যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' ও 'রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট' ছবি দুটি পরপর ব্যবসাসফল হওয়ায় নির্মাতারা এখন যৌথ আয়োজনের প্রতি ঝুঁকছেন।
নির্মাতাদের কথায়, কয়েক দশক ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রের অবস্থা শোচনীয়। মাঝে-মধ্যে দু'একটি ছবি ব্যবসা করলেও সেই সফলতার ধারা অব্যাহত থাকছে না। এ অবস্থায় যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মিত হলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কারণ যৌথ আয়োজনের ছবির মান উন্নত বলে এর প্রতি স্বাভাবিকভাবেই দর্শক আগ্রহ দেখা দেয়।
গত বছর মুক্তি পায় অনন্য মামুন ও অশোকপতি নির্মিত 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' এবং চলতি বছর জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ ও কলকাতার অশোকপতি নির্মিত 'রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট' শিরোনামের যৌথ প্রযোজনার দুটি ছবি। ছবিগুলো ব্যবসা সফল হয় এবং এখনো বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলছে। শেষ ছবিটি গতকাল দেশের কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে নতুন করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ছবিগুলো দর্শকপ্রিয়তার কারণে অল্পসময়ে অর্ধডজন বার মুক্তি দেওয়া হয়। দর্শকের মন্তব্য ছবি দুটোর নির্মাণ উন্নত, সমসাময়িক প্রযুক্তির ব্যবহার আছে। টেকনিক্যাল এবং ননটেকনিক্যাল উভয় ক্ষেত্রেই ভালো কাজ হয়েছে। ফলে ছবিগুলো বার বার দেখা যায়।
স্বাধীন দেশে এ পর্যন্ত অর্ধশতেরও বেশি যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। শুধু ভারত নয়, প্রতিবেশী অনেক দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং হতে পারে।
চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, ২০১২ সালে ডিজিটাল প্রযুক্তির চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং প্রদর্শন শুরু হলে দর্শক আবার আগ্রহ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ফিরতে থাকে। কিন্তু এ প্রযুক্তিতে নির্মাণ ব্যয় কমে আসার সুযোগে কতিপয় অসাধু নির্মাতা চলচ্চিত্রের নামে টেলিফিল্ম নির্মাণ করে দর্শকদের আবার প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ করেছে। তাই শত চেষ্টা সত্ত্বেও চলচ্চিত্রের সুদিন স্থায়ী হচ্ছে না।
এ অবস্থায় গত বছরের ১৬ মে যৌথ প্রযোজনায় অনন্য মামুন ও অশোকপতি নির্মিত 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' চলচ্চিত্রটি দেশের ৬৭টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সব শ্রেণির দর্শক প্রবল আগ্রহ নিয়ে ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসে। ব্যাপক ব্যবসা করে ছবিটি। যৌথ প্রযোজনার এ ছবির সাফল্যে প্রেক্ষাগৃহ মালিকসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাই খুশি। আনন্দ সিনেমার ব্যবস্থাপক শামসুল ইসলাম বলেন, ছবিটি চালিয়ে দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখলাম। লোকসান গুনতে গুনতে আমাদের নাভিশ্বাসে উঠেছে। এ ধরনের ছবি পেলে আমরা প্রেক্ষাগৃহ সংশ্লিষ্টরা বেঁচে যাব। অন্য পেৃক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষেরও একই কথা। ছবিটির এমন সাফল্যে আবার উজ্জীবিত হয়েছে নির্মাতারা। তারা চাচ্ছেন বেশি করে যৌথ আয়োজনের ছবি নির্মাণের মাধ্যমে দর্শকসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবার প্রত্যাশা পূরণ হোক।
অন্যদিকে 'রোমিও বনাম জুলিয়েট' মুক্তি পায় ১৬ জানুয়ারি। ছবিটির প্রতি এখন পর্যন্ত সিনেমা হল মালিক ও দর্শকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ কারণে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ছবিটি নতুন করে মুক্তি পাচ্ছে এবং দর্শক টানছে। এ ছবির প্রতিও দর্শকের একই কথা, যৌথ আয়োজনে নির্মিত বলে সবদিক দিয়ে এর মান উন্নত। বারে বারে দেখার মতো। এ ছবির ব্যবসায়িক সফলতায় জাজ মাল্টিমিডিয়া আবারও কলকাতার এস কে মুভিজের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে নির্মাণ করতে যাচ্ছে চলচ্চিত্র 'প্রেমী ও প্রেমী'। এ ছাড়াও প্রায় অর্ধ ডজন যৌথ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শাকিব খান প্রযোজিত দুটি ছবি।
এতে অভিনয় করবেন শাকিব ও পাওলি দাম। উত্তম আকাশের 'ঢাকার ছেলে কলকাতার মেয়ে' এতে থাকছেন শাকিব ও কলকাতার রোহিনী। অনন্য মামুন নির্মাণ করবেন জিৎকে নিয়ে একটি ছবি। চলচ্চিত্রকারদের মতে, এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে।