শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : শাবনূর

অস্ট্রেলিয়ায় একাকী জীবনটা এনজয় করছি

অস্ট্রেলিয়ায় একাকী জীবনটা এনজয় করছি

ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর দীর্ঘদিন ধরেই অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাস জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি একটি ছেলের সঙ্গে নিজের ফেসবুক পেজে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন এই নায়িকা। এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রেম-বিয়ের খবর ঘটা করে চাউর হয়েছে।  এ নিয়ে শাবনূরের সঙ্গে মুঠোফোনে বলা কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

হ্যালো, কেমন আছেন?

জি, ভীষণ ভালো আছি।

 

সময় কীভাবে কাটছে?

আমার আদরের পুত্র আইজানকে নিয়ে সময়টা বেশ ভালো কেটে যাচ্ছে। ওর পড়াশোনার দেখাশোনা করছি। আর কৃষিকাজ, বাগান করা এসব তো সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ প্রচার হয়ে গেছে। বলতে পারেন সবমিলিয়ে দারুণ সময় কাটছে আমার।

 

কিছুদিন আগে আপনার ফেসবুক পেজে একটি ছেলের সঙ্গে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন, বিষয়টি  আসলে কী?

আরে তেমন কিছু নয়। দেখুন তো মানুষ কী চোখে দেখেনি যে, স্ট্যাটাসে আমি ফটোশুট লিখেছি। এটা কোনো কথা হলো, আমাকে একদম বিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছে।

 

তাহলে আসল বিষয়টি কী?

কিছুই না। এটি হচ্ছে একটি ফটোশুট করেছিলাম একটা সিনেমার জন্য। ডিরেক্টর বাদল খন্দকার বলেছিলেন আমার এই টাইপের একটা হিরো লাগবে। দেখ তো তোমার চোখে পড়ে কি না। পড়লে ওর সঙ্গে ফটোশুট করে পাবলিকলি দাও। পাবলিক যদি পছন্দ করে তাহলে তাকে হিরো বানাব। আমি আসলে সবসময় নতুন নায়ক প্রমোট করতে চাই। তাই এ ছেলেটার সঙ্গে ফটোশুট করে ফেসবুকে দিই। এর আগে সিয়ামের সঙ্গে একটা ছবি দিয়েছিলাম। ব্যস, এই তো আর কিছুই না। আর এটি নিয়েই আমাকে একেবারে বিয়েশাদি দিয়ে দিল। কান্ড দেখে হাসতে হাসতে আমি আর নেই।

 

সত্যি সত্যি বিয়ের পিঁড়িতে কখন বসছেন?

দেখুন, জীবন তো কারও জন্য থেমে থাকে না। জীবনটা যেভাবে চালাবেন সেভাবেই চলবে। বিয়ে করে যে আমাকে রাজা হতে হবে এমন কিছু নয়। বিয়ে করার দরকার ছিল করেছিলাম, বাচ্চার দরকার ছিল নিয়েছি। এখন আবার বিয়ে করে লাটে উঠে যাব তা কিন্তু নয়। বিয়ে করলে যে খুব ভালো এবং না করলে খুব খারাপ থাকব এমন তো নয়। বিয়ে না করেই বরং আমি স্বাধীন আছি। বিয়ে না করেই আমার ইচ্ছা ও স্বাধীনতা নিয়ে আমি চলতে পারছি। ব্যক্তিগত জীবনে আমি স্বাধীনতাকে খুব পছন্দ করি। আমি মনে করি আবার যদি বিয়ে করি তাহলে আবার একটি বাইন্ডিংসে জড়িয়ে যাব। দায়িত্ব-কর্তব্য পালন আর বাধার মুখে পড়তে হবে। এসব আর ভালো লাগে না আমার। আমি একটি স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ। আমি ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে বেড়াতে চাই। মুক্ত বিহঙ্গ যেমন ঘুরে উড়ে বেড়ায় আমিও তেমন চাই। একটা হাজব্যান্ড লাইফে থাকলেই কি না থাকলেই কি। কারণ আমি তো সেলফ ডিপেনডেন্ট। অনেকে বলে একা কীভাবে থাকবে। এটা ভুল ধারণা। দেখুন কত মানুষ সিংগেল লাইফ লিড করছে, কত সিংগেল মাদার রয়েছে এই অস্ট্রেলিয়ায়। তারা তো বেশ ভালোই আছে। আমিও একাকী ভালো থাকতে চাই। দেখুন, কোনো বাইন্ডিংস না থাকলে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়। সবার লাইফ পার্টনার তো আর ভালো হয় না। বাইচান্স খারাপ পড়ে গেলে জীবনের কী অবস্থা হবে বলুন তো। ধরুন একটা কিছু এচিভ করতে যাচ্ছি কিন্তু আমার হাজব্যান্ড তাতে বাধা দিয়ে বসল। বলল, ওখানে না গেলে কি নয়, কাজটা না করলে কি নয়। বলেন, এভাবে কি বাধার মুখে আর এগোনো যায়। আরেকজন জীবনে এসে আমার ওপর পোদ্দারি করুক এটি আমি আর মেনে নিতে পারব না। আমি বাস্তবতা মেনে নিয়েছি। একাকী আমি আমার জীবনটা এনজয় করছি। বাকি জীবনটা এভাবেই ভালো থাকতে চাই।

