বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

স্বীকৃতি ও সম্মাননা কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দেয়

স্বীকৃতি ও সম্মাননা কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দেয়

১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনে পদ্মার পাড়ে অবস্থিত শেখ রাসেল সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয় ‘ঐক্য চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-২০২২’।  এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় সংগীতজ্ঞ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে। তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন?

জি, ভালো আছি।

 

আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তিতে

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার এ অর্জনে অভিনন্দন জানানোর জন্য। আমি খুবই আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ সবার কাছে।

 

এমন স্বীকৃতি সম্মাননা পেয়ে কেমন লাগছে?

এমন স্বীকৃতি পেয়ে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এমন স্বীকৃতি ও সম্মাননা সবসময়ই আনন্দদায়ক। প্রত্যেক শিল্পীই কাজের স্বীকৃতি পেতে চায়। আজকে আমাকে যে সম্মান দেওয়া হলো এতে সৃষ্টিকর্তা, আমার মা-বাবা, শ্রোতা, আমার ছাত্র-ছাত্রী সবার কাছেই কৃতজ্ঞ।

 

এর আগেও স্বাধীনতা পদক, ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ সংগীত পুরস্কারসহ ভারতের বঙ্গভূষণ উপাধিতেও ভূষিত হয়েছেন...

আমি মনে করি, স্বীকৃতি ও সম্মাননা কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দেয়। যখন এমন সম্মাননা পাই তখন ভাবী, আসলে আমি এর যোগ্য কি না! সেই যোগ্য যেন হয়ে উঠতে পারি সবসময় সেই প্রার্থনা করি। আপনারাও ভালোবাসায় আজীবন পাশে থাকবেন- সেটিই কাম্য।

 

আপনার হাতে গড়াসুরের ধারা কার্যক্রম  কেমন চলছে?

সুরের ধারা বৃহত্তর পরিসরে রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে কাজ করছে, যাতে লাখো বাঙালির অংশীদারিত্ব থাকে। আর বাঙালির জীবনে রবীন্দ্রনাথ যে একটি অনিবার্য সত্তা, তা কি অস্বীকার করার জো আছে? তাই মানুষের সৃষ্টিশীল মননকে সমৃদ্ধ করতে বৃহৎ পরিসরে সুরের ধারাকে বহন করা। সুখবর হচ্ছে, ‘সুরের ধারা’র জন্য এতদিন পর জমি পাওয়া গেছে। কাজও শুরু হয়ে গেছে।

 

আপনার সংগীত ক্যারিয়ারে শান্তিনিকেতনের অবদান কতখানি?

আমার তৈরি হওয়া, আমার মনন, বোধ তৈরিতে শান্তিনিকেতনের অবশ্যই একটা বড় ভূমিকা আছে। সবদিক থেকে সাংগীতিক যে বেড়ে ওঠা, সেটা তো বটেই, রবীন্দ্রনাথের দর্শন-সাহিত্য সবকিছুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচয়ের সূত্রপাত শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথের যে প্রকৃতি তার সঙ্গে পরিচয় এবং তার মধ্য দিয়ে আমার নিজের চিন্তাভাবনা গড়ে উঠেছিল শান্তিনিকেতনে। মোহর দি (গুরু কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) যতদিন বেঁচে ছিলেন সম্পর্কটা ঘনিষ্ঠ ছিল, নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল।

 

আর ছায়ানটের সঙ্গে সম্পর্ক...

ছায়ানটের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আত্মার। দীর্ঘকাল এই সংগঠনটির সঙ্গে আমার সম্পর্ক। ২০১১ সালে চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপন করতে গিয়ে সুরের ধারার জন্ম হয়। আমি মনে করি, ছায়ানট এবং সুরের ধারা রবীন্দ্রচর্চার ক্ষেত্রে পরস্পরের পরিপূরক।

 

তরুণ প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রচর্চা কতটুকু প্রভাব ফেলেছে?

রবীন্দ্রচর্চা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। যতদিন বাঙালি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন এই চর্চা অব্যাহত থাকবে।

 

দেশের সংস্কৃতিচর্চায় একটা বিচ্ছিন্নতা শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন?

এ কথা সত্য যে, এখনকার প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতিচর্চা মানুষের থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। দুটো কারণ রয়েছে, আগের মতো গ্রামের মানুষের সাংস্কৃতিকভাবে তৎপর থাকতে না পারা আর শহরের মানুষের জীবনে সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের প্রভাব। আকাশ সংস্কৃতির কারণে শহরে সংস্কৃতির বিশ্বায়ন ঘটেছে। সবার হাতে হাতে অনলাইনের বিচিত্র সম্ভার। নাগরিক মানুষের জীবনযাপন ও সংস্কৃতি এখন অনেকটাই বহির্মুখী। শহরে বাঙালি সংস্কৃতির সুর আর আগের তারে বাজে না। সবটা মিলিয়েই একটা বিচ্ছিন্নতা, একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

 

সরকারিভাবে আপনার সংগীতকর্ম, জীবনী, দুর্লভ ছবি, গানের অ্যালবাম সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে আপনার অভিমত কী?

আমি তো সেটা (ভার্চুয়ালি গান সংরক্ষণ) বুঝি না, আবার পারিও না। আজকালের ছেলেমেয়েরা যেভাবে প্রযুক্তি নিয়ে ধারণা রাখে, আমার সে রকম ধারণা নেই। বাংলাদেশ সরকার এই দায়িত্ব নেওয়ায় আমার জন্য ভালো হয়েছে। এই যুগে এসে এটা না পারলে পিছিয়ে যেতে হয়। আমাদের মতো পুরনো শিল্পীদের গান সংরক্ষণে এটা খুব ভালো উদ্যোগ।

সর্বশেষ খবর