বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে গুলি ও কুপিয়ে সহযোগীসহ ইউপি চেয়ারম্যান খুন

কুমিল্লা প্রতিনিধি

রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে গুলি ও কুপিয়ে সহযোগীসহ ইউপি চেয়ারম্যান খুন

মনির হোসেন

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন সরকার এবং তার গাড়িচালক মহিউদ্দিনকে গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপ ও গুলিতে তার দুই সহযোগী আহত হয়েছেন। নিহত মনির হোসেন (৪৫) জিয়ারকান্দি গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিন সরকারের ছেলে এবং মহিউদ্দিন (২৫) দাউদকান্দি উপজেলার সরকারপুর গ্রামের আবিদ আলীর ছেলে। আহতরা হলেন তিতাসের জিয়ারকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২৮) ও সুমন মিয়া (২০)। এ ঘটনার জন্য তিতাস উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল সিকদারকে দায়ী করছেন মনির হোসেনের লোকজন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকালে একটি মাইক্রোবাসে ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন একটি মামলার হাজিরা দিতে কুমিল্লা যাচ্ছিলেন। তাদের বহন করা গাড়িটি ঢাকা-হোমনা সড়কের গৌরীপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পৌঁছলে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। ওই সময় গাড়িতে থাকা মনির চেয়ারম্যান ও তার দুই সহযোগী গাড়ি থেকে নামার পরপরই তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাদের গুলি করে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। গৌরীপুর ফাঁড়ির পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতাল গৌরীপুরে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মনির হোসেন ও মহিউদ্দিনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তিতাসে থমথম অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দলীয় আধিপত্য বিস্তার এবং সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের চাঁদা নিয়ে কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে মনির হোসেনের বিরোধ ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। মনির হোসেনের সঙ্গে গাড়িতে থাকা রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমরা গাড়িতে ছয়জন ছিলাম। সোহেল সিকদারের লোক রাসেল প্রথমে মনির ভাইয়ের ওপর গুলি চালায়। পরে শাকিল, রাসেল, আহসানসহ অন্যরা হামলা চালায়। আমরা পালিয়ে বেঁচে যাই।’ এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও তিতাস উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল সিকদারকে পাওয়া যায়নি। মনির হোসেনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে কে মেরেছে আমরা জানি না। তবে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে ও কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা এ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’ কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, ‘দাউদকান্দির গৌরীপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। এখনো মামলা হয়নি। অপরাধীদের শনাক্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

শক দিয়ে ও পিটিয়ে যুবক হত্যা : কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম গ্রামে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে ও পিটিয়ে মোক্তার হোসেন নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। একই ঘটনায় সালমান সবুজ নামে আরেক যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই দুই যুবককে তিন দিন আটকে রেখে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। তাদের মধ্যে মোক্তার হোসেন গতকাল বিকালে মারা যান। মোক্তার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি আহত সালমান সবুজের অবস্থা মুমূর্ষু। বুড়িচং উপজেলার মোকাম গ্রামের হাকিম আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মাদকের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে হাকিম আলীর ছেলে সাইফুলসহ অন্যরা তাদের আটকের পর নির্যাতন করে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। পুলিশ নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। বক্তব্য নেওয়ার জন্য হাকিম আলীর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ওই পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবেশীরাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। স্থানীয় দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শরীফ জানান, সন্ধ্যায় তারা লাশ উদ্ধার করেছেন। তবে কীভাবে এ যুবক মারা গেছেন সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত পরে জানাবেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর