১৮১৪ সালের ২৪ আগস্ট। ব্রিটিশ সৈন্যরা ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে আসছে যুক্তরাস্ট্রের প্রাণকেন্দ্র ওয়াশিংটনের দিকে। প্রতিহত করতে সর্বাত্মক ক্ষমতা প্রয়োগ করল বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশটি। কিন্তু পারলো না, সাড়াশি আক্রমনে ব্রিটিশ সেনারা নিমিষেই দখল করে নিল ওয়াশিংটন। শুধু নিয়ন্ত্রন নিয়েই ক্ষান্ত হল না। আগুন ধরিয়ে দিল হোয়াইট হাউজে। মুহুর্তে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল আমেরিকার গর্ব ধুসর রঙের (বর্তমানে সাদা) ভবনটি। গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভবন জ্বালিয়ে দেওয়ার ২০০ বছর পূর্ণ হল। আর এ পূর্তি উপলক্ষে বীরত্বের গাথাসরূপ ঘটণাটি উদযাপনের একটি ছবি টুইটারে প্রকাশ করে ব্রিটিশ দূতাবাস। এতেই যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা মানুষের ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়ে ব্রিটিশ সরকার। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি সুরাহা করে ওয়াশিংটনের ব্রিটিশ দূতাবাস। সূত্র: বিবিসি।
জানা গেছে, ওই ঘটনার স্মরণে গত রবিবার ওয়াশিংটনের ব্রিটিশ দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ছবি প্রকাশ করে, যাতে দেখা যায় একটি কেকের মধ্যে হোয়াইট হাউসের মডেল ঘিরে আতশবাজি জ্বলছে। কেকের দুই পাশে রয়েছে দুই দেশের পতাকা। ব্রিটিশ দূতাবাস ‘উদযাপনের’ ওই ছবি প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি চার হাজারের বেশিবার রিটুইট হয়, সঙ্গে শুরু হয় সমালোচনা।
টুইটে বলা হয়, হোয়াইট হাউস পোড়ার ২০০ বছর পূর্তি এবার শুধু আতশবাজি দিয়েই। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টুইটারে ওই ছবি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে দুই ঘণ্টার মধ্যেই দুঃখ প্রকাশ করে আরও একটি টুইট করে ব্রিটিশ দূতাবাস। এতে বলা হয়, আগের টুইটের জন্য দুঃখিত। আমরা ঐতিহাসিক একটি ঘটনা স্মরণ করার পাশাপাশি দুই দেশের দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উদযাপন করতে চেয়েছি মাত্র।
আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এ পর্যন্ত ওই একবারই কোনো বিদেশি বাহিনী ওয়াশিংটনের দখল ও কর্তৃত্ব নিতে পেরেছিল বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইতিহাসে ‘ওয়ার অব ১৮১২’ নামে পরিচিত ওই যুদ্ধের মেজর জেনারেল রবার্ট রসের নেতৃত্বে ওয়াশিংটন দখল করে ব্রিটিশ বাহিনী। এরপর হোয়াইট হাউসের পাশাপাশি ক্যাপিটল ভবন, ওয়াশিংটন নেভি ইয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি সরকারি কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয় তারা। এ সময় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রাসাদটি। এরপর তিন বছর লেগে যায় বাড়িটি নতুন করে তৈরি করতে, সঙ্গে বেশ কিছুটা পরিবর্ধনও। সম্ভবত এ সময়ই পাকাপাকিভাবে এ প্রাসাদের রং ধূসর থেকে ধবধবে সাদা করা হয়। সেই থেকে নাম হয় হোয়াইট হাউস। এর আগে হোয়াইট হাউসের অনেকগুলো নাম ছিল। প্রেসিডেন্টস প্যালেস, প্রেসিডেন্টস হাউস, এক্সিকিউটিভ ম্যানশন ইত্যাদি। যদিও ১৯০১ সালে থিওডোর রুজভেল্ট তার ব্যবহূত নিজস্ব কাগজপত্রে, ব্যক্তিগত প্যাডে হোয়াইট হাউস নামটি ছাপিয়ে ব্যবহার করার পর থেকেই সরকারিভাবে এ নামটি চালু হয়।