শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের ইতিবাচক অগ্রগতি

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস আজ

জিন্নাতুন নূর

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের পরিমাণ ইতিবাচক হারে কমছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সহস ব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্রুত দারিদ্র্যের হার কমেছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাসের হার পাশের দেশ ভারতের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দারিদ্র্য হ্রাস করে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে ‘গোল্ডেন অপরচুনিটি’ আছে। এ জন্য আমাদের জিডিপি ৬.৫ থেকে বাড়িয়ে ৭ বা তার বেশিতে নিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুসংহতসহ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গুণগত শিক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে।

ওপিএইচআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারতে দারিদ্র্য কমেছে ঠিকই কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এগিয়ে। ভারতে যেখানে ১ দশমিক ২ শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে সেখানে বাংলাদেশে এ হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে এমডিজি বাংলাদেশের অগ্রগতি রিপোর্ট ২০১৩ অনুযায়ী দেশে বিগত এক দশকে অর্থাৎ ২০০১-১০ মেয়াদে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় দেড় কোটি। অথচ এর আগের দশকে অর্থাৎ ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছিল মাত্র ২৩ লাখ। এ সময়ে মাথাপিছু মাসিক আয় ও ব্যয় দুটোই বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৪ অনুসারে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রতিটি সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের গভীরতা ও তীব্রতা উভয়ই উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয়টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং একটি দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার অন্যতম লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য বিমোচন। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সরকারের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০১৫ সাল নাগাদ সাধারণ (উচ্চ) দারিদ্র্যের হার ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এখন লক্ষ্য ২০২০ সাল নাগাদ এটি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ নামিয়ে আনা। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, স্বাধীনতার পর দেশের বিভিন্ন সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সহযোগিতার কারণে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম, বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগ এবং একই সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমছে। আর সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ঘিরে করা প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৬ সালে দারিদ্র্য বর্তমানের হার থেকে কমে ২২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সময়ে চরম দারিদ্র্য ৮ শতাংশে নেমে আসবে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি ৭ থেকে সাড়ে ৭ অর্জন করতে পারলে দারিদ্র্য অনেকাংশে হ্রাস পাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দারিদ্র্য চিত্রের অবনতি হতে পারে। এ জন্য আমাদের  ‘গ্রোথ রেট’ ও ‘ডিস্ট্রিবিউশন অব ইনকাম’ বাড়াতে হবে। যদিও দারিদ্র্য হ্রাসে ’৯০-এর দশক থেকে সরকার নীতিগতভাবে সাহায্য করছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের কিছু মানুষের হাতেই সম্পদ রয়েছে। এ জন্য বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও তারা মার্জিনেই বসে আছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুযোগ হচ্ছে বিদেশ থেকে ৭০ লাখ প্রবাসী দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়া আমাদের সুষ্ঠু বিনিয়োগ অব্যাহত থাকলে আমাদের জন্য দারিদ্র্য হ্রাস কঠিন নয়।

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস আজ : আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস আজ। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ১৭ অক্টোবরকে দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের মর্যাদা দেওয়া হয়। দারিদ্র্য বিমোচন স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে দুই দশক ধরে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে।

২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। দারিদ্র্য ও বঞ্চনা দূরীকরণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে কিছু এনজিওর উদ্যোগকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অভিনন্দন জানানো হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ এ দিবসটি পালন করে আসছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর