প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের কালজয়ী ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’র নাম কিন্তু প্রথমে এটি ছিল না। চলচ্চিত্রের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রথমে জহির রায়হান এ ছবির নাম রেখেছিলেন ‘তিনজন মেয়ে ও এক পেয়ালা বিষ’। নিজের লেখা গল্পের এ চলচ্চিত্রটি নিজে শুধু প্রযোজনাই করতে চেয়েছিলেন, পরিচালনার দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন আরেক প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক নূরুল হক বাচ্চুকে। ১৯৭০ সালে নির্মিত ও মুক্তিপ্রাপ্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এই বাংলা চলচ্চিত্রটি পুরো পাকিস্তানের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। প্রথমে এ নামে ছবিটি নির্মাণ করতে চাইলেও সব ঠিক করার সপ্তাহখানেক পরেই ছবির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জীবন থেকে নেয়া’। আর জহির রায়হান নিজে ছবিটি প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করবেন ঠিক করলেন। গল্পের বিভিন্ন চরিত্র ছিল তখনকার সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনার একেকটি রূপক চরিত্র, যেখানে আনোয়ার হোসেন সেই সময়ের জনপ্রিয় কোনো রাজনৈতিক নেতার প্রতিনিধিত্বকারী, রাজ্জাক ছাত্রনেতা, ফারুক প্রতিবাদী ছাত্রনেতার প্রতিনিধি, মহুরি খান আতাউর রহমান স্বাধীন চেতনার পরিচায়ক। উগ্রচণ্ডী, দজ্জাল রওশন জামিল একনায়কতন্ত্র স্বৈরশাসক আইয়ুব/ইয়াহিয়ার রূপক চরিত্র। সেই সময়ের একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার দৃশটি সরাসরি একুশের প্রভাতফেরিতেই চিত্রায়ণ করা হয়। ছবিটির প্রতিটি ফ্রেমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত ছিল। যার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যে কজন তরুণ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও যে ১০ ব্যক্তি কারাবরণ করেছিলেন জহির রায়হান সেই ১০ জনের একজন ছিলেন। সেই সময়ে জহির ভাষা আন্দোলনের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘পোস্টার’ নামে একটি গল্প ও ‘আরেক ফাগুন’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। জহিরের ইচ্ছা ছিল ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি ছবি তৈরির। সেই ছবিটি তৈরি করার প্রস্তুতি নিলেও তৎকালীন সরকার ছবিটি তৈরি করতে অনুমতি দেয়নি। তবু জহির দমে যাননি। পরিকল্পনা করেন রূপক অর্থে হলেও তিনি বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রাম আর শোষকের হিংস্র রূপ সিনেমায় তুলে ধরবেনই। ১৯৬৯-৭০ পর্যন্ত জহির প্রস্তুতি নেন তাঁর বহুল আকাক্সিক্ষত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি নির্মাণের। জহির সরাসরি শাসকগোষ্ঠীকে আঘাত না করে পারিবারিক গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে শাসকের অত্যাচার আর সাধারণ জনতার জেগে ওঠার চিত্র তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭০ সালের মধ্য জানুয়ারিতে জহির রায়হান ছবিটি নির্মাণ শুরু করেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। এ সময়টাকেই জহির রায়হান বেছে নেন ছবিটির কাজ শুরু করার। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি যে স্বাধীন বাংলাদেশের ইঙ্গিত বহন করছে তা ব্রিগেডিয়ার রাও ফরমান আলী, মেজর মালেক ও তাদের এদেশীয় দোসররা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তারা ছবিটিকে সেন্সর ছাড়পত্র না দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু দেশপ্রেমিক সচেতন দর্শকদের মিছিল, স্লোগান ও দাবির মুখে সামরিক সরকার বাধ্য হয়েছিল ছবিটির ছাড়পত্র দিতে। নির্ধারিত তারিখের একদিন পর অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি মুক্তি দেন জহির রায়হান। জীবন থেকে নেয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় আর বাংলা চলচ্চিত্র পেয়েছিল এক অসাধারণ কালজয়ী ছবি।
শিরোনাম
- পাথরঘাটায় জলবায়ু সহনশীল ও নারীবান্ধব সাইক্লোন শেল্টারের দাবিতে স্মারকলিপি
- দেবরের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেলো ভাবির
- সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ১৫
- নেত্রকোনায় সীমান্তে ভারতীয় মদসহ অটোভ্যান জব্দ
- বোয়ালমারীতে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপন
- জুলাই শহীদদের প্রকৃত সম্মান হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া : পরিবেশ উপদেষ্টা
- লোহাগড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু
- নাটোরে অভিযানে ধ্বংস অবৈধ চায়না জাল
- সিরাজগঞ্জে পৃথক স্থানে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার
- হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের পাশে অবৈধ বালুর ডিপো, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
- বাঁধ মেরামতে গিয়ে নিজের বসত ঘর হারালেন দুই ভাই
- জুনে ১৩৬ কোটি টাকার চোরাচালান জব্দ বিজিবির
- রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ৩৫
- জুলাই শহীদদের কেন জাতীয় বীর ঘোষণা নয়, হাইকোর্টের রুল
- আনন্দ মোহন কলেজে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে শতাধিক গাছের চারা রোপণ
- বিএনপির প্রতি জনসমর্থন ক্ষুন্ন করতে ষড়যন্ত্র করছে দুই একটি দল : রিজভী
- কুমিল্লায় ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- লালমনিরহাটে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে মাদকবিরোধী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক কারাগারে
- তাকসিম খানের অনুসারীরা ওয়াসার হাইব্রিড বিএনপি : সিবিএ সভাপতি