রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় ঈদের গানের বাজার

আলী আফতাব

অনিশ্চয়তায় ঈদের গানের বাজার

অন্য সবকিছুর মতো মহামারী করোনার প্রভাব পড়েছে সংগীতাঙ্গনেও। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে গত বছর থেকে শুরু করে চলতি বছরের এই সময় পর্যন্ত গানের অবস্থা ততটা ভালো যাচ্ছে না। মাঝ সময়ে করোনার প্রাদুর্ভাব খানিকটা কমে আসায় কিছুটা স্বস্তি এলেও ফের অস্বস্তিতে পড়ে সংগীতাঙ্গন। বন্ধ হয়ে যায় কনসার্টসহ নানা আয়োজন। নতুন উদ্যমে গান নিয়ে মঞ্চে ওঠার আগেই ঘরে  ফেরেন কনসার্ট শিল্পীরা। বাতিল হয়ে যায় শিল্পীদের সব কনসার্ট। ফের করোনার প্রভাবে অনিশ্চয়তায় পড়ে সংগীতাঙ্গন। বিশেষ করে বিপাকে পড়তে হয়েছে মিউজিশিয়ানদের। কনসার্ট না থাকায় জীবনের তাগিদে তাদের অনেকেই অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ কেউ শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন। ঈদ সামনে রেখে নতুন নতুন গানের পরিকল্পনা ছিল শিল্পীদের। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও হাল সময়ের জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে নতুন গান ও মিউজিক ভিডিও প্রকাশের আয়োজন করেছিল। কিন্তু সেগুলো অনেকটাই ভেস্তে গেছে। কঠোর বিধিনিষেধের ফলে রেকর্ডিং তেমন একটা করা যাবে না। তাছাড়া মিউজিক ভিডিওর শুটিংও করা যাবে না। শুধু তাই নয়, এই কঠোর বিধিনিষেধ করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও বাড়তেও পারে। তাই ঈদের আগে পরিস্থিতি আর ঠিক হবে কি না সেটা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এদিকে গত দুই ঈদে করোনার কারণে গান প্রকাশ করতে না পারায় অনেক সিনিয়র শিল্পীও চেয়েছিলেন এবার গান প্রকাশ করতে। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। তবে কনসার্ট বা স্টেজ শো বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত স্টুডিওগুলোতে চলছে নতুন কিছু গানের কাজ। ঘরে বসে গীতিকাররা যেমন গান লিখছেন, তেমনই সুরকাররা নতুন গানে সুর তুলছেন। শিল্পীরাও কণ্ঠে গান তুলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন এখন মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। মন-মানসিকতাও ভালো নেই। এই সময়ে মানুষ নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণেই হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বিনোদন কিংবা গান শোনা ও দেখার মানুষের সংখ্যা খুবই কম।

এ প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘মানুষ মৌলিক চাহিদা আগে মেটাবে সেটাই স্বাভাবিক। সেটা মেটাতেই অনেকে হিমশিম খাচ্ছে। সে কারণে এই সময়ে গান-বাজনা শোনার মন-মানসিকতা মানুষের মধ্যে তেমন একটা নেই। আর স্টেজ শো বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক শিল্পী-মিউজিশিয়ান খারাপ অবস্থায় আছেন। প্রার্থনা করছি যেন করোনা পরিস্থিতি দূর হয়ে সব স্বাভাবিক হয়।’ সংগীত তারকা আসিফ আকবর বলেন, ‘এখন গানের বাজার খারাপ। গানের সংখ্যা আগের থেকে কমেছে। তবে গান হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, সামনে ভালো সময় আসবে।’

এ প্রসঙ্গে ব্যান্ড তারকা হাসান বলেন, ‘অনেক শিল্পী, মিউজিশিয়ান ও সংগীত সংশ্লিষ্টের অবস্থা এখন ভালো নেই। কারণ কাজ নেই কারও। এমন অবস্থায় সরকারি সহায়তা সংগীতাঙ্গনের জন্য খুবই দরকার। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সরকার অন্যান্য সেক্টরের জন্য যেমন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, নিশ্চয়ই সংগীতাঙ্গনের জন্যও করবে। এই খারাপ পরিস্থিতি সবসময় থাকবে না। তবে এই কঠিন সময়ে সহযোগিতা খুব দরকার।’

এ নিয়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘সবকিছুই থমকে আছে। কারও কোনো কাজ নেই এখন। জীবন রক্ষাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অনেক শিল্পী ও মিউজিশিয়ান খারাপ অবস্থায় দিনযাপন করছেন। তারা এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতির জন্য কাজ করছেন। অন্তত তাদের দিকে যেন সরকার নজর দেয় সেটাই চাওয়া।’

এ নিয়ে এই সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ইমরান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সব বন্ধ হয়ে আছে। এই সময়টা ধৈর্য নিয়ে পার করতে হবে। আমি মনে করি আল্লাহর রহমতে এ অবস্থা থাকবে না। তবে এ পরিস্থিতিতে যেন আমরা গানের মানুষেরাই একে অপরের খোঁজ নিই। একে অপরের পাশে যেন দাঁড়াই। শো, গান প্রকাশসহ সব স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। আমার মনে হয় এই পুরো বছরই লেগে যাবে। তাই অপেক্ষা করতে হবে।

করোনার এ অবস্থায় শিল্পীদের মতো বিপাকে পড়েছে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে গান প্রকাশের চেয়ে নাটক প্রকাশে বেশি মনোযোগী। করোনার এ সময়ে স্টেজ শো বন্ধ থাকলেও থেমে ছিল না নাটকের শুটিং। আর তাই অধিক মুনাফার আশাই গান প্রচার  থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো।  

সর্বশেষ খবর