১৬ এপ্রিল, ২০২১ ১৪:৪৭

স্টেজ ৪ লকডাউনে পিপিই পরে কাজে আসলাম কম্প্রোমাইজ্ড ইমিউনিটি নিয়ে

তারান্নুম আফরীন

স্টেজ ৪ লকডাউনে পিপিই পরে কাজে আসলাম কম্প্রোমাইজ্ড ইমিউনিটি নিয়ে

তারান্নুম আফরীন

সাধারণত আমি নিজের কষ্ট, দুঃখ, বেদনা, হতাশা শেয়ার করিনা। আপন কারো কাছেও না। ইন পার্টিকুলার যখন কষ্টকর সময় গুলো পাড়ি দেই চেষ্টা করি একদম চুপচাপ একা বৈতরণী বাইতে। আজকে ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি কেমন ছিল আমার প্যান্ডেমিক সময়গুলো। লকডাউনে যারা ভীষণভাবে হতাশায় আছেন বাংলাদেশে, তাদের হয়তো একটু হলেও আশা জাগবে মনে।

খুব ভালো করে মনে আছে গত মার্চের দিনগুলো। আসবাহ'র বাবা চাকরি হারালো ২৭ মার্চ। ওদের পুরো সিটি অফিসটাই বন্ধ হয়ে গেলো! বললাম আলহামদুলিল্লাহ আমার চাকরি আছে সো কোনোমতে চলে যাবে। কিন্তু আমি পার্ট টাইম হলাম তার দুই সপ্তাহ পরে। তারপরও নিজেকে গুছিয়ে রাখলাম। ঠিক এর দু সপ্তাহ পরে ইমার্জেন্সিতে হাসপাতালে ভর্তি হলাম ক্রিটিক্যাল স্টমাক সার্জারি'র জন্য। এমনই একটা বাজে ইনফেকশন ছিল যে ৬ সপ্তাহ আই ভি এন্টিবায়োটিক্স চললো। একদম একা হাসপাতালে পড়ে থাকলাম। মহামারীর কারণে আসবাহ'র বাবা পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে পারলোনা আমাকে দেখতে। রোজার মাস চলছিল। সবাই যেখানে এক দিন করে রোজা থাকে সেখানে আমি দিনের পর দিন মুখে খাবার বা পানি খাবার অনুমুতি পেলাম না। স্যালাইন আর প্রোটিন ফুড টিউবে তাও খুবই সীমিত ডোজে। 

এতক্ষন যারা ভাবছেন, তাতে কি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার আছে না! আছে, তারা খাইয়ে পরিয়ে অনেককেই বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমরা সেই দলে পড়লাম না। আমাদের দুজনের ইনকাম ঐ অর্থ বছরের জন্য অলরেডি হাই ছিল সেই ক্রাইটেরিয়া মিট করার জন্য। বর্ডার লকড; দেশ থেকে টাকা আনাও সহজ না। আলহামদুলিল্লাহ দিন চলে গেলো। কিভাবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় ডাক্তার বলে দিলো ৪ ঘণ্টা করে দিনে আর সপ্তাহে ৩ দিন কাজ করবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। মাথা নেড়ে বাড়ি আসলাম। বাড়ি আসার পরদিন বসের ফোন। কুশল জিজ্ঞেস করে বললেন ল্যাব খুবই বিজি আমি চারদিন করে কাজ করতে পারবো কিনা। অনেক মানুষের জব নেই তখন তাই ভাবলাম জবটা ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। শরীরের সব কষ্ট গোপন করে লেগে গেলাম কাজে। তার এক মাস পরে আবার ফুল টাইম হলাম। মেলবোর্ন তখন স্টেজ ৪ লকডাউন আর আমি তার মধ্যে পিপিই পরে কাজে আসলাম কম্প্রোমাইজ্ড ইমিউনিটি নিয়ে প্রতিদিন। আল্লাহ যে কিভাবে আমাকে শক্তি দিলেন ঘরে বাইরে সমানে কাজ করার তা শুধু আল্লাহই জানেন। কিভাবে যে বারকাত দিলেন মানুষের পাশেও দাঁড়ানোর তাও আমি জানি না! তাই মনে সাহস রাখুন সুদিন আসবেই। নিজের যা আছে সীমিতভাবে খরচ করুন। পাশের মানুষটির, পরিবারটির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন, সোশ্যাল ডিস্টেনসিং আর মাস্কের কোনো বিকল্প নেই। তার সঙ্গে ব্রিদিং এক্সারসাইজ, পরিমিত ঘুমানো ইমিউনিটি বুস্ট করতে সাহায্য করবে। আল্লাহ আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন।

লেখক: সংগীতশিল্পী, ল্যাবরেটরী ম্যানেজার, চার্লস পারসনস, অস্ট্রেলিয়া।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর