সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিহত ছয় জাপানি জাইকার ইতালীয়রা গার্মেন্ট কর্মকর্তা

জিন্নাতুন নূর

নিহত ছয় জাপানি জাইকার ইতালীয়রা গার্মেন্ট কর্মকর্তা

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে শুক্রবার রাতে নিহত বিদেশিদের মধ্যে ছিলেন ইতালির ৯ জন, ৭ জন জাপানি এবং একজন ভারতীয়। এর বাইরে ছিলেন তিন বাংলাদেশি। যার মধ্যে একজন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। এর মধ্যে নিহত ৯ ইতালীয়র অধিকাংশই বাংলাদেশে গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। আর ৭ জাপানির মধ্যে ৬ জন এসেছিলেন মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজে। নিচে তাদের পরিচয় তুলে ধরা হলো— নাদিয়া বেনেদিত্তি : কর্মসূত্রে বাংলাদেশে ছিলেন ইতালির নাগরিক নাদিয়া বেনেদিত্তি (৫২)। তিনি ছিলেন স্টুডিওটেক্স লিমিটেড নামের একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির বাংলাদেশ শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাদিয়ার পরিচিত তারিক হায়দায় জানান, ১২ বছর ধরে নাদিয়া বাংলাদেশে বায়িং হাউসের ব্যবসা করছিলেন। নাদিয়ার বাবা ১৯৯৬ সালে ইনিশিয়াল সোর্সিং লি. নামে বাংলাদেশে এই ব্যবসা শুরু করেন। বাবার মৃত্যুর পর নাদিয়া এই ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। তিনি গাজীপুরে তিনটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর বাইরে তার একটি প্রিন্টিং প্রেস ও আরও দুটি কারখানা আগামী দুই মাসে শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার ব্যবসায় অন্য কোনো সহযোগী বা অংশীদার নেই। তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করতেন ৬ হাজার কর্মচারী। নাদিয়া গত শুক্রবার হলি আর্টিজানে আরও কিছু ইতালীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে ডিনার করতে গিয়েছিলেন।

ক্লাউদিয়া দান্তোনা : গত পাঁচ বছর ধরে ক্লাউদিয়া দান্তোনা (৪৫) বাংলাদেশে একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। এই কোম্পানিটি টি-শার্ট ও পোশাক তৈরি করত। তিনি ভেনাডো আল লামব্রোতে থাকতেন। বাংলাদেশে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তার ইতিবাচক মনোভাব ছিল।

ভিনচেনসো দালেস্ত্রো : সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ভিনচেনসো দালেস্ত্রো (৪৬) ছিলেন ইতালির নাগরিক। শুক্রবার রাতে তিনিও নিহত হন।

ক্লাউদিয়া মারিয়া ডিএন্তোনা : বাংলাদেশে ইতালিয়ান কোম্পানি ফেডো ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন ক্লাউদিয়া মারিয়া ডিএন্তোনা (৫৬)। তিনি ২০ বছর ধরে তার স্বামী গিয়ান গালিয়াজো বসচেটিকে নিয়ে বাংলাদেশে থাকতেন। শুক্রবারের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ইতালীয় নাগরিক গালিয়াজো বসচেটি। তারা দুজনই হলি আর্টিজানে একসঙ্গে ডিনার করছিলেন। কিন্তু হামলার পর বসচেটি কোনোভাবে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলেও মারিয়া পারেননি। মারিয়া একই সঙ্গে একজন প্যারামেডিক ছিলেন।

সিমোনা মন্তি : ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ইতালির নাগরিক সিমোনা মন্তি (৩৩) ছিলেন সাত মাসের গর্ভবতী। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য তার শিগগিরই ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। 

অ্যাডেল পুলিস্টি : ৫০ বছরের অ্যাডেল পুলিস্টি ছিলেন ইতালির। তিনি থাকতেন কাটানিয়াতে। গত শনিবারই তার নিজ দেশে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি আর্টজানা নামক একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। 

ক্রিশ্চিয়ানো রোজি : ইতালির নাগরিক ক্রিশ্চিয়ানো রোজি (৪৭) ফিলেটো আমবারটো কোম্পানির ম্যানেজার ছিলেন। তিন বছর বয়সী দুই যমজ কন্যার বাবা তিনি। গত বৃহস্পতিবার তার ইতালি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার ভ্রমণ তিনি পরিবর্তন করেন। তার ফাইব্রাস লিমিটেড নামে নিজের আরেকটি  কোম্পানি ছিল। এটি ছিল একটি কনসালটিং ফার্ম। এটি বাংলাদেশ ও চায়নার সঙ্গে কাজ করত।

মারিয়া রিভলি : ইতালীয় আরেক নাগরিক মারিয়া রিভলি (৩৩)। তার স্বামী ও তিন বছর বয়সী সন্তান আছে। বাংলাদেশে তিনি একটি ব্যবসায়িক কাজে এসেছিলেন। কাজ করতেন টেক্সটাইল খাতে। গত কয়েক মাস ধরে তিনি বাংলাদেশে ছিলেন।

মার্কো তন্দ্যোৎ : মার্কো তন্দ্যোৎ ছিলেন একজন তরুণ ইতালীয় ব্যবসায়ী। তিনি ছিলেন ৬ বছর বয়সী কন্যাসন্তানের বাবা। তিনি টেক্সটাইল সেক্টরে কাজ করতেন। তিনি স্টুডিওটেক্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।  

তারুশী জৈন : ঘটনায় নিহত হন একমাত্র ভারতীয় নাগরিক তারুশী জৈন (১৮)। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের একটি ইন্টার্নশিপের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন।

জাপানি ৭ জন : নিহত ৭ জাপানির মধ্যে ছয়জন জাইকার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী। তারা ঢাকায় মেট্রোরেল রুট ১ এবং  মেট্রোরেল রুট ৫ প্রকল্পের সমীক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে কোইও ওগাসাওয়ারা কাজ করতেন কাতাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনালে। হিরোশি তানাকা কাজ করতেন ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল নামক প্রতিষ্ঠানে।  নোবুহিরো কুরোসাকি এই জাপানি নাগরিকও কাজ করতেন ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবালে। হিদেকি হাশিমতো ছিলেন  ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবালে কর্মরত। ওকামুরা মাকোতো ছিলেন আলমেক করপ নামক প্রতিষ্ঠানে। ইউকো সাকাই ছিলেন আলমেক করপের আরেক সদস্য জাপানিজ ইউকো সাকাইও কাজে। শিমোদায়রা রুই কাজ করতেন আলমেক করপে।

অবিন্তা কবির : বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী অবিন্তা কবির (১৮) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। থাকতেন মিয়ামিতে। তিনি ছিলেন ইমোরি অক্সফোর্ড কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে তার গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কথা ছিল। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন বলে গত ২৭ জুন তিনি দেশে আসেন। ইফতারের পর পরই তিনি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরেক বন্ধু ও এই ঘটনায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে হলি আর্টিজানে যান। অবিন্তা ফেসবুক প্রোফাইল থেকে দেখা যায় যে, সদা হাস্যোজ্জ্বল তরুণীটি ছিলেন স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিটিজ কমিটির সঙ্গে জড়িত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও অবিন্তা তার প্রোফাইলে যুক্তরাষ্ট্র না লিখে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক উল্লেখ করেছেন। এ থেকে তার দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

সর্বশেষ খবর