জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানভীন সুইটি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রে। বিজ্ঞাপনের মডেল ও ভিন্নধর্মী উপস্থাপনায়ও সপ্রতিভ। তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল
নেকাবের আড়ালে রহস্যময় একজোড়া চোখ! সিরিজটি নিয়ে অভিজ্ঞতা...
হইচইয়ের ‘কারাগার’র পার্ট-১ এ ছিলাম। তবে মুখে কোনো সংলাপ ছিল না। প্রথম অংশে গল্পের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দৃশ্যে আমার রহস্যময় উপস্থিতি ছিল। আপাদমস্তক হিজাবে ঢাকা চরিত্র, নেকাবের আড়াল পেরিয়ে শুধু একজোড়া রহস্যময় চোখ আর লাল টিপ দৃশ্যমান ছিল। তবে পার্ট-২ তে চরিত্রটি অনেক বিস্তৃত করে উপস্থাপন করেছেন নির্মাতা শাওকী। আসলে পুরোটা বলতে গেলে দর্শকের কাছে রহস্যই থাকবে না। পুরো জার্নির অভিজ্ঞতা অনেক ভালো ও স্মৃতিবহুল।
গল্পে আপনার চরিত্রটি কেমন?
আমি, চঞ্চল ও শতাব্দী এই গল্পে যুদ্ধশিশু চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার চরিত্রটি খুবই সুন্দর! পুরো ঘটনাটা জেলখানার ভিতরে। বাকিটা রহস্যই থাকুক। দর্শক দেখুক। তবে এটিতে কাজ করে ভালো লেগেছে। খুবই গোছানো, প্রফেশনাল কাজ। শাওকীসহ পুরো টিমকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। এতদিন ধরে কাজ করেছি কিন্তু এই কাজের কোনো ছবি প্রকাশ করিনি।
পার্ট-২ কতখানি সাড়া ফেলবে?
আসলে দুটো মিলেই কিন্তু এক জার্নি। একটা থেকে আরেকটা আলাদা নয়। প্রথমটিতে যে সাসপেন্স ছিল, অন্তিম পর্বে এটির সলিউশন দেখানো হয়েছে। গল্পই সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ডিরেক্টরের মুনশিয়ানাকে ধন্যবাদ দিই। যখন যা যা দরকার তিনি সেভাবে ইফোর্ট দিয়েছেন। আসলে এটি আমাদের গল্প। আমাদের দেশের গল্প।
ওপারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, কনটেন্ট ও শিল্পীরা প্রশংসিত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন?
এটা তো ভীষণ ভালোলাগা বিষয়। আগেও ওপারে আমাদের নাটক, চলচ্চিত্র জনপ্রিয় ছিল। অভিনয়শিল্পীদের কাজ দেখতে তারা মুখিয়ে থাকতেন। আমি যখনই সেখানে যাই, শুনে থাকি বাংলাদেশের কাজ নিয়ে প্রশংসা। এখন ওটিটির কারণে তো তারা সরাসরি এ দেশের নানারকম কনটেন্ট দেখতে পারছেন। তারা মা, মাটি, দেশ, মুক্তিযুদ্ধসহ এ দেশের সার্বিক অবস্থা জানতে পারছেন। এটা ভালো দিক। ওদের কাছে আমাদের শিল্পীদের মেকআপবিহীন ন্যাচারাল অ্যাকটিংয়ের কাজগুলো জীবন্ত মনে হয়।
ওটিটিতে আগেও কাজ করেছেন?
হুমম...এর আগে সামির আহমেদের একটি কাজ করেছিলাম। কারাগার ছাড়াও অনম বিশ্বাসের ‘দুই দিনের দুনিয়া’ করেছি। এখনো আমি শিখছি। শিখি। আসলে অভিনয়ের জায়গাটায় ফাঁকিবাজির কিছু নেই।
‘মাইক’ সিনেমায় কাজ করেছেন। কাজটির খবর কী?
সরকারি অনুদানে নির্মিত জাফরুল শাহীন পরিচালিত ‘মাইক’। শুটিং শেষ। ডাবিংও শেষ। ‘মাইক’ সিনেমাটি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে। এটি বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের দৃশ্যপট নিয়ে তৈরি। ’৮০-৮১ এর সময়কে নিয়ে। যারা শাসন করত, তারা সে সময় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে দিত না।
আর ‘রাসেলের জন্য অপেক্ষা’...
এই সিনেমাতেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছি। এখনো শুটিং শেষ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে কেন্দ্র করেই নূরে আলমের ‘রাসেলের জন্য অপেক্ষা’ সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে।
দুটি নাটক নিয়ে মঞ্চে ফিরেছেন। এ ধারা কি অব্যাহত থাকবে?
অবশ্যই। মঞ্চই অভিনয়ের প্রাণ। শিকড়ে ফিরতেই হবে। ‘মুক্তি’র পর ‘পোহালে শর্বরী’ করেছি। দুটি নাটকই প্রযোজনা করছে ‘থিয়েটার’। ‘মুক্তি’ নির্দেশনা দিচ্ছেন ত্রপা মজুমদার এবং ‘পোহালে শর্বরী’ নির্দেশনা দিয়েছেন রামেন্দু মজুমদার। দর্শকের সামনে অভিনয়টা আলাদা ফিলিংস দেয়।
ওটিটিতে নিয়মিত কাজ করবেন?
শুধু ওটিটিতে নয়, ভালো কাজ হলে যে কোনো মাধ্যমেই করা যায়। ওটিটি হচ্ছে যারা শিল্পী তাদের জন্য। এই যেমন কারাগার। এটিতে ম্যাক্সিমাম থিয়েটারের শিল্পী কাজ করেছেন। ভালো করেছেন সবাই। আমি মনে করি, ১০০টা কাজ না করে একটি ভালো কাজ করলেই হবে। ওটিটিতে ভালো কাজের জন্য ওয়েট করা যায়। রেগুলার নাটক করব অথচ চরিত্রে ঢুকতে পারছি না-সেটা করতে চাই না। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে কাজ তো করবই।
নাটকে দেখা যাচ্ছে না?
যে কোনো চিত্রনাট্যে অভিনয় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কাজ কম করছি, এটাও সত্যি।
সিনেমা হল আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে...
এটা আসলেই পজিটিভ দিক। ভালো কিছু সিনেমা হচ্ছে। দর্শক হলমুখী হচ্ছে। সিনেমায় আবারও সেই হারানো গৌরব ফিরে আসুক, সেটাই চাই। এখন তো টিভি ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টররা ভালো সিনেমা বানাচ্ছেন। এফডিসি থেকেও চাই ভালো সিনেমা হোক।