মানুষ আর পিঁপড়ার ওজন সমান! সম্প্রতি এক টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ক্রিস প্যাকহ্যামের মুখে এ মন্তব্য শুনে প্রথমে অবাক হয়েছিলেন দর্শকরা। তিনি জানান, যদি পৃথিবীর সমস্ত পিঁপড়ার ওজন নেয়া যায়, তাহলে তা বিশ্বের সমগ্র মানবজাতির ওজনের চেয়ে কম হবে না।
প্যাকহ্যাম এ কথাটা বলেছিলেন ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত 'জার্নি টু দ্য অ্যান্টস' বই থেকে। লেখক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড ও উইলসন এবং জার্মান প্রাণীতত্ত্ববিদ বার্ট হোয়েলডবলার সেখানে এমনই দাবি করেন।
ব্রিটিশ পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ সি বি উইলিয়ামস একদা গণনা করে জানিয়েছিলেন, সারা দুনিয়ায় মোট পোকা-মাকড়ের সংখ্যা প্রায় ১০০০০০০০০০০০। উইলসন ও হোয়েলডবলারের যুক্তি, এর মধ্যে এক শতাংশ পিঁপড়া। অর্থাৎ বিশ্বে জীবিত পিঁপড়ার সংখ্যা অন্তত ১০০০০০০০০০। প্রতিটি কর্মী পিঁপড়ার ওজন প্রজাতি বিশেষে সাধারণত ১-৫ মিলিগ্রাম হয়। যদি পৃথিবীর সমস্ত পিঁপড়ার একত্রে ওজন নেয়া যায়, তা হলে তা বিশ্বের মানবজাতির ওজনের সমান হবে।
উইলসন ও হোয়েলডবলারের মতে, সাধারণত মানুষের ওজন একটি পিঁপড়ার চেয়ে ১০ লক্ষ গুণ হয়। অর্থাৎ গড়পরতা মানুষের ওজন ৬২ কিলোগ্রাম ধরা হলে গড়পরতা পিঁপড়ার ওজন ৬০ মিলিগ্রাম দাঁড়ায়।
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গ বিশারদ অধ্যাপক ফ্রান্সিস র্যাটনিকস জানিয়েছেন, কিছু প্রজাতির পিঁপড়ার এমন ওজন হলেও সাধারণত পিঁপড়ারা ঢের হাল্কা হয়। বিশ্বে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩,০০০ প্রজাতির পিঁপড়া আবিষ্কৃত হয়েছে। আকারে ও ওজনে তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, গড় ওজন ১০ মিলিগ্রামের আশেপাশে হয় বলেই জানা গেছে। তবে এটাও ঠিক, দুনিয়ায় পিঁপড়ার সঠিক সংখ্যা কোনোদিনই জানা সম্ভব নয়।
এই মুহূর্তে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭২০ কোটি। ১৫ বছর বয়সের বেশি মানুষের মোট ওজন তাহলে ৩৩,২০০ কোটি কিলোগ্রামেরও বেশি। তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত পিঁপড়াকে ওজন করলেও তা খুব বেশি হলে ৪০০০ কোটি কিলোগ্রাম হবে। অর্থাৎ উইলসন ও হোয়েলডবলারের তত্ত্ব ভুল।
কিন্তু র্যাটনিকসের বিশ্বাস, অতীতে এই তত্ত্ব নির্ভুল প্রমাণ করা সম্ভব ছিল। তার দাবি, ২০০০ বছর আগে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার চেয়ে ওজনে ভারি ছিল পিঁপড়ারা। তার যুক্তি, সেই সময় জনসংখ্যা কম থাকায় এবং দূষণ ও উষ্ণায়নের জেরে কীট-পতঙ্গের সংখ্যা হ্রাস না পাওয়ায় দাঁড়িপাল্লার বিচারে মানবজাতিকে হেসেখেলে টেক্কা দিত পিঁপড়ারা।