দেশে ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে কীটনাশকের ব্যবহার। খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক পরিবর্তন না এলেও ২৫ বছরে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। পাঁচ বছরেই বেড়েছে ৮১ শতাংশের বেশি। পোকামাকড় দমনের নামে বছরে প্রায় ৪০ হাজার টন বিষ ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতিতে, যা ঢুকছে খাদ্যচক্রে। এতে মানুষ ক্যানসারসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। ইতোমধ্যে অনেক ধরনের মাছ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী হারিয়ে গেছে দেশ থেকে।
সম্প্রতি রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বার্ক) মিলনায়তনে ‘কীটনাশকের ঝুঁকি নিরসন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, দেশে ১৯৫৩ সালে প্রথম কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭২ সালে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার টন, সেখানে ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, ৫০ বছরে বেড়েছে ১০ গুণ। ধান, শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনে এসব কীটনাশক ব্যবহৃত হয়।
সেমিনারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল মুঈদ বলেন, কীটনাশকের ব্যবহার পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য হলেও এটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কীটনাশক ব্যবহারের কারণে অনেক রোগবালাইয়ের জন্ম হচ্ছে। কৃষি খাতে উন্নতির ফলে সারা বছর শাকসবজি পাওয়া গেলেও সেগুলো কতটুকু নিরাপদ, তা নিয়ে ভাবতে হবে। ক্যানসারে আক্রান্ত ৬৪ শতাংশই কৃষক। তারা কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোয় মনোযোগ দিতে হবে। প্রাকৃতিক বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প সমন্বয়ক দিলরুবা শারমিন জানান, ১৯৯৭ সালে দেশে কীটনাশকের ব্যবহার ছিল ১১ হাজার ৩৬৭ টন। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৩৯ হাজার ২৪৩ টনে উন্নীত হয়। অর্থাৎ ২৫ বছরে ব্যবহার বেড়েছে ২৭ হাজার ৮৩৬ টন। গত পাঁচ বছরেই বেড়েছে সাড়ে ৮১ শতাংশ। দেশে এখন ৫ হাজার কোটি টাকার কীটনাশকের বাজার রয়েছে। বর্তমানে মাছ চাষেও কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে। শুঁটকি তৈরিতে প্রচুর কীটনাশকের প্রয়োগ হচ্ছে। এটা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।