বলেন, এসব ছবির নির্মাতাদের বেশির ভাগকে এফডিসিতে তাদের নিবন্ধনকৃত ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বারবার বকেয়া পরিশোধের চিঠি পাঠালেও উল্লিখিত ঠিকানায় তাদের না পাওয়ায় চিঠি ফেরত এসেছে। চলচ্চিত্রকারদের কথায়, দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় এ ছবিগুলো এখন আর দর্শক গ্রহণ করবে না। ফলে এসব ছবির মুক্তি অনিশ্চিতই বলা যায়। মানে আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণই বলা যায়। এফডিসিতে এমন একটি ছবির তালিকায় যে নামগুলো রয়েছে তা হলো- নূরজাহানের প্রেম, সজল প্রিয়া, সাদ্দাম বাদশা, যেমন কর্ম তেমন ফল, দুই ওস্তাদ, প্রেমের প্রতিশোধ, রসিক নাইয়া, কেন আমি সন্ত্রাসী, কাফেলা, মা আমার দেশ, ডাকু কাদিরা, ছলনাময়ী নারী, মন যারে চায়, রাতের রানী মস্তানের রাজা, গন্ডগোল, এ লড়াই বাঁচার লড়াই, লড়াকু সন্তান, বিদ্রোহী নারী, জাঁদরেল পুলিশ, ধ্বংসলীলা, আখেরি আঘাত, পাচারকারী, অন্ধগলির মাস্তান, দুর্ধর্ষ রাজা, ভালোবাসার মানুষ, গর্জে ওঠো জনতা, মগজ ধোলাই, আদরের বই, বাংলার দুশমন, আদরের ভাই, ফাঁসির আদেশ, কালিগঙ্গা/চাঁন সরকার, ফাঁসি চাই, অপমানের জ্বালা, মায়ের আঘাত, কঠিন নারী, প্রতিবাদী সন্তান, অন্তরে প্রেমের আগুন, এ দেশ তোমার আমার, এই জীবনে আছো তুমি এবং তুমি আমার কে। এফডিসি সূত্রে জানা গেছে, এসব ছবির মধ্যে কেবল অমি বনি কথাচিত্রের ‘এ দেশ তোমার আমার’ এফডিসির বকেয়া পাওনা শোধ করেছে।

এদিকে গত ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৮টি সিনেমা সেন্সরে আটকা রয়েছে। এসব সিনেমা আটকে থাকার যথেষ্ট কারণ আছে বলে জানালেন সেন্সর বোর্ডের চলচ্চিত্র পরিদর্শক আবদুল মালেক। তিনি বলেন, কোনো সিনেমা সেন্সরে জমা দেওয়ার পর যদি আপিল কমিটি কর্তৃক চলচ্চিত্রটি পুনর্গঠন করার নির্দেশনা থাকে তাহলে সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ থাকে। কারণ এসব সিনেমায় ‘কারেকশন’ বা কিছু সংলাপ বা দৃশ্য বাদ দিয়ে পুনরায় জমা দিলে বেশির ভাগ সময়ই সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে সাজ্জাদুর রহমান (বাদল) পরিচালিত ‘বাংলার ফাটাকেস্ট’, জাহিদ হোসেনের ‘লীলা মন্থন’, আরাফাতুর রহমানের ‘বিবর্তন’, আহসানউল্লাহ মনির ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসি’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’, মাহমুদ নিয়াজ চন্দ্রদীপের ‘ধাবমান’ এবং ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড : ব্লাড ওয়ারস’ ও ‘সুইস আর্মি ম্যান’ নামের ইংরেজি সিনেমা এখনো সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পায়নি। এসব সিনেমা ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে চলচ্চিত্র পরিদর্শক আবদুল মালেক আরও বলেন, সেন্সরের কোড বা নিয়ম না মানার কারণে সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। যেমন ‘লীলা মন্থন’ সিনেমাটি নিয়ে কেবিনেটের সিদ্ধান্ত ছিল যে নামটি পরিবর্তন করে উপযুক্ত নামকরণ করা। সিনেমার নাম নিয়ে আপত্তি ছিল। পাশাপাশি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে ছবিটির মতামত নিতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে সিনেমার প্রযোজককে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসি’ ছবির গল্পটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাংলার সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে করা। সিনেমায় ক্ষুদিরামকে যথাযথভাবে উপস্থাপন না করার কারণে ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র এখনো পায়নি। এদিকে ‘লীলা মন্থন’ সিনেমার প্রযোজক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, নাম পরিবর্তন ও পুনর্গঠন করে খুব শিগগিরই আবার জমা  দেব ছবিটি। সামনে এটি সেন্সর ছাড়পত্র পাবে বলে আশা করছি। এ ছবিতে প্রয়াত নায়ক মান্না ছাড়াও মৌসুমী, পপি, শাহনূর, বাপ্পারাজসহ অনেক তারকা অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসি’ ছবিটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেন্সর ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে সাত মাস আগে রাজমণি ফিল্ম প্রোডাকশনের ইউটিউব চ্যানেলে এ সিনেমার কয়েক মিনিট ব্যাপ্তির বেশ কয়েকটি দৃশ্য আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে এই দৃশ্যগুলো কয়েক লাখ দর্শক দেখেছে। উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ শেষে মুক্তির অনুমতির জন্য সেন্সর বোর্ডে প্রদর্শন করা হয়। সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন বিবেচনার জন্য সরকার কর্তৃক গঠিত বেশ কয়েকজন সদস্যবিশিষ্ট একটি ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি রয়েছে।

এই আপিল কমিটির সিদ্ধান্তে চলচ্চিত্রটি বিনা কর্তনে বা কর্তন/সংশোধন সাপেক্ষে প্রদর্শন উপযোগী বিবেচিত হলে সেন্সর সনদপত্র দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর