গত ২৪ তারিখ ঢাকায় এসেছে বুনোহাঁসের শুটিং ইউনিট। আর বুধবার এসেছেন তিনি, যিনি এই 'বুনোহাঁস' উপন্যাসটির লেখক। তার সম্পর্কে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। তিনি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। 'বুনোহাঁস' সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১২ সালে উপন্যাসটি লিখেছিলাম। মূলত গতানুগতিক ধারার চেয়ে একটু ভিন্ন এর কাহিনী। একজন সহজ-সরল যুবক কীভাবে অন্ধকার জগতে নাম লেখাতে পারে তাই তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
উপন্যাসটি লেখার সময় কখনো মনে হয়েছিল কি এর ওপর ভিত্তি করে কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হতে পারে_ জানতে চাইলে সমরেশ মজুমদার বলেন, সত্যি কথা বলতে এরকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এর কাহিনী লেখার পেছনে আরেক কাহিনী জড়িয়ে আছে। সেটা আবার কি রকম, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে কলকাতা থেকে ব্যাংকক হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিলাম। ব্যাংকক এয়ারপোর্টে হঠাৎ করে চোখে পড়ে বেশ কয়েকজন যুবক। যাদের প্রত্যেকের হাতেই বিভিন্ন সাইজের লাগেজ। প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে এয়ারহোস্টেজ ও অন্যদের কাছ থেকে জানতে পারলাম এরা কন্ট্রাকে কলকাতা থেকে ব্যাংকক আসে এবং যাওয়ার সময় ফিরতি ফ্লাইটে বেশ কিছু জিনিসপত্র ও লাগেজ নিয়ে যায়। এ কাজের জন্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তাদের দায়িত্ব শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাগটি বুঝে নিয়ে নির্দিষ্ট গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করা। এতে কি কি আছে তা জানার অধিকার তাদের নেই। মূলত এই চক্রকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে এ উপন্যাসটি। আর এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা যাবে অমলকে অর্থাৎ দেবকে। এখান থেকেই ছবির উত্থান-পতন।
অমল চরিত্রে দেব সার্থক হবে কি না জানতে চাইলে সমরেশ মজুমদার বলেন_ একটা কথা না বললেই নয়, টনি অর্থাৎ অনিরুদ্ধ যখন আমার কাছে এই চরিত্রের জন্য কাকে নেওয়া যায় জানতে চাইল, সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে বললাম দেব। অথচ তার সঙ্গে আমার কিন্তু পরিচয় নেই। সামনাসামনি দেখিনি কখনো। পর্দায় যে ক'বার দেখেছি তা থেকেই দেবের নাম উচ্চারণ করলাম। উল্টো টনি আমাকে জিজ্ঞেস করল দেব কেন, বললাম দেবের মাঝে বিশেষ করে ওর শারীরিক গঠন ও অবয়বে একটা কঠিন বাঙালি ভাব আছে। এ চরিত্রের জন্য যে সহজ-সরল যুবক প্রয়োজন সেটা তার মাধ্যমেই ফুটিয়ে তোলা যাবে। এ ছাড়া এবারের কলকাতা বইমেলাতেও বুনোহাঁস উপন্যাসটি পাঠকদের মন কেড়েছে।
অন্যদিকে ছবিটির পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় অনেকটাই খোশ মেজাজের লোক। সারাক্ষণই হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকেন। গোটা ইউনিটকে মাতিয়ে রাখেন। অনেকটা আড্ডাপ্রিয় এই মানুষটি বলেন, এখানকার আতিথেয়তা সত্যিই মনে ধরার মতো। আগে শুধু শুনেছি এবার বাস্তবে দেখলাম। উপন্যাস হিসেবে বুনোহাঁসকেই কেন বেছে নিলেন জানতে চাইলে অনিরুদ্ধ রায় বলেন, সমরেশ মজুমদারের কাছে গিয়েছিলাম অন্য একটি উপন্যাসের জন্য। কিন্তু আমাদের বাজেট ও প্রেক্ষাপট শুনে তিনি বললেন, ওইটা বাদ দাও এটা নাও অর্থাৎ বুনোহাঁস। পরবর্তী সময়ে কাহিনী শুনে বুনোহাঁসকেই পছন্দ করলাম। শুটিংয়ের এ অংশগুলো তো পশ্চিমবঙ্গেও করতে পারতেন, তা এখানে এলেন কেন? উত্তরে অনিরুদ্ধ বলেন, দেখুন কাহিনীর প্রয়োজনে এ বাংলায় এসেছি। এটা সত্য যে, ওখান থেকেও চিত্রায়ণ করা যেত; কিন্তু নিজের কাছেই পছন্দ হতো না। অমল অর্থাৎ দেবের পিতৃপুরুষ এ দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। আর এ কারণেই এখানে আসা।
এখানের পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট কেমন লাগছে জানতে চাইলে অনেক উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বলেন, এককথায় এঙ্েিলন্ট। যেখানে গিয়েছি সেখানেই সহযোগিতা পেয়েছি। মানিকগঞ্জের মতো জায়গায় ১০ থেকে ১২ হাজার লোকের সমাগমকে স্থানীয় প্রশাসন যেভাবে হ্যান্ডেল করেছে তা চমৎকার ও প্রশংসনীয়। এমনকি যে গাড়িতে আমরা আসা-যাওয়া করছি এর ড্রাইভারও আমাদের পজিটিভ গাইড দিচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে সেও খুব সতর্ক। আর পুলিশের কথা না বললেই নয়, গভীর রাত পর্যন্ত শুটিং স্পটে সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া এখানকার খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যা খাচ্ছি সবই অমৃত মনে হচ্ছে। আমার ৩২ জনের গোটা ইউনিট এখানকার স্টার কাবাবের প্রেমে পড়ে গেছে। বিশেষ করে বিশ্বজিৎ তো পারলে তিন বেলাই এ কাবাব খেতে চায়। অন্যদিকে আমার স্ত্রী ইন্দ্রানীও এখানকার খাওয়া-দাওয়া উপভোগ করছেন। আরেকটি কথা না বললেই নয়, একটি ছবি বানাতে চাই, যেটার পুরো শুটিং করতে চাই বাংলাদেশে। এরকম একটি পরিকল্পনাও এবার নিয়ে যাচ্ছি।
এই ছবি করতে গিয়ে কোনো মজার অভিজ্ঞতা আছে কি না জানতে চাইলে অনিরুদ্ধ বলেন, কলকাতার প্যারিস বারে একটা শুটিং করছিলাম। ড্যান্স বারে নাচছিলেন রাইমা সেন। খবর পেয়ে কয়েক হাজার লোক ছুটে আসলেন প্যারিস বারের সামনে। কেউ কেউ লাঠি নিয়ে পর্যন্ত ভয় দেখাতে শুরু করলেন। বললেন, তাদেরকেও শুটিং দেখতে দিতে হবে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমার স্ত্রী ইন্দ্রানী ফোন দিল পুলিশ কমিশনারকে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের দুটি ইউনিট চলে এলো। আর আমি ফোন দিলাম স্থানীয় কাউন্সিলরকে। এ ছাড়া আরও কয়েকজনকে খবর দেওয়া হলো, যারা একটু মাস্তান টাইপের লোক। তাদের বললাম, তোমরাও আমাদের সঙ্গে শুটিং দেখ। কিন্তু বাইরের অপেক্ষমাণ জনতাকে ঠেকাতে হবে। যেই কথা সেই কাজ, তারা ঠেকাল ভক্তদের, আমরা চালিয়ে গেলাম ড্যান্স বারের শুটিং। এভাবেই সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলাম।
কবে নাগাদ পর্দায় উঠতে পারে ছবিটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি ছবিটির ট্রেইলার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তি দিয়েছি। প্রথম দিন থেকেই সবার নজর কেড়েছে এটি। এবার পালা বড় পর্দায় উঠানো। চেষ্টা করছি আগামী ১১ এপ্রিল মুক্তি দিতে। কিন্তু কিছুটা শঙ্কাও কাজ করছে। সে সময় অর্থাৎ এপ্রিলের পর ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেশে। অনেকেই তারিখ পরিবর্তন করতে বলছেন। আপাতত ১১ এপ্রিলকে মাথায় রেখেই এগিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা পরে দেখা যাবে।
অন্যদিকে টালিউডের অন্যতম হার্টথ্রব নায়ক দেবের জন্য অনেকটাই পাগল এ দেশের ভক্তকুল। এখানে আসার প্রথম দিন থেকেই তার প্রতি আগ্রহের পারদের মাত্রাটা বেড়েই চলেছে। এখানকার ভক্ত ও পরিবেশ প্রেক্ষাপট নিয়ে দেব জানান, নতুন করে কিছু বলার নেই, প্রথম দিনেই বুঝে গেছি এখানকার আতিথেয়তা। সবাই খুব কো-অপারেটিভ। নিজেও খুব এনজয় করছি। তাই তো এখানকার হালহকিকত ও ছবি ফেসবুকের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি। জানতে পেরেছি হাজী বিরিয়ানি নাকি খুব সুস্বাদু। যদিও এখনো খাইনি। এ ছাড়া কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। মনে হচ্ছে নিজ শহরেই আছি। আবহাওয়া ও আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ।
শুটিংয়ের আগে ও পরে টানা জিম করেন টলিউডের এই সেনসেশন। এখানে এসেও ব্যতিক্রম ঘটছে না। তার জন্য ওপার থেকে উড়ে এসেছেন ট্রেইনার স্পেশালিস্ট। শুটিংয়ের পর পর টানা ২ ঘণ্টা করে জিম করছেন তিনি। ট্রেইনারের নির্দেশনা অনুযায়ী শরীর কসরত করে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেব বলেন, মূলত আমার পরবর্তী ছবির জন্যই এ প্রস্তুতি। সেই ছবির কাহিনীর প্রয়োজনেই বডি ফিটনেসটা আরও বাড়াতে হবে।