সন্ত্রাসীদের কোন দল বা রাষ্ট্র নেই। বিশ্বব্যাপী তারা বিচ্ছিন্নভাবে হামলা করেই চলছে। বিশেষ করে আল কায়েদার নেতৃত্বেই বিশ্বে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও সোমালিয়া সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন এর এক প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের চোখে বিশ্বের বিপদজনক দশ সন্ত্রাসীর নামে ফুটে উঠেছে।
আয়মান আল জাওয়াহিরি: ২০১১ সালে মার্কিন এক বিশেষ অভিযানে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়। এরপর সন্ত্রাসী সংগঠনটির মূল দায়িত্বে আসেন ৬২ বছর বয়স্ক আয়মান আল জাওয়াহিরি। বিশ্বব্যাপী তার নেতৃত্বেই আবার আল কায়েদাকে সুসংগঠিত করেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন।
নাসির আলউয়াশি: আফগানিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন নাসির আল উয়াশি (৩৬)। তিনি সন্ত্রাস বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার দেশ ইয়েমেনে ও আল কায়েদা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। ইয়েমেনে মার্কিন দূতাবাস, নিরাপত্তা সংস্থা ও বিদেশি পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় নাসির আল উয়াশি।
ইব্রাহিম আল আসিরি: যুক্তরাষ্ট্রের চোখে দশ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর একজন হচ্ছে ইব্রাহিম আল আসিরি (৩১)। তিনি সৌদি আরবের নাগরিক। তার বিশেষ যোগ্যতা হচ্ছে বোমা তৈরিতে তিনি দক্ষ। সৌদি আরবের সন্ত্রাস বিরোধী বিভাগের প্রধানকে হত্যার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন আসিরি।
আহমেদ আবদি গৌড়নে: আহমেদ আবদি গেৌড়নে (৩৬) একজন সোমালিয়ান। তিনি সোমালিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল সাবাবের প্রধান কর্ণধার। তার অনুসারীরা গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির একটি শপিংমলে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ওই হামলায় অন্তত ৬৭ জনের প্রাণহানী ঘটে। আবদির সন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করে।
মোকতার বেলমোকতার: বিশ্বের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের মধ্যে মোকতার বেলমোকতার অন্যতম। তিনি আলজেরিয়ার নাগরিক। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিস্তারে রয়েছে তার যথেষ্ট ভূমিকা। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় যোগাযোগ। যুক্তরাষ্ট্র সরকার মোকতারের সন্ধানে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
আবু মোহাম্মদ আল জুলানি: বিপদজনক দশ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম রয়েছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবু মোহাম্মদ আল জুলানির। ২০১২ সালে জুলানি আল নুসরাহ নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কায়েম করেন। যার সদস্য সংখ্যা রয়েছে দশ হাজার। এই গোষ্ঠীটি আল কায়েদার সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। আত্মঘাতী বোমা তৈরিতে তারা সক্ষম।পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলাই তাদের লক্ষ্য।
আবু বকর আল বাগদাদি: ইরাক ও সিরিয়ার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন আবু বকর আল বাগদাদি। ইরাকে শিয়াদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় বাগদাদির ইন্ধনেই। এছাড়া আত্মঘাতি বোমা হামলার সঙ্গে বাগদাদি নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ কুখ্যাত সন্ত্রাসীর সন্ধানে দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
সিরাজ উদ্দিন হক্কানি: আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে সাধারণত হক্কানি নেটওয়ার্ক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে। কাবুলে সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে হক্কানি জড়িত। হোটেলে হামলা এবং সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণই তাদের লক্ষ্য। আলকায়েদা ও তালেবানের সঙ্গ রয়েছে এদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ২০১২ সালে ওবামা প্রশাসন হক্কানিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার হক্কানির খোঁজে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
আবু বকর সেকু: গত চার বছর ধরে নাইজেরিয়ায় বোকো হারামের নেতৃত্ব দিয়েছে আবুবকর সেকু। পশ্চিম আফ্রিকার এই গোষ্ঠীটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। ২০১০ সালে আবুজায় জাতিসংঘ অফিস লক্ষ্য করে এক আত্মঘাতী হামলা চালায় বোকো হারাম। এতে অন্তত ২৩ ব্যক্তির প্রাণহানী ঘটে। ২০১২ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেকুর খোঁজে সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
দোকু উমারুব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ২০১০ সালে দোকু উমারুবকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি চেচনিয়ার নাগরিক। উমারুব তার অনুসারীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্যে সহিংসতা চালানোর জন্য প্রেরণা জোগাতেন। এরি ধারাবাহিকতায় উমারুবের অনুসারীরা ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে মস্কোর ডেমোডেডোবে বিমান বন্দরে বোমা হামলা চালায়। এতে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কুখ্যাত এ সন্ত্রাসীর সন্ধানে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।