নাম ক্লডিও ভিয়েরিয়া ডি ওলিভেরিয়া। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে ব্রাজিলের মোন্টে সান্তোতে তার জন্ম। তিনি যেদিন এই সুন্দর পৃথিবীতে আগমন করছিলেন, সেদিন তার পরিবারের সদস্যদের মনে কোনও হাসি ছিল না। চিকিৎসকরা তার মাকে বলেছিলেন, অনাহারে রেখে ওকে মেরে ফেল, ও বাঁচবে না।
কিন্তু মমতাময়ী মা কি আর তা করতে পারেন। সবার কথাকেই তুচ্ছ করে দিয়ে নিজ সন্তানকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। সেই সন্তানই আজ বিশ্ববাসীর কাছে প্রেরণার উৎস।
বিকলাঙ্গ জয় করা ক্লডিও এখন সবার অনুপ্রেরণা
যে কারণে ক্লডিওকে মেরে ফেলতে বলা হয়েছিল সেটি হচ্ছে, ক্লডিও শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ। তবে সেটি স্বাভাবিক কোনও বিকলঙ্গতা নয়। তার শরীরের কোনও অঙ্গই স্বাভাবিক নয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, তার মুখটা হচ্ছে শরীরের পেছনের দিকে ঘুরানো।
শারীরিক অবয়বে বিকলাঙ্গ হলেও ক্লডিও কাজেকর্মে নিজেকে বিকলাঙ্গ মনে করেন না। তিনি এখন মুখে কলম ধরে লেখা, ফোন ও কম্পিউটার ব্যবহার করা সহ আরও অনেক কাজ করতে পারেন। বাইরে বেরোনোর জন্যে তার আলাদা জুতাও তৈরি করা আছে।
ক্লডিও বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করতাম। আমি কারও ওপর নির্ভর করা একেবারেই পছন্দ করি না। আমি হিসাবরক্ষণ, গবেষণা ও পরামর্শ দেয়ার কাজ করি।
বিকলাঙ্গ জয় করা ক্লডিও এখন সবার অনুপ্রেরণা
তিনি আরও বলেন, আমি কিভাবে টেলিভিশন ও রেডিও চালু করতে হয়, কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়, কি করে ফোন হাতে নিতে হয় তা শিখেছি।
ক্লডিও ফেইরা ডি সান্তানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্ট্যান্টের উপর পড়াশোনা করেছেন। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে প্রায়ই মানুষকে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন।
তিনি বাইরে গিয়ে কোনও হুইলচেয়ারে বসতে পারেন না। এজন্য তিনি তার মাকে স্কুলে পাঠাতেন। তার মা অন্যদের সাথে বসে ক্লাস করে এসে তাকে শেখাতেন। তারপরও তিনি শিক্ষার আলো থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাননি।
বিকলাঙ্গ জয় করা ক্লডিও এখন সবার অনুপ্রেরণা
সম্প্রতি চিকিৎসকরা ক্লডিওর এ শারীরিক সমস্যাকে ‘কনজেনটিয়াল আরথ্রোগ্রিপোসিস’ নামের একটি রোগ বলে চিহ্নিত করেছেন।
ছোটবেলায় তাকে ধরে এখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু তার বয়স যখন আট বছর তখন তিনি নিজের হাঁটুর ওপর ভর করে হাঁটার অভ্যাস করেন।
ক্লউডি বলেছেন, আমি বিশ্বের সাথে নিজেকে মেলাতে সক্ষম হয়েছি। এখন মনে হয়, আমিও অন্যদের মত একজন। আমি কখনও নিজেকে ভিন্ন চোখে দেখি না। আমি সব অনুষ্ঠানেই এভাবে মানুষের সামনে কথা বলি। তিনি বলেন, আমি এখন একজন ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক স্পিকার। আমাকে বিশ্বের সবাই আমন্ত্রণ করে।