বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : বেনজীর আহমেদ

আওয়ার পিপল উইল ডিকটেট...

আওয়ার পিপল উইল ডিকটেট...

‘আমার দেশে কোন বাহিনী থাকবে না আর কোন বাহিনী গঠিত হবে, তা সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্র, জনগণ এবং সরকার। আমাদের দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ আমরাই নির্ধারণ করব। আওয়ার পিপল উইল ডিকটেট।’ কথাগুলো ঠিক এভাবেই বলছিলেন এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)প্রধান বেনজীর আহমেদ। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বেশ খোলামেলা কথা বলেছেন। বলেছেন, র‌্যাবের নানা বিষয় নিয়ে। সন্ত্রাস দমনে র‌্যাবের প্রয়োজনীয়তার সুনির্দিষ্ট কারণগুলো উঠে এসেছে র‌্যাবের এই মহাপরিচালকের বক্তব্য থেকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাখাওয়াত কাওসার।

পুরো নাম বেনজীর আহমেদ। বিসিএস-’৮৫ ব্যাচের স্মার্ট, সুদর্শন এই কর্মকর্তা র‌্যাবের আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার বিপজ্জনক সময়গুলোতে তার সাহসী ও সময়োপযোগী ভূমিকার কারণে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে একাধিকবার রক্ষা পায় রাজধানী ঢাকা। ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিত্যনতুন কৌশল নিয়ে সফল হন। হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের নামে নাশকতার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন তৎকালীন ঢাকার পুলিশ কমিশনার বর্তমান র‌্যাবপ্রধান এই বেনজীর আহমেদ। এর আগে চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পুলিশ সদর দফতরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি জীবনে অসামান্য অবদান ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি চারবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং আইজিপি’স এক্সেমপ্লেরারি গুড সার্ভিস ব্যাজসহ জাতিসংঘ পদক বসনিয়া, কসোভো, নিউইয়র্কে ভূষিত হন। কাজ করেছেন জাতিসংঘ পুলিশের কনসালট্যান্ট হিসেবেও।

গত রবিবার র‌্যাব সদর দফতরে মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। যা প্রশ্ন ও উত্তর আকারে প্রকাশ করা হলো।  বা প্র : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো র‌্যাব বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের রায় ঘোষণার পরই তারা এই দাবি করল? বাহিনীর প্রধান হিসেবে বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

বেনজীর আহমেদ : আমার দেশে কোন বাহিনী থাকবে না আর নতুন কোন বাহিনী গঠিত হবে এটা সিদ্ধান্ত নেবে এ দেশের রাষ্ট্র, জনগণ এবং সরকার। এর বাইরে এসব বক্তব্য আমার মনে হয় এত গুরুত্ব দিয়ে দেখা ঠিক না। এটা আমাদের জাতির জন্য সম্মানজনক নয়। আমাদের দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ আমরা নির্ধারণ করব। আওয়ার পিপল উইল ডিকটেট। ইনশাআল্লাহ এট আওয়ার টার্মস। আমি বলব, এ ধরনের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার বা পাত্তা দেওয়ার যে সময়, আমার দেশ এবং জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেটি বেশ আগেই অতিক্রম করে এসেছে।

বা প্র : নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার পর আপনি বলেছেন ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না, ভবিষ্যতে বাহিনীর সদস্যদের এ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?

