দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিয়ে খুবই জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান। তবে ভারতে রয়েছে এর ভিন্ন আঙ্গিক ও গুরুত্ব। সেখানে এটি শুধু অনুষ্ঠানই নয়, বরং এর চেয়েও বেশি কিছু। বিয়ে উপলক্ষ্যে এখানকার পরিবারগুলোতে অন্যরকম একটা আমেজ তৈরি হয়। এই একটা দিনের জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করে থাকে দুটো পারিবার। কিন্তু যদি কোন কারণে মতের বা মর্যাদার অমিল হয় তখন দেখা দেয় ঘোরতর বিপত্তি। শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে বিচ্ছেদে। আর এই পরিণতি ঠেকাতেই উন্মেষ ঘটেছে 'বিয়ে গোয়েন্দার'।
জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নেওয়ার বিষয়টি প্রচলিত রয়েছে। আর বর্তমানে পাত্র-পাত্রীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে আত্মীয়স্বজন বা ঘটকই নয়, গোয়েন্দাদের শরণাপন্ন হচ্ছেন ভারতীয়রা। এ প্রবণতা দেশটিতে ক্রমশ বেড়েই চলছে। এমনকি আইনজীবীরাও বিয়ে সম্পর্কিত কোন মামলার ক্ষেত্রে এসব গোয়েন্দাদের শরনাপন্ন হন। বিয়েবিচ্ছেদ, দ্বন্দ্ব্ব-কলহ, পারস্পরিক অবিশ্বাসসহ নানা সাংসারিক জটিলতার কারণে দেশটিতে বিয়ের আগেই পাত্র-পাত্রীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার প্রয়োজনীয়তা ও প্রবণতা দুটোই বাড়ছে। এ প্রয়োজন মেটাতে সেখানে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।
শুধু বিয়ের আগেই নয়, বিয়ের পরও গোয়েন্দা দরকার হচ্ছে অনেকের। বিয়েবিচ্ছেদকালীন আইনি ঝামেলাসহ পারস্পরিক বিশ্বাস-অবিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া করা হচ্ছে গোয়েন্দাদের। এক্ষেত্রে নারী গোয়েন্দার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তথ্য নেওয়া বা পরিবারের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারী গোয়েন্দারা সহজেই প্রবেশ করতে পারায় এ পেশায় তাদের গুরুত্ব বাড়ছে।
৫৩ বছর বয়সী তারালিকা লাহিড়ী বিবিসিকে জানান, ১৯৮৭ সালে তিনি এ পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই এ পেশায় যোগ দেওয়া লাহিড়ী ১৯৯৪ সালে এনডিসিসি (ন্যাশনাল ডিটেক্টিভ অ্যান্ড কর্পোরেট কনসালটেন্টস) নামে একটি বেসরকারি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। মাত্র পাঁচ হাজার ডলার বিনিয়োগে শুরু করা ওই প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে দিলি্লর একটি অন্যতম বেসরকারি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিয়ের আগে ছাড়াও বিয়ে পরবর্তী বিষয়েও গোয়েন্দাবৃত্তি করে থাকেন তারা। লাহিড়ীর ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৫ জন নারী কর্মরত রয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যামেরা ও রেকর্ডার ছাড়াও তথ্যের জন্য নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়।
পাত্র-পাত্রীদের কোন বিষয়গুলো অভিভাবকরা জানতে চান- এ ব্যাপারে লাহিড়ী বলেন, তাদের পুরনো সম্পর্ক, উপার্জন ও পারিবারিক ইতিহাসই বেশিরভাগ সময় জানতে চাওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এমনকি দেশের বাইরেও আমাদের ডাকা হয়। কিছুদিন আগেই এক আমেরিকান প্রবাসী এক ভারতীয় তার স্ত্রীর ওপর নজরদারি করতে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। ভারতে বিয়েবিচ্ছেদের পরিমাণ দিনদিনই বাড়ছে। আর এটি রুখতে বাড়ছে বিয়ে গোয়েন্দার পরিমাণ। বিবিসি।