 

চলচ্চিত্র জগতে এখন শাকিব-অপু-বুবলীর গোপন প্রেম বিয়ে নিয়ে বেশ অস্থিরতা চলছে, এতে কী চলচ্চিত্র জগতের ক্ষতি হচ্ছে না?

শাকিব-অপুর ক্ষেত্রে বলব তাদের কেন মিল হলো না তারাই জানে। কারণ এটি তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে এতে চলচ্চিত্র জগতের কম বেশি ক্ষতি যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। আমার মনে হয় একটা আর্টিস্ট তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। কাজ করতে করতে একসময় ম্যাচিউরড পজিশনে যায়। বর্তমানে শাকিব আর অপু ম্যাচিউরড পজিশনে এসেছে কেবল। কিন্তু নেটিজনরা এদের নিয়ে এত বেশি কথা বলে এতে করে তাদের এগিয়ে যাওয়াটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন কাজের চেয়ে নোংরামি হচ্ছে বেশি। আর একটা কথা হলো, আমাদের আর্টিস্টদের এত বেশি দুর্নাম হওয়ার কারণ মিডিয়ায় তাদের ফোকাস বেশি। আর্টিস্টদের বাইরে সবাই সব করছে। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষ বলে তাদেরটা চোখে পড়ছে না। ধরুন আমি সোনারগাঁও হোটেলে গেলাম। ওখানে আমাকে সবাই চেনে। তাই আমি চাইলেও ওখানে কোনো খারাপ কাজ করলে মিডিয়াসহ সবার চোখে পড়বে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ যাকে কেউ চেনে না সে তো সেখানে গিয়ে যে কোনো অন্যায় কাজ করলে তাকে কেউ চেনে না বলে সেই খবর আর প্রকাশ হলো না। মিডিয়ায় ভালো-মন্দ দুই-ই আছে। তাই একজনের মন্দ কাজের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ভিউ আর আয় বাড়াতে সবার বিরুদ্ধে নেতিবাচক বানোয়াট খবর প্রচার করবে এটি কিন্তু ঠিক নয়। এদের মধ্যে মনুষ্যত্বের অভাব আছে।

সবার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু আছে। এমন গর্হিত কাজকে আমি খুবই খারাপ চোখে দেখি। যেমন যে ছেলেটার সঙ্গে ফেসবুক পেজে ছবি পোস্ট করেছি আমি বলিনি যে, আমি বিয়ে করেছি, আমি লিখেও দিয়েছি ফটোশুট। তাও কী মানুষ দেখেনি। আমাকে নিয়ে স্ক্যান্ডাল শুরু হয়ে গেল। ভিউ বাড়াতে নোংরামির একটা সীমা থাকা দরকার। মানুষ আসলে অনেক নিচে নেমে গেছে। এসব দেখে নিজের কাছে খুব অস্থির লাগে। মনে হয় নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা হারিয়ে ফেলেছি।

 

যা হোক, দেশে ফিরছেন কবে?

বাচ্চাটার স্কুল খোলা, পড়ালেখা আর পরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় আসতে পারছি না এখনই। কারণ আমার সব সেক্রিফাইস এখন শুধু আমার সন্তানের জন্য। ওর স্কুল ছুটি হোক তারপর অবশ্যই আসব।

 

জাজ মাল্টিমিডিয়ার একটি ছবিতে কাজের কথা ছিল, সেটির কী খবর?

জাজের একটি নয়, দুটি ছবিতে কাজের কথা রয়েছে। তাছাড়া আবুল কালাম আজাদ, ফিরোজ, বাদল খন্দকার, গাজী মাহাবুবসহ বেশ কজন সিনিয়র ডিরেক্টর আমাকে নিয়ে কাজ করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।  আমি চাইলে এখনই ছয়-সাতটি ছবিতে সাইন করতে পারি। কিন্তু বাচ্চার পড়াশোনার জন্য তাদের এখনই কথা দিতে পারছি না। সবাইকে বলেছি আমি অবশ্যই কাজ করব। আমাকে আরেকটু সময় দিন প্লিজ।

সর্বশেষ খবর