বেনজীর : এখানে দুটি বিষয়। একটা হলো প্রতিরোধমূলক অন্যটা প্রতিকারমূলক। ভবিষ্যতে যাতে বাহিনীর কর্মকাণ্ডে এ ধরনের কোনো ব্যত্যয় না ঘটে সেজন্য বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের কর্মকাণ্ডের জন্য ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন, সুপারভিশন, মনিটরিং এবং কাউন্টার ইন্টিলিজেন্স অব্যাহত রয়েছে। এর বাইরে র‌্যাব-সংশ্লিষ্ট সব ঘটনাকেই মনিটর করা হয়। রয়েছে মোটিভেশনারি অ্যাকশনও। খারাপ কাজ করলে যেমন শাস্তি নিশ্চিত করা হয় তেমনি ভালো কাজ করলে র‌্যাবে পুরস্কারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি অধিনায়ক সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে র‌্যাবের ১৪টি ব্যাটালিয়নকে সংযুক্ত করা হয়েছিল। প্রতিটি জওয়ান থেকে টুআইসি পর্যন্ত সবাই দেখেছে। ডিজি ভালো কাজের জন্য কিভাবে কাকে কাকে পুরস্কৃত করেছে। বা প্র : অতীতে বিভিন্ন সময় আপনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘ পুলিশের কনসালট্যান্ট হিসেবেও আপনি কাজ করেছেন। তো, নিজের অভিজ্ঞতাকে কিভাবে দেশের পুলিশ বাহিনীতে এমনকি র‌্যাবে কাজে লাগাচ্ছেন? বেনজীর : আমি একাধিকবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করেছি। তবে ওই অভিজ্ঞতা কাট-কপি পেস্ট করে আমাদের দেশে লাগানো যাবে না। কারণ কি, সব দেশের আইন সমান নয়। আইন নির্ভর করে ওই দেশের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের ওপর। তবে বলতে পারি, আন্তর্জাতিক পুলিশিংয়ের নিয়ম এবং মূল্যবোধগুলো আমরা জানি। ১০ বছর আগের থেকে বাংলাদেশ পুলিশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। ১০ বছর আগের তুলনায় থানার পুলিশ সদস্যদের আচরণ এখন অনেক বদলে গেছে। ইতিপূর্বে সাধারণ মানুষ থানার একজন দারোগা সর্বোচ্চ হলে অফিসার ইনচার্জকে চিনতো। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চেনা কিংবা যোগাযোগের সুযোগও তখন কম ছিল। এখন পুলিশ মানুষের দোরগোড়ায় যাচ্ছে। মিটিং করছে, বিভিন্ন ফোরাম তৈরি হচ্ছে। সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের পুলিশ সদস্যরা আসছেন। অভিজ্ঞতা বিনিময় হচ্ছে। তবে বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে পুলিশের স্ট্যান্ডার্ডটা উন্নততর হচ্ছে, পরিমার্জিত হচ্ছে। আমরা সে বিষয়টাতে খেয়াল রাখছি। আমরা আমাদের মতো করে ওই অভিজ্ঞতাগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস অব্যাহত আছে। একটা সময় ছিল পুলিশ ছিল শুধুই একটি দেশের, একটি জাতির। তবে এখন আর সেই অবস্থায় নেই। পুলিশ দেশের সীমা ছাড়িয়েও কাজ করছে, যেমন—জাতিসংঘ। পেশার প্রয়োজনেই বর্তমানে বিভিন্ন দেশের পুলিশের মধ্যে এখন যোগাযোগটা অনেক বেড়ে গেছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইজ গ্রোয়িংলি গোয়িং গ্লোবাল। উই আর গ্রোয়িংলি গোয়িং বর্ডারলেস।’

বা প্র : শুরু থেকেই মামলার তদন্ত ক্ষমতা র‌্যাবের কাছে ছিল। তবে সৃষ্টির পর থেকে এ যাবৎকাল পর্যন্ত র‌্যাব তদন্ত করেছে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি মামলার। আমরা যতদূর জানি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কূল-কিনারাই হয়নি। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?

বেনজীর : আমরা কোন মামলার সরাসরি তদন্তভার নেই না। তবে সরকার চাইলে তদন্তভার র‌্যাব নিয়ে থাকে। এজন্য আমাদের কাছে তদন্ত সীমাবদ্ধ। সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত অনেক দিনের বিষয়। আপনারা জানেন অনেক হাত ঘুরে তদন্তভার আমাদের কাছে এসেছে। আমাদের অফিসাররা কাজ করছে। যদি আমরা কোন ব্রেক-থ্রু করতে পারি তাহলে তা সাফল্যের মুখ দেখবে। আমরা ব্রেক-থ্রুর জন্য অপেক্ষা করছি। 

বা প্র : র‌্যাব সৃষ্টির পর একের পর এক সাফল্য এসেছিল। শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চরমপন্থি গ্রেফতার করে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এই সংস্থাটি। র‌্যাব অপরাধীদের কাছে ছিল রীতিমতো আতঙ্কের নাম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের সাফল্যের মাত্রা আগের মতো নেই। তবে কি অপরাধী এবং অপরাধ কমে গেছে?

বেনজীর : এক সময় র‌্যাব যখন তৈরি হয় তখন বিভিন্ন বাহিনী ছিল ঢাকা শহরে। শীর্ষ সন্ত্রাসীর লিস্ট ছিল। কিন্তু সেই বাহিনীগুলো এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এখন কোথায়? র‌্যাব তৈরি হওয়ার পর এগুলোকে দমন করা হয়েছে। এখন আর তারা তৈরি হতে খুব একটা সাহস পাচ্ছে না।

বা প্র : সম্প্রতি আপনারা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে উৎসাহিত করেছেন। এরই মধ্যে অনেকে আত্মসমর্পণও করেছে। আপনারা তাদের পুরস্কৃতও করেছেন। অনেকেই বলছেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও আদালতের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া র‌্যাব তাদের কিভাবে পুরস্কৃত করছে?

বেনজীর : এই বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। এ কারণেই আমরা এমন কোনো জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করাইনি যে বাংলাদেশের প্রচলিত কোন ধরনের আইন লঙ্ঘন করেছে। তারপরও কেউ যদি আত্মসমর্পণ করতে আসে যে আইন লঙ্ঘন করেছে, তাহলে সে জেলে যাবে। আমরা কোনো কন্ডিশনের মাধ্যমে কাউকে আত্মসমর্পণ করাই নাই। দিস ইজ আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার। এটা সম্ভব হয়েছে, কারণ গত বছরের পয়েলা জুলাইয়ের পর থেকেই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গি দমনের কাজে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি। পয়েলা জুলাইয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা রিপোর্ট টু র‌্যাব নামে বিশেষ একটি অ্যাপস খুলেছি। যাতে সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের জড়তা ছাড়াই র‌্যাবকে তথ্য দিতে পারে। হাজার হাজার পোস্টার, লিফলেট সারা দেশে বিতরণ করেছি। জঙ্গি প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমি নিজে গিয়েছি। আমাদের অফিসাররা গিয়েছেন। জঙ্গিবাদ একটি ভুল এবং ত্রুটিপূর্ণ দর্শন। একটা দর্শন এবং মতবাদকে অন্য একটা মতবাদ দিয়ে পরাজিত করতে হয়। শুধু জেল দিয়ে, ফাঁসি দিয়ে, কাউকে তার বিশ্বাস থেকে সরানো সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার জনমত। আমরা জনমত তৈরি করেই জঙ্গিবাদ দমন করার চেষ্টা করেছি। জঙ্গিদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে। তবে পুলিশ-র‌্যাব তাদের সাঁড়াশি আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। এজন্যই দ্রুত সাফল্য এসেছে। 

বা প্র : জঙ্গিবাদ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে র‌্যাব একটি গবেষণা করছে বলে খবর এসেছে। এ ব্যাপারে বলবেন কী?

বেনজীর : ঠিকই শুনেছেন। আমরা রিসার্চ করছি উত্তরাঞ্চলে কেন তুলনামূলকভাবে জঙ্গি বেশি সৃষ্টি হয়? জঙ্গিদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। এর কারণগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে খোঁজার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, একমাত্র ‘রোবাস্ট পুলিশিং’-এর মাধ্যমে জঙ্গি দমন সম্ভব নয়। জঙ্গি ধরে নিয়ে আসলাম জেলে পাঠালাম, অভিযানে দুই একজন মারা গেল, শুধু এটা নয়। এর পাশাপাশি আমাদের অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। গোড়ায় যেতে হবে, শিকড়ে যেতে হবে। রিসার্চ থেকে প্রাপ্ত দিক-নির্দেশনাগুলোকে বই আকারে আমরা বের করব। একসঙ্গে আমরা ঈড়ঁহঃবৎ ঘধত্ত্ধঃরাব তৈরি করছি। সেগুলো ওয়েবসাইটে দেব। এর ইংরেজি এবং বাংলা দুটি ভার্সনই থাকবে। বিশ্বের মুসলিম এবং নন মুসলিম সবারই এতে একসেস থাকবে। বাংলাদেশে বসেও বৈশ্বিক এই সমস্যাটিকে আমরা গ্লোবালিই ভাবছি।

বা প্র : ঠিক একই প্রশ্ন জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ নিয়েও ...কিছু বলবেন?

বেনজীর : আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। কেউ যদি হত্যা, ধর্ষণের মতো বড় ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত থাকে যার জন্য যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ড হতে পারে সে ধরনের অপরাধের জন্য তার সাজা স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে। যে সমস্ত গ্রুপ আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তারা কেউ আত্মসমর্পণের পর নিজের বাড়িতে যায়নি। সবাই গেছে জেলে। আত্মসমর্পণের জন্য তারা যে অস্ত্র দিয়েছে তার জন্যও তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে তারা কেন আত্মসমর্পণ করছে? আমি বলব, সুন্দরবনের নিরাপত্তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাবের নেতৃত্বে একটি সমন্বিত টাস্কফোর্স কাজ করছে সুন্দরবন এলাকায়। গত দুই বছরে আমরা ১৩৭ জন দস্যু ধরেছি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১১৪ জন দস্যু বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে এবং ৮৪০টি অস্ত্র ও ২১ হাজার ৫৮১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছি। এই যে একটা ভয়াবহ চাপ, তারপর ফেরারি জীবন, এর চেয়ে আত্মসমর্পণ জলদস্যুদের জন্য নিরাপদ। আত্মসমর্পণকারীদের অনেকে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসছেন। তাদের আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কিছুটা আর্থিক পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছি। কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় তাদের এ ধরনের আর্থিক সাহায্য বিতরণ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা চাই তারা চুরি ডাকাতি, দস্যুতা, অপহরণ না করে সমাজের মূলধারায় ফিরে আসুক। আমাদের সমুদ্র জলসীমা এবং ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন নিরাপদ থাকুক।

বা প্র : মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে অনেকটা চোর-পুলিশ খেলা চলছে। আসামি ধরা হয় কিছুদিনের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীরা বের হয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

বেনজীর : মাদক নিয়ে কিন্তু আমরা লিড এজেন্সি না। লিড এজেন্সি হলো ডিএনসি। আমরা ডিএনসিকে সহায়তা করছি। এরপরও আমাদের অনেক সফলতা রয়েছে। নৈতিকতাবোধ থেকেই মাদকের পেছনে আমরা সময় এবং শক্তি ব্যয় করছি। আপনি দেখুন, মিয়ানমারে ইয়াবা তৈরি হচ্ছে কিন্তু সে দেশের মানুষ ইয়াবা খাচ্ছে না। ভারতে ফেনসিডিল তৈরি হচ্ছে কিন্তু সে দেশের মানুষ তা খাচ্ছে না। মাদক নির্মূলের জন্য জাতীয়তাবোধের চেতনা দরকার। সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ বিষয়টাতে। কেবল সরকারি উদ্যোগ এবং বাহিনীর উদ্যোগ নিলে হবে না। জঙ্গির বিরুদ্ধে যেভাবে আমরা সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছি সেভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বা প্র : সাম্প্রতিক কালে অনেক ঘটনায় র‌্যাবের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তো র‌্যাবের জন্য কোন বিশেষ পরিকল্পনা?

বেনজীর : এ ধরনের ঘটনা অনেক নয়, গুটি কয়েক। ২০০৪ সালে র‌্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরপর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনের জন্যই র‌্যাবের সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে জঙ্গিবাদের চেহারা, প্রকৃতি, তীব্রতা এগুলোও পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষা ব্যবস্থারও নানা পরিবর্তন এসেছে। এজন্য র‌্যাবের ও চলমান সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত। আমরা চেষ্টা করছি। সংস্কারের কোনো দাঁড়ি-কমা নেই। এটি একটি চলমান বিষয়। সংস্কারের উদ্দেশ্য হবে ক্ষিপ্রতা, আরও ক্ষিপ্রতা। আরও হতে হবে রোবাস্ট, টেকনোলজিক্যালি এনরিচড এবং আরও ইকুইপড। একই সঙ্গে সবকিছুর মূল হবে ট্রুপস অ্যান্ড ফোর্স। মোটিভেশনের মাধ্যমে ট্রুপসকে আরও ক্ষিপ্র করে তুলবেন অফিসাররা। এটা অনেকটা হার্ডওয়্যারের মতো। টেকনোলজি আনা হলো, ব্যবহার করার জন্য দক্ষ জনবল নেই—তাহলে তো হবে না। সফটওয়্যারের সঙ্গে সঙ্গে হার্ডওয়্যারও থাকতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে র‌্যাবে আমরা অনেক নতুন নতুন টেকনোলজি এনেছি। বিশেষ করে পয়লা জুলাই-পরবর্তী র‌্যাবে অনেক নতুন টেকনোলজি যুক্ত হয়েছে। হলি আর্টিজানের ঘটনা আমরা মাত্র ১১ ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিলাম। যেখানে এ ধরনের ঘটনায় ভারতে তিনদিন, প্যারিসে দুইদিন, আমেরিকায় দুই দিন লেগেছে। পয়লা জুলাই এরপর রাষ্ট্র যেভাবে প্রতিউত্তর দিয়েছে আমরা আশা করি, তাতে করে এ ধরনের ঘটনা আর এ দেশে ঘটবে না। খোদা না করুন, তারপরও যদি ঘটে তা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের ১১ ঘণ্টার অর্ধেক সময়ও লাগবে না। তিনি আরও বলেন, এলিট ফোর্সের জন্য একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। বর্তমানে ১৪টি ব্যাটালিয়ন আছে। দুই বছরের কিছুটা বেশি সময় ধরে আমি মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করছি। আমার মনে হয় আমরা যদি র‌্যাবে আরও তিন থেকে চারটি ব্যাটালিয়ন যোগ করতে পারি, তাহলে আরও ভালোভাবে জনসেবা দিয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখা সম্ভব হবে। তবে এই ফোর্সটিকে খুব বেশি বিস্তৃত করা ঠিক হবে না। র‌্যাবের দায়িত্বও কিন্তু খুব সংক্ষিপ্ত। সীমাবদ্ধ দায়িত্ব নিয়েই র‌্যাবকে ক্রমাগত হাঁটতে হবে শুধু সাফল্যের পথ ধরে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর