বিদেশি তারকাদের সঙ্গে দেশীয় তারকাদের অনেক পার্থক্য ছিল। সম্পর্ক চর্চার ক্ষেত্রে দেশীয় তারকারা আগে অনেকটাই দেশীয় সামাজিকতা মেনে চলতেন। কিন্তু দিন দিন বিদেশি তারকাদের মতোই হয়ে যাচ্ছেন দেশীয় তারকারা। এটাকে অনেকে তারকাদের অনুকরণ মনোভাব মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন, মিডিয়ায় কাজ করলে কেউ ঠিক থাকতে পারেন না। নানাজনের নানা মত। আর তারকাদের 'বিচ্ছেদ' নিয়েই মতামতগুলো বেশি আবর্তিত হচ্ছে বলা যায়।
সম্প্রতি দুই তারকা দম্পতির বিয়ে বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ হয়েছে। প্রথমে হৃদয়-সুজানা, এরপর শিমুল-নাদিয়া। তাই তারকাদের নিয়ে পুরনো গাল-গপ্পো আবার মুড়ি-চানাচুরের মতো সুস্বাদু উপায়ে চর্চা হচ্ছে। আর তাই আলোচনায় বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া পুরনো দম্পতিরাও। অপি করিম-উজ্জ্বল, মোনালিসা-ফাইয়াজ, রুমি-অনন্যা, আনিসুর রহমান মিলন-লুসি তৃপ্তি গোমেজ, বিজরী-ইমন, ন্যান্সি, অমিতাভ-জেনি, তিনি্ন-হিল্লোল, সুবর্ণা-ফরীদি- আসলে তালিকাটি অনেক লম্বা। তারকারা বেশিরভাগ সময়ই গোপনে প্রেমের সম্পর্ক চর্চা করেন কিন্তু খবর প্রকাশ হলে হলুদ সাংবাদিকতার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রেমের খবর মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। সে ক্ষেত্রে পরবর্তীতে দুটি বিষয় ঘটে। যদি প্রেম ভেঙে যায় তবে আর কোনো হিসাব-নিকাশ থাকে না। কিন্তু যদি তারা বিয়ে করেন, তখন প্রেমের খবর চেপে হলুদ সাংবাদিকতা বলে চিৎকার করার কারণ জানতে চাইলে শুধুই নির্লজ্জ হাসি ঝরতে থাকে। তখন মুখে থাকে ভালো ভালো কথা- 'আমরা দুজন দুজনকে খুব ফিল করি', 'এই হাত যখন ধরেছি, আর ছাড়ব না', 'সবাই দোয়া করবেন, আমরা যেন সারা জীবন একসঙ্গে থাকতে পারি'...। এ রকম নানা কথা বলতে থাকেন। অথচ বছর ঘুরলেই আবার সুর উল্টে যায়। তখন যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। একজন অন্যজনকে দেখতে পারেন না। ফলাফল বিবাহ বিচ্ছেদ।
এভাবেই চর্চা হচ্ছে তারকাদের প্রেম-ভালোবাসা। পর্দায় যারা ভালো ভালো চরিত্রে অভিনয় করে তারকা খ্যাতি পান ব্যক্তিগত জীবনের কারণে তারাই আবার দর্শকের কাছে নিন্দিত হন। পাশাপাশি দর্শকের অভিযোগ পুরো মিডিয়ার ঘাড়ে এসে পড়ে। বিপরীতে তখন সুখী দম্পতি বিপাশা-তৌকীরদের উদাহরণ দিয়েও লাভ হয় না।
তারকারা এভাবে সম্পর্ক চর্চা করছেন কেন, তাদের দাম্পত্যে ফাটল কেন- এসব নিয়ে মনোবিজ্ঞানীদের মুখোমুখি হয়ে জানা যায় নানা ব্যাখ্যা। প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামাল বলেন, 'ইজি এঙ্সে, অর্থাৎ সবকিছু এখন এত সহজ হয়ে উঠেছে যে, কঠিন দিকটা কেউ ভাবতে চায় না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একে অন্যের সঙ্গে এত সহজে মিশে যেতে পারে যে, সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কেউ চিন্তাও করে না। এ ছাড়া একাকিত্ব ও অবসাদকে এ জন্য দায়ী করা যায়। যখন নিজের সমস্যা সমাধান আপনজনের কাছে না পাওয়া যায় তখনই অন্যের দ্বারস্থ হতে শুরু করে। সবচেয়ে বড় কথা সামাজিক অবক্ষয়।' তিনি আরও বলেন, 'তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠছে কীভাবে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের অনেক ধরন থাকে। কিন্তু তারকাদের মধ্যে বিচ্ছেদ বেশি দেখা যায়। এর একটা কারণ থাকতে পারে, চোখ ধাঁধানো প্রলোভন সব সময় সামনে ঘুরপাক খায়। লাগামহীনতার কারণে তাদের জীবনে সবকিছুই দ্রুত প্রবেশ করে। আর এতে সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করে।'
এদিকে আরেক মনোবিদ ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'এ সমস্যা আপার ক্লাসে একটু বেশি। এ ছাড়া যাদের জীবনে উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বন্ধনহীনতা বেশি তারাই বিচ্ছেদের দিকে বেশি ধাবিত হয়। যখন একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হতে পারবে না, নিজেই নিজেকে বড় মনে করবে, তখন সম্পর্কের মধ্যে প্রভাব পড়ে। অল্পতেই অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে তারা। ব্যক্তিত্বের সংঘাত তৈরি হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে তারা বিচ্ছেদের দিকে এগিয়ে যায়।'
তারকাদের অনেকে মনে করেন 'আদর্শ'। তাদের কাছ থেকে ভক্তরা অনেক কিছু শেখেন। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, তারকারা আগের সেই অবস্থানে আর নেই। আদর্শ বিকিয়ে দিয়েছেন। তাই তারা এখন সমালোচনার কাঠগড়ায়।