রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

সিরিয়ায় হামলার ঘোষণা বারাক ওবামার

সিরিয়ায় হামলার ঘোষণা বারাক ওবামার

সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন। তবে তিনি বলেন, কংগ্রেসে পাস হওয়ার পরই এ হামলা চালানো হবে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের সভা বসবে। বিবৃতিতে ওবামা বলেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এর জবাব দিতে সেখানে সীমিত আকারে সামরিক অভিযান চালানো হবে।
গতকাল রাজধানী দামেস্কে জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ক যে প্রতিনিধি দলটি ছিল, তা সিরিয়া ত্যাগ করার পরপরই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয় আর বাজতে শুরু করেছে যুদ্ধের দামামা। এ অবস্থায় সিরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। 
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় বাশার বাহিনীর বিরুদ্ধে যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের দাবি করেছে তা প্রমাণ করার দাবি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এদিকে গতকাল সিরিয়া উপকূলে আরও রওনা দিয়েছে মার্কিন 'ষষ্ঠ নৌবহর।' জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশ রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। কিন্তু যুদ্ধ ইতিহাসে নতুন শব্দ প্রয়োগ করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে, সিরিয়ায় হামলার জন্য জাতিসংঘের অপেক্ষা আর নয়, প্রয়োজন হলে 'সীমিত আকারে' হামলা চালানো হবে। অপরদিকে, হামলা হলে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে তার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বাহিনী।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুসারে, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে এর তথ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করছিল হামলা করা হবে কিনা। এরই মধ্যে বার্তা সংস্থা বিবিসি প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে। সেই দাবির সমালোচনা উঠেছে বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই একই দাবি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে। জাতিসংঘের দুজন কূটনীতিক গিয়েছিলেন সিরিয়ায় নমুনা সংগ্রহের কাজে। তারা নমুনা নিয়ে ফিরেছেন। কি প্রমাণ পেয়েছেন তা জানাতে সময় লাগবে বলে জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন। কিন্তু জাতিসংঘের তদন্তকারী দল দামেস্ক ত্যাগ না করা পর্যন্ত হামলা চালাতে পারছিল না যুক্তরাষ্ট্র। তাই অপেক্ষা করা হচ্ছিল তাদের দামেস্ক ত্যাগের। এখন তাদের ত্যাগ করার পর আর কোনো বাধা থাকল না হামলার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভূমধ্যসাগরে জড়ো করা হয়েছে ক্রুজ মিসাইল সজ্জিত পাঁচটি ডেস্ট্রয়ার ও ২২০০ মেরিন সেনা বহনকারী উভচর যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস সান আন্তোনিয়ো। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে প্রকৃত সত্য জেনে গেছে। চার পাতার সরকারি দলিলে বলা হয়েছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে ২১ আগস্টের রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় সরকারি বাহিনী এক হাজার ৪২৯ জনকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪২৬ জন শিশু। জাতিসংঘ তদন্ত দল এর চেয়ে নতুন আর কোনো তথ্য বিশ্বকে দিতে পারবে না বলেও দাবি করেছেন কেরি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে 'খুনি' আখ্যা দিয়ে কেরি বলেছেন, অভাবনীয় এ হামলার পর আর বসে থাকা যায় না। 
হোয়াইট হাউসে এর আগে ওবামা সাংবাদিকদের বলেছেন, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার মূলত বিশ্বের প্রতি ছুড়ে দেওয়া সিরিয়ার একটি চ্যালেঞ্জ, যা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। অবশ্য ওবামার এই দাবির তীব্র সমালোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে নির্বোধের ব্যাখ্যা। সিরিয়ার সেনাবাহিনীই যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে এমন প্রমাণ জাতিসংঘে উপস্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়ে পুতিন বলেছেন, আসাদ বিরোধীদের ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য এ ধরনের সম্পূর্ণ নির্বোধ অভিযোগ তোলা হচ্ছে। 
'সীমিত হামলা'র পরিধি নিয়ে বিতর্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত 'সীমিত আকারে'র হামলা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। কারণ যুদ্ধকালীন সময়ে সীমিত আকারের হামলার সঙ্গে কেউ পরিচিত নয়। এ হামলার আওতা কতখানি থাকবে তার কোনো নিশ্চিত তথ্য দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়াবাসীর সঙ্গে সঙ্গে এটা জানে না বিশ্ববাসীও।

সর্বশেষ খবর