ওদের মন ভাল নেই৷ ২৬ দিনের লড়াইয়ের প্রত্যেকটা দিন এখন ওদের চোখের সামনে ভাসছে৷ বাইরে যখন মহানায়িকাকে একঝলক দেখার জন্য কাতারে কাতারে লোকের ভিড় উপচে পড়ছে৷ তখন হারানো সুরের রমাকে এতকাছ থেকে পেয়েও বাঁচাতে না পারার আপশোষ তাদের মনকে বারবার মলিন করে তুলছে৷ বেলভিউর সেই কেবিন যেখানে ২৬ দিন ধরে লড়াই চালিয়ে জীবন থেকে ইতি টানলেন সুচিত্রা সেন৷
শেষমুহূর্তে মহানায়িকার পাশে ছিলেন গৌরভক্ত ও সন্ন্যাসী৷ ওরা কেবিনে খাওয়ার পৌঁছে দিতেন৷ হাসপাতালে প্রচন্ড কড়কড়ি৷ তারমধ্যে মহানায়িকার নির্দেশ তাঁর ঘেরাটোপে সকলের প্রবেশ নিষেধ৷ কিন্তু এতকিছুর মধ্যেই কি করে যেন কয়েকজন মহানায়িকার মনে স্থান করে নিয়েছিলেন৷ যাদের প্রবেশ করার ওপর কোনও আপত্তি ছিলনা তাঁর৷ শুধু তাই নয় তাদেরকেই একমাত্র চাইতেন সুচিত্রা সেন৷ এদের মধ্যেই ছিল গৌরভক্ত ও সন্ন্যাসী৷ প্রত্যেকদিন সময় করে মহানায়িকাকে খাওয়ার দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এদের৷ তাঁর ফলেই গতকয়েকদিনে সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে ওরা ছুটি বাতিল করে হাসপাতালে টানা ডিউটি করছিলেন৷ কিন্তু সকলকে ফাঁকি দিয়ে হঠাৎই উনি চলে যাবেন ওরা ভাবতেও পারেনি৷ মহানায়িকার পচ্ছন্দের তালিকায় আরেকজন ছিল কেয়া নামে একজন সেবিকা৷ শেষসময় পর্যন্ত মহানায়িকার কাছে ছিলেন তিনি৷
যখন সুচিত্রা সেন অসুস্থ হয়েছেন তিনি তাঁর বাড়িতে যেতেন কেয়া৷ তাঁকে ভালবাসতেন মহানায়িকা৷ এই তিনজন ছাড়া কারোর প্রবেশ ছিলনা মহানায়িকার সান্নিধ্য পাওয়ার৷ কিন্তু এতচেষ্টা, এতপ্রার্থনার পরও হারাতে হল মহানায়িকাকে৷ অন্তরালে তিনদশক আগে চলে গেলেও সাধারণের মনে কোথাও না কোথাও একটা আশা ছিল কোনও দিন নিজের অন্তরাল ভেঙে বেরিয়ে আসবেন৷ কিন্তু আজ চিরদিনের মতন অন্তরালে চলে গেলেন সুচিত্রা সেন৷ মহানায়িকার অন্তরালকে শ্রদ্ধা জানাছেন ওরা তিনজনও৷ তাইতো কাছে থেকেও গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন ওরা৷ বেলভিউয়ের সেইঘর যেখানে নিজের জীবনের শেষদিনগুলি কাটালেন মিসেস সেন তা ওদের হৃদয়ের আজীবন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে৷