সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
নাট্যব্যক্তিত্বদের চোখে

কেন হারিয়ে যাচ্ছেন নতুন অভিনয়শিল্পীরা

কেন হারিয়ে যাচ্ছেন নতুন অভিনয়শিল্পীরা

কিছুদিন আগেও যেসব নবীন তারকাশিল্পী টেলিভিশনে একচেটিয়া অভিনয়, মডেলিং, উপস্থাপনা বা ফটোশুট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন, তারা এখন তেমন ব্যস্ত নেই। খামখেয়ালিপনা, হুটহাট শিডিউল ফাঁসানো, নেশায় আসক্ত হওয়া, ইচ্ছামতো শুটিংয়ে যাওয়া, প্রেম-ভালোবাসা ও বিয়েসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে তারা হারিয়ে যাচ্ছেন। তাদের রয়েছে পেশাদারিত্বের ঘাটতি, দায়িত্বহীনতাসহ নানা সমস্যা। ফলে তারা ঝরে পড়ছেন।  এ নিয়ে নাট্যব্যক্তিত্বদের  সঙ্গে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

দিলারা জামান

এখন তো তাড়াহুড়ো করে একগাদা নাটক নির্মিত হচ্ছে। অভিনয় না শিখে আসা কিছু শিল্পীকে নাটকে যুক্ত করা হচ্ছে। তারা কীভাবে দর্শক নজর কাড়বে? তারা তো একসময় ঝরে পড়বেই। ভালো কনটেন্ট নেই। একই রকম রোমান্টিক গল্প। নতুনদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে দায়সারাভাবে। ফলে ভালো নাটক দর্শক দেখতে পারছেন না। জনপ্রিয়তা ভিউ দিয়ে কাউন্ট হয়!

 

আবুল হায়াত

এখনকার নাটক দুই-তিনজন শিল্পীনির্ভর। বলতে গেলে তো অনেক ক্ষোভের কথা বলতে হয়! সেদিনকার ছেলেমেয়ে এসেই ৪-৫ গুণ বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। নেবে সমস্যা নেই, তবে একটা ভারসাম্য থাকা উচিত। আর তাদের অভিনয় দক্ষতার বড়ই অভাব! ফলে একসময় তারা হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নতুনরা তাদের মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে না। মানহীন নাটক দিয়ে দর্শক নজরকাড়া যায়?

 

আফরোজা বানু

বিটিভিতে যখন কাজ করতাম, তখন একটা সিস্টেমের মধ্যে ছিলাম। এখন তো ওপেন মার্কেট! ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর কাজ পাওয়া নির্ভর করে। তবে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। ‘পুরো সিস্টেমটাই এখন ভেঙে পড়েছে’। ক্ষেত্রই ঠিক নেই। নতুনদের অনেক মেধা আছে। তারা যেমনিভাবে রাতারাতি তারকা বনে যাচ্ছেন, আবার নিজেদের খামখেয়ালিপনার কারণে একসময় হারিয়ে যাচ্ছেন।

 

আমিরুল হক চৌধুরী

অতিরিক্ত নাটক নির্মাণ, নাটকের বাজেট হ্রাসসহ একাধিক কারণে নির্মাণ আর অভিনয়, দুইয়েরই মান কমেছে। নাটক আর অভিনয়ে গভীরতা কমে গেছে। নাটক হয়ে গেছে শুধুই কমেডি ও প্রেমকেন্দ্রিক। নতুনদের মেধা আছে, কিন্তু কাজে লাগানোর মতো সুযোগ কি তাদের দিতে পারছে ইন্ডাস্ট্রি?

জাহিদ হাসান

দোষ আমাদের সবার আছে। নতুন একটা ছেলে কিংবা মেয়ে একদিন না যেতেই বলে দেয়, ‘ভাইয়া আমি এত ছাড়া নেই না!’ অথচ অভিনয়টাই ঠিকঠাক করতে পারছে না। স্ক্রিপ্ট পাঠালে সেটে স্ক্রিপ্ট নিয়ে আসে না। কন্টিনিটি ভুলে আসে। এটা আমাদের তরফ থেকে সমস্যা। এভাবে নাটক এগোবে কী করে? অভিনয় না জেনে হঠাৎ করে তারকা হয়ে যায় অনেকেই; এটা ক্ষণস্থায়ী। একসময় পেশাদারিত্বের অভাবে এই অঙ্গন থেকে হারিয়ে যায় তারা।

 

তৌকীর আহমেদ

ভিউয়ের পেছনে ছুটতে গিয়ে নাটকের মানের দিকে কেউ খেয়াল করছে না। শিল্পীদের রয়েছে প্রস্তুতির অভাব। এটা অবশ্য ইন্ডাস্ট্রির দোষ। তারা মেধাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছে না, সুযোগ করে দিচ্ছে না। ইন্ডাস্ট্রি লাভের পেছনে দৌড়াচ্ছে।

 

মোশাররফ করিম

একজন শিল্পীকে কোনো না কোনো জায়গা থেকে গ্রুমিং করে এসে অভিনয় করা দরকার। এ জন্য মঞ্চ তার জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা। কিন্তু যেসব নতুন শিল্পী কয়েক দিন মিডিয়াতে কাজ করেই নিজেকে তারকা ভাবছেন, তারা কি তাদের নিজস্ব অভিনয়দক্ষতা দিয়ে দর্শক তৈরি করতে পারছেন? রাতারাতি তারকা হওয়া অভিনয়শিল্পীরা আবার রাতারাতিই হারিয়ে যাচ্ছেন। একজন মানুষ যদি মনে করেন তার পাশে ক্যামেরা-লাইট নেই। তিনি যেভাবে কথা বলেন, ঠিক সেভাবেই অভিনয় করেন। তাহলে কিন্তু দর্শক তাকে পছন্দ করেন। অন্যদিকে একই ধরনের দু-তিনটা কাজ করলে দর্শক তাকে প্রশংসা করতে থাকেন। সেই অভিনয় দেখে আবার অনেক নির্মাতা তার নতুন গল্পের নতুন একটি চরিত্রে নিয়ে নেন তাকে। তখন দেখা যায় তিনি ভালো অভিনয় করতে পারছেন না। কারণটা হলো, তিনি আসলে নিজে যেটা পারেন, তার বাইরে অন্য কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন না। যে কারণে তিনি একই চরিত্রে অভিনয় করেন; না হলে হারিয়ে যান।

 

চঞ্চল চৌধুরী

এখন নতুন যারা অভিনয় করতে আসছেন তাদের লক্ষ্যটা স্থির নয়। তারা আসলে কী হতে চান? এ নিয়ে দোটানায় তারা। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা তারকা হতে চান। কিন্তু তারকা হওয়ার জন্য অভিনয় দক্ষতা বা পর্দায় নিজেকে তুলে ধরা, সে বিষয়ে আর সেভাবে তারা মনোযোগ দিতে পারছেন না। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন কাজটা ছিল প্রথম অগ্রাধিকার। এরপর ভালো কিছু কাজ করার কারণে দর্শক আমাদের গ্রহণ করেছে। নতুন যারা অভিনয়ে আসছেন তাদের বেশির ভাগের কাজের প্রতি মনোযোগটা কম। কাজটা তারা শিখে আসছেন না। ফলে তারা স্থায়ী হচ্ছেন না। ক্ষণস্থায়ী গ্রুমিংয়ে নতুনরা অভিনয়ে নাম লেখাচ্ছেন। আবার এরাই নাটক-ছবির নায়িকা!

সর্বশেষ খবর