বাসা থেকে ফিল্ম স্কুল ১৮ মাইল। প্রথমে ৫/৬ মিনিট হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে যাই। প্রায়ই সময়মতো বাস আসে না। তখন ১০/১২ মিনিটের অপেক্ষা। তারপর Q40 বাসে চেপে স্টেশন গমন। তারপর ৩ খানা ট্রেন পরিবর্তন করে ব্যাটারি পার্ক। ‘বাওলিং গ্রিন’ স্টেশন থেকে বের হওয়া মাত্রই গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এর বাস কন্ডাকটারদের মতো লিবার্টি আইল্যান্ড আর স্ট্যাটিন আইল্যান্ডে নেওয়ার ফেরি’র লোকজনেরা ডাকাডাকি করতে থাকে। তাদের অবজ্ঞা করে খাঁটি নিউইয়র্কারের মতো এককাপ কাপাচিনো হাতে নিয়ে হাঁটা দেই। আরও ২/৩ মিনিট হন্টনের পর নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি ক্যাম্পাস।
যাওয়ার পথে সব মিলিয়ে দেড় থেকে পৌনে দুই ঘণ্টার যাত্রা! ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আরো দেড়/দুই ঘণ্টা- রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা! এখন আর ক্লান্ত লাগে না। হাতে ফোন আর ঘাড় নিচু করে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষ দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়। ট্রেনের কামরায় উঠে গান গেয়ে কিংবা শারীরিক কসরত দেখিয়ে ভিক্ষা করা মানুষগুলোর পারফরমেন্স খুব মনোযোগ দিয়ে দেখি। ভালোই লাগে! কখনও বা এক ডলারের একখানা নোট তাদের হাতে দেই। সঙ্গে ক্যামেরার বড় বাক্স আর গলায় ‘New York Film Academy’র আইডি কার্ড দেখে একদিন একজন গল্প জুড়ে দিয়েছিল। ভারতীয় নায়িকাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা নেই দেখে হতাশ হয়ে চুপ মেরে গেলেন।
ফিরতি পথে আমার গন্তব্য একদম শেষ স্টেশনের আগেরটা! এক এক করে ব্যস্ত মানুষগুলো ঘরে ফেরে। আমি ঘণ্টা বাজানোর আগেই কিচিরমিচির শব্দে আমার পুত্রদ্বয় দরজা খুলে দাঁড়ায়। দুই জোড়া প্রসারিত হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার আধাবেলার ক্লান্তি শুষে নেয়। আমি আবারও চিৎকার করে পৃথিবীকে জানাই- ‘জীবন সুন্দর... অসহ্য রকমের সুন্দর...’
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/শফিক