বাংলাদেশে প্যাশান ফলের চাষ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যা-জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যা-জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাবরেটরিতে জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশি 'প্যাশান' ফলের জাত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের গবেষণা চলছে। প্যাশান ফল একটি লতানো উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম 'প্যাসিফ্লোরা ইডিউলিস'। বাজারে শরবত হিসাবে যে ট্যাঙের প্রচলন রয়েছে, এই ফল থেকেই সেটি তৈরি করা হয়।
বিদেশি এই ফলটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে 'লতা বেল' এবং বাংলাদেশে 'ট্যাঙ' ফল নামে পরিচিত। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় অপেক্ষাকৃত ছায়াযুক্ত স্থানে এ ফলটি ভালো জন্মে। ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে এবং আর্জেটিনায় এ ফলটি বেশ জনপ্রিয়। ল্যাটিন আমেরিকা ছাড়াও সমগ্র আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুস্বাদু এই ফলটি জন্মাতে দেখা যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যা-জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নোসা হলের আঙ্গিনায় প্যাশান ফলের আবাদ শুরু করেছেন।
ড. সোহায়েল জানান, তিনি এ হলের আঙ্গিনায় প্যাশান ফলের চাষ হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেন। এরপর হঠাৎ এ ফলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে বাগানে প্রচুর ফল ধরেছে। প্রতিনিয়তই হলের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এ বাগানের যত্ন নেন।
ড. সোহায়েল আরও জানান, প্যাশান ফল সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকার হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ এবং পরিণত অবস্থায় হলুদ বা গাঢ় বেগুনি রঙ ধারণ করে। এ ফলটির স্বাদে রয়েছে মিষ্টি গন্ধ। পুরো ফলটি অসংখ্য বীজে পরিপূর্ণ এবং বীজের সঙ্গে লেগে থাকা শ্বাসই এর ফল হিসেবে খাওয়া হয়। এই ফলের পুষ্টিগুণ তিনি বলেন, এতে প্রোটিন, প্রো-ভিটাসি এ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, লৌহ, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ডায়াটারি ইত্যাদি উপাদান রয়েছে।
ড. সোহায়েল জানান, প্যাশান ফল উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। অ্যাজমা রোগীদের জন্যও এই ফলটি বিশেষভাবে কার্যকর। বিভাগের ল্যাবরেটরিতে এ ফলের জাত উন্নয়নের যে চেষ্টা চলছে, তা সফল হলে বাণিজ্যিকভাবে সারা দেশব্যাপী এ ফলের চাষ হতে পারে।
এদিকে, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের আঙ্গিনায় শুধু প্যাশান ফলই নয়, পরীক্ষামূলক হিসেবে অ্যাভোকাডো, রামবুটান, পিচ, আলুবোখারা, ড্রাগন ইত্যাদি ফলের চাষ করা হয়েছে। এখানে দেশীয় বিরল প্রজাতির বিলিম্বি, কাউ, তৈকর, অড়বরই ফলের চাষও করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ফল নিয়ে ক্যাম্পাসবাসীর আগ্রহের অন্ত নেই। প্রতিদিন অনেকেই বিদেশি এসব ফল দেখতে নওয়ার ফয়জুন্নেসা হলের বাগানে আসছেন।