২৮ মে, ২০২১ ১৪:৫০

নিরাপদ মাতৃত্ব ও গর্ভকালীন সেবা

অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী

নিরাপদ মাতৃত্ব ও গর্ভকালীন সেবা

আজ ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ "করোনাকালে গর্ভকালীন সেবা নিন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধ করুন"। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যান্য বছর দিবসটি নানা আয়োজনে উদযাপিত হলেও এবার করোনার কারণে সীমিত আকারে পালন করা হবে।

নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে সকল নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণই হল নিরাপদ মাতৃত্ব। 

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ ‘মা’। বলা হয়ে থাকে একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। বংশানুক্রম ধারা টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব প্রাকৃতিকভাবেই নারীর ওপর তার মাতৃত্বের মধ্য দিয়ে বর্তেছে। ১৯৮৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে উন্নয়ন-সহযোগীদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বিষয়টি পর্যালোচনা করে এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো নিরাপদ মাতৃত্বকে নারীর অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।

অন্যান্য দেশ বিভিন্ন তারিখে দিবসটি পালন করে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। তখন থেকেই বাংলাদেশে এই দিবসটি পালন হয়ে আসছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের চেয়ে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে নামিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বর্তমানে দেশে প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে ১৭২ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে ১৭৬ জন। বর্তমানে ৩৭ ভাগ মা কমপক্ষে চারটি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করে থাকে। দেশে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৪৭ শতাংশ। প্রসবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার ৩২ শতাংশ।

মাতৃত্বের অধিকারের ব্যপারে বলা যায়, একজন নারী কত দিন কোন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন বা আদৌ ব্যবহার করবেন কি না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র তারই। নারী আদৌ সন্তান নেবেন কি না বা কবে নেবেন, কজন নেবেন সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও তিনি সংরক্ষণ করেন। একজন গর্ভবতী মহিলা গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসবের জন্য যাবতীয় সেবা এবং প্রসব-পরবর্তী সেবা পাওয়ার সব অধিকার রাখেন। 

গর্ভকালীন সেবা ও সন্তান জন্মদানের ব্যাপারে নারী মাতৃ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে তবেই এ দিবসের সার্থকতা। গর্ভকালীন মাতৃ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এখন কেবল মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় নয় সুস্থ শিশুর জন্যও আবশ্যক। নিচের বিষয়গুলো আমাদের সকলের অবশ্যই গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে পরিবারের সবাইকে সহানুভূতিশীল হতে হবে। গর্ভকালীন সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রসব পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের প্রতিমাসে অন্তত একবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। গর্ভকালীন সময়ের বিপদ চিহ্ন সমূহ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা থাকতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সমূহ হতে বিরত থাকতে হবে। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রসব কালীণ সময়ের প্রয়োজনীয় অর্থ থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ের পূর্ব পস্তুতি রাখতে হবে। প্রসব কালীন সময়ের যে কোন জটিলতা দেখা মাত্র ডাক্তার অথবা নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। 

নিরাপদ প্রসব সুস্থ শিশুর জন্মের পূর্ব শর্ত, সুস্থ শিশু আগামী পৃথিবীর কর্ণধার। মনে রাখতে হবে, নিরাপদ প্রসব নারীর প্রাপ্য ও অধিকার।

লেখক: প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ইউনিট প্রধান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।  

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর