শাহীন সামাদ
আমাদের দেশে নজরুলচর্চা কম হচ্ছে বলে যারা ধারণা করছেন, তাদের সঙ্গে আমি পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করছি। আমি এ কথাটি মেনে নিতে রাজি নই। কারণ আমরা ছায়ানটে যে পরিমাণ নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নজরুলগীতির শিক্ষা দিচ্ছি, তাতে আমার কোনোভাবেই মনে হয় না আমাদের দেশে নজরুলচর্চা কম হচ্ছে। আমরা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে নজরুলের বিশুদ্ধ সুর-বাণীর ওপর শিক্ষা দিচ্ছি। এ ছাড়া টিভি চ্যানেলগুলো নজরুলের উৎসবগুলোকে যেভাবে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে তাতে নজরুলচর্চা আরও প্রসারিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি আশা করব আমাদের দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ টিভি চ্যানেল আছে তারা যদি শুধু বিশেষ দিবসে নজরুলকে স্মরণ না করে, সারা বছর চর্চা চালিয়ে যায় তাহলে প্রচারণা আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ যে পরিমাণ নজরুলগীতির চর্চা হচ্ছে সে পরিমাণে প্রচার হচ্ছে না।
নাশিদ কামাল
আমার কাছে মনে হয় নজরুলচর্চা বাংলাদেশে এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। কারণ আমাদের দেশের উঁচু শ্রেণির লোকেরা এখনো রবীন্দ্রচর্চা করে থাকে। তাই অনেকটা আড়াল হয়ে আছে নজরুলচর্চা। আসলে নজরুল তো জন্ম থেকেই অবহেলিত। মৃত্যুর পরও যথাযোগ্য সম্মান কি পেয়েছে? নজরুলকে আমরা জাতীয় কবি বললেও জাতীয় কবির মর্যাদা আমরা কতখানিইবা অক্ষুণ্ন রাখতে পেরেছি! নজরুলের প্রধান বাণী ছিল 'উন্নত মম শির'। বর্তমানে নজরুলের এই মন্ত্র আমরা কতজন সাধারণ মানুষ বুকে ধারণ করতে পেরেছি? আমাদের পারিপাশ্বর্িকতা ও রাজনৈতিক প্রভাব নজরুলের এই মূলমন্ত্র থেকে আমাদের সরিয়ে রেখেছে। আমরা এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারিনি। আমাদের চিন্তাধারা ও মনের অনেক লুকানো ইচ্ছা এখনো মনেই রয়ে গেছে। এত কিছুর পরও নজরুলগীতি রয়ে গেছে। শক্তিটা এখানেই।
ইয়াসমিন মুশতারি
বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ জাঁকজমকভাবে নজরুলকেন্দ্রিক বিশেষ দিনগুলো পালন করা হয়। আর তাই কোনোভাবেই বলা চলে না, আমাদের দেশে নজরুলচর্চা কম হচ্ছে। আমরা যখন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে অংশ নিই, সেখানে অনেক নতুন শিল্পী নজরুলের সুর ও বাণী ঠিক রেখে ভালো গান করছে। এটা আমাদের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। শুধু তরুণরাই নয়, অনেক মধ্যবয়সী শিল্পীরাও এ সময়ে এসে নজরুলগীতির ওপর জোর দিচ্ছে। এবারের নজরুলজয়ন্তীতে আমি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছি। সারা দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার ফোন এসেছে। শুধু আমি নই, এই দিনে অনেকেই নজরুল উৎসবকে তার কণ্ঠে ধারণ করেছে। টিভি চ্যানেলগুলোও সঠিকভাবে তুলে ধরেছে নজরুলের বিশালতাকে। সব মিলিয়ে নিশ্চিন্তে বলা যায়, নজরুলচর্চা থেমে নেই। বয়ে চলছে তার আপন গতিতে।
খায়রুল আনাম শাকিল
কাজী নজরুল ইসলাম অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তার সুর-বাণীর শুদ্ধতা নষ্ট হতে শুরু করেছে। যথেষ্ট নষ্ট হয়েছেও। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এ কাণ্ড করেছে। কিন্তু সে পরিস্থিতির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। নজরুল একাডেমি নজরুলের শুদ্ধ গানের রেকর্ড সংগ্রহ করেছে। পরবর্তীতে নজরুল ইনস্টিটিউটও কাজ করেছে। সব মিলিয়ে আমরা নজরুলগীতির ১৫০০ রেকর্ড পেয়েছি। এগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য শুদ্ধ গানচর্চায় বেশ কাজে আসছে। তাই বলা যায়, নজরুলচর্চা আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। আর যতটুকু হচ্ছে শুদ্ধভাবেই হচ্ছে। হয়তো ১০০ ভাগ ঠিকঠাক হচ্ছে না, কিন্তু ৮০ ভাগ তো হচ্ছে। বাকি ২০ ভাগও একদিন নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ দিন যত গড়াচ্ছে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। প্রচুর শিক্ষার্থী নজরুলগীতির। এ থেকে আমরা শ্রোতার পরিমাণও টের পাই। তাই সামনে শুভ সময় আসছে।