নায়ক-নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা ছিল না তাঁদের। ভিন্ন পেশার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছিলেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে এসে পড়লেন অভিনয়জগতে। মাতালেন রুপালি পর্দা। তবে তাঁরা কারও না কারও হাত ধরে এসেছিলেন শোবিজজগতে। এসেই বাজিমাত করলেন। তারকা হওয়ার পর আর ফিরে যাননি তাঁদের দেখা পুরোনো স্বপ্নে। এমন কজন নায়ক-নায়িকার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
জহির রায়হানের নায়ক হলেন রাজ্জাক
আবদুর রাজ্জাক। কলকাতা থেকে ১৯৬৪ সালে ঢাকায় এসে চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সহকারী ও ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেন। একদিন ছবির রিলের কয়েকটি ক্যান নিয়ে এফডিসির প্রশাসনিক ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলেন। আরেক প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা জহির রায়হান তখন নামছিলেন। রাজ্জাকের নায়কোচিত চেহারা দেখে তিনি জানতে চাইলেন তাঁর ইচ্ছার কথা। রাজ্জাক বললেন, তিনি অভিনেতা হতে চান। তখনই জহির রায়হান তাঁকে বললেন, ‘যদি অভিনয় করতে চাও তাহলে আজ থেকে ক্যান বহন করা মানে সহকারীর কাজ আর করবে না।’ এরপর জহির রায়হানই ১৯৬৬ সালে তাঁর পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘লখিন্দর’-এর ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ করে দেন রাজ্জাককে। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত।
সোহানের নায়ক শাকিব
ছোটবেলা থেকে শাকিব খানের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলছিলেন। একদিন চলচ্চিত্রের নৃত্যপরিচালক আজিজ রেজার সঙ্গে শাকিব খান এফডিসিতে এলেন শুটিং দেখতে। হঠাৎ এক ক্যামেরাম্যান তার কয়েকটি ছবি তুললেন এবং তা দেখালেন কয়েকজন নির্মাতাকে। এর মধ্যে নির্মাতা আফতাব খান টুলু ও সোহানুর রহমান সোহান শাকিবকে পছন্দ করলেন এবং আফতাব খান টুলু তাঁকে নিয়ে ‘ফুল নেবো না অশ্রু নেবো’ এবং সোহান ‘অনন্ত ভালোবাসা’ নামের ছবি নির্মাণ শুরু করলেন। শাকিব খানের প্রকৃত নাম ছিল মাসুদ রানা। সোহান তাঁর ফিল্মি নাম দিলেন শাকিব খান। ১৯৯৯ সালে প্রথম মুক্তি পেল ‘অনন্ত ভালোবাসা’। ছবির সাফল্যে শাকিব খান হয়ে গেলেন চলচ্চিত্রের নায়ক।
সুচন্দার হাত ধরে চম্পা
চম্পার ইচ্ছা ছিল তিনি বিবি রাসেলের মতো মডেল হবেন। তখন অনেকেই বলাবলি করতে থাকেন চম্পা নাকি তাঁর বড় দুই বোন অভিনেত্রী সুচন্দা ও ববিতার মতো নায়িকা হতে পারবেন না। এ কথা শুনে মনে জিদ চাপল চম্পার। তিনি তার বড় বোন সুচন্দা প্রযোজিত ‘তিন কন্যা’ ছবিতে নায়িকা হয়ে চলে এলেন চলচ্চিত্র দুনিয়ায়।
রিসিপশনিস্ট থেকে নায়ক রহমান
রহমান ১৯৫৮ সালে শাহবাগ হোটেলে চাকরি নেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা এহতেশাম শাহবাগ হোটেলে প্রায়ই আসতেন। তাঁর সঙ্গে রহমানের ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। তিনি রহমানকে বলতেন, তুমি দেখতে উত্তম কুমারের মতো। এহতেশাম পরিচালিত ছবি ‘এ দেশ তোমার আমার’-এ প্রথম দিন শুটিংয়ে অংশ নিয়ে অভিনয় করতে পারছিলেন না। বারবার ঘাবড়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থা দেখে খান আতা বললেন, এহতেশাম এ ছেলেটাকে কোথা থেকে ধরে নিয়ে এসেছেন। এ কথা শুনে রহমান শুটিং স্পট থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার ‘একটু আসি’ কথাটি শুনে সন্দেহ হয় সেটের সবার। রহমান পালিয়ে যেতে পারলেন না। ‘এ দেশ তোমার আমার’ মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। এ ছবিটি হিট হয়, একই সঙ্গে রহমানের অভিনয় প্রশংসিত হয়।
রত্না থেকে নায়িকা শাবানা
মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমানের হাত ধরে চিত্রজগতে অভিষেক শাবানার। আজিজুর রহমান তাঁকে নিয়ে যান চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের কাছে। রত্না হিসেবে পরিচিত হলেও এহতেশামই পরে তাঁর ‘চকোরী’ ছবিতে নাম দেন শাবানা। ১৯৬৭ সালে আবির্ভাব ঘটল তাঁর।
এহতেশামের নায়ক নাঈম
নবাব পরিবারের সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের সম্পর্ক ছিল মধুর। নবাব খাজা মুরাদকে চলচ্চিত্রে আনতে না পেরে মুরাদের সন্তান নাঈমকে দেখে এহতেশাম ধরে বসলেন মুরাদকে। তিনি কোনো আপত্তি করলেন না। নাঈমকে নায়ক করে ১৯৯১ সালে নির্মাণ করলেন ‘চাঁদনী’ ছবিটি। ছবিটি নিয়ে সফল নাঈম।
রেণু থেকে রোজিনা
১৯৭৭ সালে কালীদাস পরিচালিত ‘জানোয়ার’ ছবির শুটিং দেখতে গেলেন রোজিনা। সেই ছবিতে ছোট একটি রোল করেন। পরে ১৯৭৮ সালে এফ কবীর চৌধুরীর ‘রাজমহল’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন।
ছবিটি হিট হলে রোজিনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
এহতেশামের নায়িকা শাবনাজ
শাবনাজ বললেন, একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে এহতেশাম সাহেব আমাকে দেখেন। তিনি বললেন, আমাকে ‘চাঁদনী’ ছবির নায়িকা করতে চান। বাবা যেহেতু মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাই তিনি না করলেন না। ব্যস, বাবার উৎসাহে ‘চাঁদনী’ হয়ে গেলাম। ছবিটি সফল হলে একসময় চিত্রজগতেই থিতু হলাম।