সিনেমা হল বন্ধ রোধ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত ছবি ও পরিবেশের অভাবে দর্শক সিনেমা হলবিমুখ। সর্বশেষ ঢাকার ঐতিহ্যবাহী তিন সিনেমা হল 'ডায়না', 'যমুনা' ও 'মেঘনা' বন্ধ হয়ে গেল। ঢাকার বাইরের সিনেমা হল বন্ধও অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন শপিংমলে সিনেপ্লেjক্স নির্মাণ হলেও সেগুলোতে ইংরেজি ছবিই বেশি প্রদর্শন হচ্ছে। এতে দেশীয় সিনেমা ব্যবসার প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে না। এ অচলাবস্থার উন্নয়নে করণীয় কী? সে বিষয়ে চলচ্চিত্র সংগঠনের নেতা ও শিল্পীর বক্তব্য তুলে ধরেছেন -আলাউদ্দীন মাজিদ
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু [সভাপতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি]
প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রোধ ও চলচ্চিত্র ব্যবসার উন্নয়নে ভালো ছবি ও শিল্পী দরকার। বর্তমানে এর অভাব প্রকট। দর্শক যে ছবি এবং যেমন ছবি দেখতে চায় তার ওপর জোর দিতে হবে। তা যদি বিদেশি ছবি হয় তাতেও আপত্তি নেই। কারণ ভালো ছবির অভাবে যদি প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে চলচ্চিত্র ব্যবসা টিকবে কী করে। প্রেক্ষাগৃহেরও উন্নত পরিবেশ দরকার। তবে ভালো ছবি পেলে যে কোনো প্রেক্ষাগৃহে দর্শক কষ্ট করে হলেও যে যায় তার নজির আছে। সরকার প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারে অনুদান দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু ভালো চলচ্চিত্রই যদি না থাকে তাহলে প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার করে কী লাভ হবে। আগে দর্শক উপযোগী ছবি দরকার। তা কোন দেশের বা কোন ভাষার তা আমি জানি না। দর্শকের পছন্দের ওপর জোর দিয়ে ছবি প্রদর্শন করতে পারলে চলচ্চিত্রের অচলাবস্থা দূর হবে।
শাকিব খান [সভাপতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি]
চলচ্চিত্র ব্যবসা ও প্রেক্ষাগৃহের উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতা দরকার। এফডিসিতে এখনো ডিজিটাল প্রযুক্তির ছবি নির্মাণে পরিপূর্ণ সুবিধা গড়ে ওঠেনি। প্রেক্ষাগৃহের নিম্নমানের পরিবেশের কারণে দর্শক সেখানে যেতে পারছে না। চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে সত্যি। কিন্তু শিল্পের পূর্ণ সুবিধা এখানো চলচ্চিত্রকাররা পাচ্ছে না। নানা প্রতিকূলতার কারণে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক ছবি নির্মাণ এদেশে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দর্শক মনের মতো নির্মাণ না পেয়ে প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ হচ্ছে। বর্তমানে চলচ্চিত্র নির্মাণে যে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। অনুদানের পরিবর্তে চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকার যদি লোন দেয় তাহলে ভালো ছবি নির্মাণে সহায়ক হবে। সরকার প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারে অনুদান দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ হলেও সব ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
অপু বিশ্বাস [অভিনেত্রী]
সিনেমা হল বন্ধরোধ ও উন্নত চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি সহযোগিতা চাই। যদিও সরকার ইতিমধ্যে এফডিসির আধুনিকায়ন, প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারে অনুদান, চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে তারপরেও এসব ব্যবস্থার ইতিবাচক ফল পেতে যথাযথ সরকারি মনিটরিং ব্যবস্থার প্রয়োজন। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প দীর্ঘদিন ধরে অশ্লীলতা, নকল ও পাইরেসিসহ নানা প্রতিকূলতার মোকাবিলা করছে। এসব রোধে কঠোর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এখন মানুষ শুধু ছবি দেখতে সিনেমা হলে যেতে চায় না। তাই শপিংমলে বেশি পরিমাণে সিনেপ্লেক্স গড়ে তুলতে হবে। এটিই ছবি দেখার আধুনিক কালচার। তাছাড়া ছবির ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে সেন্সরপ্রথা বাতিল করে গ্রেডেশন পদ্ধতি চালু করতে হবে। না হলে বিশ্বের ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়। অবাধে বিদেশি টিভি চ্যানেল প্রচারও চলচ্চিত্রের প্রসারে প্রতিবন্ধক।
মিয়া আলাউদ্দীন [সাধারণ সম্পাদক, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি]
স্যাটেলাইট চ্যানেল, ভিডিও পাইরেসি, অশ্লীলতা, নকল প্রবণতার উপদ্রব প্রেক্ষাগৃহ ও চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধস নামিয়েছে। সঙ্গে ভালো ছবির অভাব তো রয়েছেই। প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের অধিক মুনাফা লাভের লোভ সংবরণ করতে হবে। ভালো ছবি পেলে প্রদর্শক, পরিবেশকই শুধু নয় সমগ্র চলচ্চিত্র জগৎ উপকৃত হবে। ভালো ছবির জন্য শুধু নিজের দেশের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। তাতে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ট্যাক্স বৃদ্ধি, সাপ্তাহিক প্রদর্শনের সময়সীমা নির্ধারণসহ সব বিষয় থাকবে। যাতে দেশীয় ছবির স্বার্থের ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র এখানে প্রদর্শন করলে কোনো সমস্য হওয়ার কথা নয়। দেশি এবং বিদেশি ভালো চলচ্চিত্র পেলে দর্শক আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরবে বলে মনে করি।