কিছু গান শুনলে বোঝা যায়, কেন সেগুলি ‘হিট' বা জনপ্রিয়। সে বিষয়ে সন্দেহের তেমন অবকাশ নেই। কিন্তু এর কারণ কী? মস্তিষ্ক গবেষক হিসেবে ভিনসেন্ট চেউং-এর মনে সেই প্রশ্ন জেগেছিল। তিনি জানতে চেয়েছিলেন সংগীতপ্রেমী হিসেবে কিছু গান কেন তার হৃদয় এত স্পর্শ করে।
চেউং ও তার টিম আমেরিকার জনপ্রিয় সংগীত চার্টের ৭৪৫টি হিট গান বিশ্লেষণ করেছে। একটি সফটওয়্যার প্রত্যেক কর্ড পরীক্ষা করে দেখেছে, সেটি সংগীতের প্রেক্ষাপটে কতটা বিস্ময়কর বা প্রত্যাশিত ছিল। তারা সুর ও কথা ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের শুধু কর্ডের বিন্যাস শুনিয়েছেন। শুনে তারা পছন্দ-অপছন্দের কথা জানিয়েছেন।
সে সময় মস্তিষ্কের উপর বেশ চাপ পড়ে বৈকি। কারণ গান শোনার সময়ে মস্তিষ্কের সেই সব অংশ সক্রিয় হয়, যেগুলি ধ্বনি, আবেগ, স্মৃতি ও প্রাপ্ত জ্ঞান বিশ্লেষণ করে। সেই পরীক্ষায় দেখা গেল, যে মানুষ দু'টি ক্ষেত্রে কর্ডের বিন্যাস বিশেষভাবে পছন্দ করেছেন, যেগুলির সঙ্গে তাদের গভীর প্রত্যাশা জড়িয়ে রয়েছে।
ভিনসেন্ট চেউং বলেন, ‘প্রথম ক্ষেত্রে দেখা গেল, যে কর্ডের বিন্যাস প্রত্যাশার সঙ্গে বেশ মিলে গেলে বেশিরভাগ মানুষ এমনকি অপ্রত্যাশিত কর্ডও পছন্দ করেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আবার দেখা গেল, যে কর্ডের বিন্যাস গানের বাকি অংশ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করলে তারা প্রত্যাশিত কর্ড শুনলে খুশি হন।’
অর্থাৎ সংগীত উপভোগ করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আমাদের প্রত্যাশা নিয়ে খেলা করা হয়। নিপূণতার সঙ্গে সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে আমরা বরং খুশি হই। তাহলে কি আধুনিক কম্পিউটার এমন ফলাফলের ভিত্তিতে হিট ফর্মুলা সৃষ্টি করতে পারবে না?
সংগীত বিজ্ঞানী ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্টেফান বাউমান মনে করেন, হিট গানে যেসব কর্ড ব্যবহার করা হয়, সেগুলি খুব সহজ-সরল হয়। ভিনসেন্ট চেউং-এর মতো বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে। সি-ডিউর কর্ড সবচেয়ে ঘনঘন শোনা যায়, অন্যদিকে জ্যাজ সংগীতের কড়া পিচ খুবই বিরল। তাছাড়া কর্ডের জনপ্রিয় কিছু প্রোগ্রেশন বা ক্রমবৃদ্ধিও রয়েছে।
একটি ব্যান্ড নিজেদের এক সৃষ্টির মধ্যে সেই ধাঁচের প্রায় ৫০টি হিট গান অন্তর্গত করেছে। সেই মিউজিক ভিডিওতে এমন ছকে বাঁধা ফর্মুলা নিয়ে পরিহাসও করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক হিসেবে ড. স্টেফান বাউমান মনে করেন, ‘অনেক কাল ধরেই হিট ফর্মুলার সন্ধান চলছে। ‘হিট সং বিজ্ঞান'-কে কেন্দ্র করে কিছু কোম্পানিও পত্তন করা হলেও সেই প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে। কারণ শেষ পর্যন্ত কোনো সংগীতকে এমন সাংগীতিক প্রেক্ষাপটে ফেলা হয়, যেগুলি দুই-তিন বছরের আগের মেজাজের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন।’
মোটকথা পপ মিউজিক যুগের ভাবধারা তুলে ধরে। আকর্ষণীয় সাউন্ড বা ধ্বনি এবং চতুর বিপণন কৌশল হিট গান সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালগোরিদম নির্দিষ্ট কোনো স্টাইল ও শিল্পীকে ‘কুল' অথবা ‘হট' করে তুলতে পারে।
যে সব গানের মধ্যে ‘ইউ’ বা ‘তুমি' শব্দটি বার বার শোনা যায়, সেগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়। অনেক কিছু সম্ভব হলেও সাফল্যের কোনো গ্যারেন্টি নেই। কারণ প্রবণতা ও জনপ্রিয়তার বিষয়টি অনিশ্চয়তায় ভরা।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন