রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

বঙ্গভবন সব সময় আরামদায়ক নয়

বঙ্গভবন সব সময় আরামদায়ক নয়

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন সবসময় আরামদায়ক নয়। সংসদে মনের খোরাক মিটত, বঙ্গভবনে তা নেই। আসলে এখানে পারসোনাল লাইফ নেই। আই অ্যাম নট অ্যাট অল এ ফ্রি ম্যান। খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেওয়া হোক, সে তো আর বনের পরিবেশ পায় না। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে বুধবার রাতে এক আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। ২৪ এপ্রিল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে এক বছর পূর্ণ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি একটা দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছি। ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করতে পারি না। কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করলে আধঘণ্টার মধ্যে গাড়ি রেডি। কিন্তু রাস্তা বন্ধ হবে। যে বাসায় যাব, সেখানকার রান্নাঘর থেকে শুরু করে সবকিছু চেক হবে। এটা আমার জন্য বিব্রতকর। নিতান্তই বিশেষ প্রয়োজন বা সরকারি কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া বের হই না। বাইরে যদিও যাই, দশটা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। ওখানেও নিরাপত্তাকর্মীরা থাকেন। বিদেশে গেলেও একই অবস্থা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম যেবার বিদেশ গেলাম, ভাবলাম কিছুটা হলেও ফ্রি। কিন্তু সেখানেও একা থাকতে দেবে না। নিরাপত্তাকর্মীরা সঙ্গে থাকেন। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর গত বছর ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন কিশোরগঞ্জ থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দুই দফা স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া আবদুল হামিদ কৈশোরেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাষ্ট্রপতি বলেন, যখন কোর্টে প্র্যাকটিস করতাম চেম্বারে মানুষ আসত, কথা বলতাম। যদি কখনো না আসত, তবে যেখানে আড্ডা হতো, সেখানে চলে যেতাম। সংসদেও আড্ডা দিতাম। এমপিরা আসতেন, সাংবাদিকরা আসতেন। বঙ্গভবনে সে সুযোগ নেই। এর আগে বঙ্গভবনে বেশির ভাগই ছিলেন বিচারপতি-শিক্ষক। স্বভাবত তারা বেশি মানুষের সঙ্গে মেশেন না। তিনি বলেন, স্পিকার থাকার সময় পাঁচ-সাত দিন এলাকায় গিয়ে থাকতাম। এখন সে অবস্থা নেই। এলাকায় গেলে পুলিশসহ পাঁচ-ছয় শ মানুষ ব্যস্ত থাকে। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে এত লোক রাখার উপায় নেই।আমি আরামে থাকব।কিন্তু পুলিশের কনস্টেবল, যারা আসে তারা হয়তো ভালো করে খেতে-ঘুমাতে পারবে না। তিনি বলেন, যখন ডেপুটি স্পিকার ছিলাম তখন দায়দায়িত্ব বেশি ছিল না। স্পিকার হাউসে না গেলে হাউস পরিচালনা করতে হতো। আর কোনো কাজ নেই। স্পিকারকে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সজাগ থাকতে হয়। সংসদে থাকার সময় আমি অনেক কিছু পরিকল্পনা করেছি। এটা-ওটা বাদ দিয়েছি। বঙ্গভবনে দেখার তেমন কিছু নেই। তবে আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে বিদেশ সফরে হোটেলের ভাড়া কমিয়েছি। স্পিকার থাকার সময় একা যেতাম। এখন তো আর সে উপায় নেই। তবে সফরসঙ্গীদের হোটেল ভাড়াও অর্ধেক করেছি। তিনি বলেন, ক্লাস নাইনে থাকতে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করি। তখন এখনকার মতো শহীদ মিনার ছিল না। বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে তার ওপর কাগজ লাগিয়ে তৈরি করতাম শহীদ মিনার। এগুলো তৎকালীন সরকার ভালোভাবে নেয়নি। ক্লাস নাইনে থাকতেই প্রথম থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের চার-পাঁচ জনকে। দোষ- আমরা কেন ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করলাম। পরে শুনলাম মেজর আসবেন, এটা ১৯৫৯ সালের কথা। মেজর আসার কথা শুনে লকআপে ঢোকাল। পরে মেজর আমাদের দেখে বললেন, এ তো বাচ্চা লোগ, ছোড় দো।

ম্যাট্রিক শেষ করে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হই। ওই সময় ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ছিলাম। তখন বড় করে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করেছিলাম। দেড় মাইল দীর্ঘ ২১ ফেব্রুয়ারির মিছিল হয়। ওখান থেকে সবার কাছে পরিচিত হলাম। '৬২-এর ৩১ ডিসেম্বর মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী কিশোরগঞ্জ আসেন। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। তার সভা ভণ্ডুল করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল আমাকে। পরদিন শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, আশপাশের দশ মাইলের মধ্যে যত স্কুল আছে সব ছাত্র মিছিল করল। সারা কিশোরগঞ্জে শুধু ছাত্র আর ছাত্র। তৎকালীন এসডিও সাইদ বুঝলেন জামিন না দেওয়া হলে কোর্টের একটি ইট-কাঠ, দরজা-জানালাও থাকবে না। পরে ছাত্ররা আমাকে কাঁধে বয়ে মিছিল করে নিয়ে গেল। কলেজ ছাত্র সংসদে জিএস পদে দাঁড়ালাম। আমার বিরুদ্ধে ছয়জন দাঁড়ালেন। তারা ছয়জন ভোট পেলেন ১০ শতাংশ। আর আমি ৯০ শতাংশ। এটা ছিল আমার প্রথম নির্বাচন।

 

সর্বশেষ খবর