শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্মূল চেষ্টায় মিয়ানমার

আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চাইল বাংলাদেশ

প্রতিদিন ডেস্ক

রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টা করছে  মিয়ানমার।

বাংলাদেশের কক্সবাজারে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক কার্যালয়ের প্রধান জন ম্যাকিসিক বিবিসি বাংলাকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী পুলিশ যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের শাস্তি দিচ্ছে। নিরাপত্তাবাহিনী পুরুষদের হত্যা করছে, তাদের গুলি করছে, শিশুদের জবাই করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, বাড়িঘর লুট ও অগ্নিসংযোগ করছে এবং এদের নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করছে। এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংকট সমাধানে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার। এ সংকট যেভাবে মোকাবিলা করছে অং সান সু চির সরকার তাতে পশ্চিমা দেশগুলোয় উদ্বেগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য জাতিসংঘে সামান্থা পাওয়ার অন্য কূটনীতিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তাতে তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, মিয়ানমার নিজে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে পারবে না। পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, মালয়েশিয়া, মিসরসহ বিভিন্ন দেশ। বৈঠকে মিয়ানমারে অব্যাহত সংস্কার প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থাকে ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেন সামান্থা পাওয়ার। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে আঞ্চলিক ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করছে মালয়েশিয়া। এ টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক মিয়ানমার। এদিকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক কার্যালয় আভাস দিয়েছে, বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় তাহলে মিয়ানমার সরকার নৃশংসতা চালাতে আরও উৎসাহিত হবে এবং মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়টিকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সীমান্তের দিকে ঠেলতে থাকবে। গত অক্টোবরে মিয়ানমারের মংডুতে বিদ্রোহীদের হাতে ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের দমন অভিযানে নামে দেশটির সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়াসহ নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে একটি গ্রামে অভিযান চালাতে গিয়ে হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে তারা। এমনকি যেসব রোহিঙ্গা নাফ নদ পার হওয়ার জন্য পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরও পেছন থেকে গুলি করেছে সেনারা। গত কয়েক দিনে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি তাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এদের ফেরত নেওয়া দূরের কথা বরং বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা করেছে মিয়ানমার। দেশটির সরকারের দাবি, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নয়, বাংলাদেশের নাগরিক। এদিকে আন্তর্জাতিক মহলে নানা সমালোচনা ওঠার পর অং সান সু চিও কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজধানী ন্যাপিডোয়। তাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, তার দেশের সঙ্গে অন্য দেশগুলো ‘আনফেয়ার’ আচরণ করছে। চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারে নির্যাতিত অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সমুদ্রপথে যাত্রায় একটি নৌকা ডুবে অনেকে মারা যান বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সহিংসতা থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষ মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছেন। এতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার। মিয়ানমারে এখন গণতান্ত্রিক সরকার। এ সরকার গঠন করেছে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল। কিন্তু শান্তিতে নোবেল পেলেও তার দেশে তার সরকারের সময় রোহিঙ্গা মুসলিমদের যেভাবে নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে তাতে তাজ্জব গোটা বিশ্ব।

২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে আরেকবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। তাতে নিহত হয়েছিলেন কয়েক শ মানুষ। কিন্তু সু চি সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখন তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার আন্দোলনও শুরু হয়েছে পৃথিবীব্যাপী। বিবিসি, এএফপি।

সর্বশেষ খবর