সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেই শাবানা আজমি এখন

সেই শাবানা আজমি এখন

অভিনেত্রী শাবানা আজমি বহু ভাষায় অভিনয় করেছেন।  অভিনয় জীবনে অসামান্য অবদানের জন্য রেকর্ড সংখ্যক পাঁচবার ‘ন্যাশন্যাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট অ্যাক্ট্রেস’ পেয়েছেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে ১২০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে বেশ কয়েকটি বিদেশি ভাষায় অভিনয় করেছেন। বর্তমানে কেমন কাটছে এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর সময়। সে কথাই তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

সমাজসেবায় ব্রত এখন

শাবানা আজমি একজন সমাজকর্মী হিসেবে নিজের মূল্যায়ন করেন এভাবে- ‘আমি সব সময় আশাবাদী একজন মানুষ। আমার বাবা একটা কথা বলতেন, যাকে আমি মূলমন্ত্র হিসেবে নিয়েছি। তিনি বলতেন, ‘পরিবর্তন আনার জন্য তোমাকে ক্রমাগত কাজ করে যেতে হবে। তোমার জীবদ্দশায় হয়তো পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু তোমাকে মন থেকে বিশ্বাস করতে হবে পরিবর্তন সম্ভব। পরিবর্তন সব সময়ই একটা লম্বা সফর।’ মানবাধিকার ও সমাজকর্মী শাবানা আজমি এখন এইডস, মৌলবাদিতা, নারীর অধিকার রক্ষা এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন রোধে কাজ করে যাচ্ছেন এবং বিবিধ সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। নারীর অধিকার রক্ষায় তাঁর বক্তব্য হলো- ‘নারীকে অবশ্যই সব উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। এখন সময় এসেছে মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের। নারী ও পুরুষ দুটি ভিন্ন সত্তা, এমন দিনে দুটি ভিন্ন সত্তারই উপভোগ করা উচিত। আমাদের যাঁরা পথিকৃৎ ছিলেন তাঁদের আমি সালাম জানাই, তাঁরা আমাদের জন্য জায়গা তৈরি করেছিলেন বলেই আজ আমি শাবানা আজমি। কিন্তু আমার লজ্জা লাগে যখন দেখি এই আধুনিক ভারত সমাজের রন্ধ্র্রে রন্ধ্রে এখনো নারী সম্পর্কিত নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে, এখনো নারীরা নির্যাতনের শিকার। কিন্তু এটা দিনের আলোর মতো পরীক্ষিত যে, নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

 

বাংলাদেশ নিয়ে স্মৃতিচারণ-

শাবানা আজমি বাংলাদেশের ছবি নার্গিস আক্তার পরিচালিত ‘মেঘলা আকাশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকের ১১তম সমাবর্তনে অংশ নিতে এসেছিলেন তিনি। তখন বাংলাদেশের স্মৃতি নিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমার বাবা কাইফি আজমির খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। নানা দিক দিয়ে তিনি বাংলাদেশের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি কবিতাও তিনি লিখেছিলেন। আমি তাঁর মেয়ে হিসেবে সুসম্পর্কের এই ধারাটাকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে চাই। ঢাকায় অনেক মুক্তমনা শিল্পী, বুদ্ধিজীবী আছেন। আমি বাংলাদেশি একটা ছবিতে অভিনয়ও করেছি। ছবিটার নাম ‘মেঘলা আকাশ’। আমি যখনই ঢাকায় আসি মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পাই। এখানকার মানুষের আন্তরিকতা আর ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার যেটা মনে হয়, বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর যৌথ প্রযোজনার ছবি হওয়া দরকার। এটা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নেও খুব ভালো একটা মাধ্যম হতে পারে। ইউরোপের দেশগুলো (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) যদি এক হয়ে কাজ করতে পারে, তাহলে আমরা পারব না কেন। পারস্পরিক সহযোগিতা, বন্ধুত্ব- এসবের কোনো বিকল্প হয় না। আর শিল্পের কোনো সীমানা থাকাটা কখনো উচিত নয়।’

 

দাম্পত্য গোপন কথা নিয়ে মুখ খুললেন

শাবানা আজমি গত মার্চে ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের বিবাহিত জীবনের এক গোপন তথ্য শেয়ার করেছেন। তিনি জানান, তিনি ও তাঁর স্বামী অর্থাৎ জাভেদ আখতারের মধ্যে যাতে খুব বেশ ঝগড়াঝাঁটি না হয় তার জন্য একটি জাদু কৌশল ব্যবহার করতেন জাভেদ আখতার। তিনি বলেছেন এটি একটি বিশেষ মন্ত্র যা সব দম্পতির মেনে চলা উচিত। শাবানা আজমি এবং জাভেদ আখতার প্রায় চার দশক ধরে বিবাহিত এবং তাঁরা প্রায়শই তাঁদের বন্ধুত্বের কথা বলে থাকেন। তাঁদের দাবি বন্ধুত্বই তাঁদের বিবাহের ভিত্তি। শাবানা জানান, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য জাভেদ আখতার তাঁকে বিশেষ কিছু জিনিস শিখিয়েছিলেন। অভিনেত্রী এও জানান যে, আর পাঁচটা দম্পতির মতোই তাঁদের মধ্যেও ঝগড়াঝাঁটি হতো ও কখনো কখনো তা চরমে পৌঁছে যেত। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানের উপায়ও আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শাবানা জানান যে, কলহ মেটানোর জাদু কৌশল আমাকে স্বামী জাভেদ আখতার শিখিয়েছেন। একটা মজার জিনিস তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন যে, আমরা যখন একে অন্যের ওপর ভয়ংকর চটে যাব, তখন আমাদের একজনকে বলতে হবে এবার থাম। আর একজন তা শুনে থেমে যাব। পাশাপাশি তিনি এও জানান, যখন কেউ কারও ওপর রেগে যাই, তখন এমন কথা বলতে থাকি, যার জন্য আমরা পরে অনুতপ্ত হই। আর থাম বলার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা লড়াই ছেড়ে দেন এবং পরে যখন তাঁরা শান্ত অবস্থায় থাকেন তখন বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করে দেখেন। সম্মান হলো যে, কোনো সম্পর্কের ভিত্তি। তাই এক্ষেত্রেও সঙ্গীকে সম্মান করা বাঞ্ছনীয়।

 

কী বললেন মহেশ ভাট

বলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ ভাট গত ২৯ মার্চ গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৮২ সালে মুক্তি পেয়েছিল আমার পরিচালিত ছবি ‘আর্থ’। যেখানে শাবানা আজমির অভিনয় সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছিল। আধুনিক হিন্দি চলচ্চিত্রের জগতে এই ছবিটি একটি মাইলফলক হয়ে আছে আজও। এক বার্তালাপের সময় মহেশ ভাট জানান, ‘আর্থ’ ছবিটির জন্য ১ টাকাও নেননি শাবানা আজমি এবং সে কথা বলতে গিয়ে তিনি খানিকটা আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন। মহেশ বলেন, তিনি জীবনে শাবানা আজমির মতো এমন মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন, যিনি কি না ওই ছবির জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে ছাড়া ছবিটা হয়তো তৈরিই হতো না। মহেশ বলেন, ‘শাবানা শুধু বলেছিলেন ছবিটি ঠিকঠাক তৈরি কর। নিজে তো ১ পয়সা নেননি। উপরন্তু ছবির জন্য পোশাকও নিজের ঘর থেকে নিয়ে আসতেন তিনি। শুধু নিজের জন্য নয়, কোনো কোনো সময় অভিনেত্রী স্মিতা পাতিলের জন্য পোশাকও তিনিই নিয়ে আসতেন সেটে। কিন্তু সেই সময় স্মিতা পাতিলকেই শাবানার দৃঢ় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো ইন্ডাস্ট্রিতে’। ছবিটিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন স্মিতা পাতিল। ছবির একটি দৃশ্যে শাবানা কান্নায় ভেঙে পড়ার যে অভিনয় করেছিলেন, তা আজও মহেশ স্মরণ করেন। তাঁর মতে ওই দৃশ্যে অমন মানের অভিনয় খুব কম অভিনেতা-অভিনেত্রীই করতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর