সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাদের খানের দায় স্বীকারে স্বস্তি এলাকায়

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

কাদের খানের দায় স্বীকারে স্বস্তি এলাকায়

এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. কাদের খানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সুন্দরগঞ্জে স্বস্তি ফিরে এসেছে। লিটন হত্যা ঘিরে জামায়াত-শিবির, জঙ্গি, ব্যবসায়িক লেনদেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল, এ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে তা কেটে গেছে। শনিবার আদালতে কাদের খানের স্বীকারোক্তির পর হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকাবাসীর মনে আর কোনো সন্দেহ-সংশয় নেই বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন। তদন্তে পুলিশ, র‌্যাবের গ্রেফতার অভিযানে এলাকায় যে দমবন্ধ পরিবেশ বিরাজ করছিল, খুনি শনাক্ত হওয়ায় তা আর থাকবে না বলে এলাকাবাসী আশা করছেন। কাদের খানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর পুলিশের রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমেদ জানান, সাবেক এমপি কাদের খান তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমপি লিটন হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে নিজের দায় স্বীকার করেছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, মূলত এমপি হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা পাওয়ার লোভ এবং নিজে এমপি থাকা অবস্থায় লিটনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া চারজনসহ তথ্যদাতা, আশ্রয়দাতা, অর্থদাতা সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তদন্ত করে তাদেরও এ মামলায় আসামি করা হবে। এসব বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন কুমার সরকারসহ অন্য যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার তদন্ত শেষে ১৫ দিনের মধ্যেই পুলিশ চার্জশিট দিতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জবানবন্দি শেষে কাদের খানকে গাইবান্ধা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কাদের খানের বিচার দাবি : কাদের খানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। লিটন হত্যার পর এলাকায় যে দমবন্ধ পরিবেশ বিরাজ করছিল, কাদেরের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে তার অবসান হয়েছে বলে তারা জানান। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ বলেন, ‘হত্যার রহস্য ও খুনি শনাক্ত হওয়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি।’ একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন। উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, কাদের খান জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি হলেও দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। খুনি যে-ই হোক আইন অনুযায়ী বিচার হলে আমরা সন্তুষ্ট থাকব।’

দায় থেকে বাঁচতে ভারতে যাতায়াত : এমপি লিটন হত্যায় জড়িত নন এমন অকাট্য প্রমাণ রাখতে কাদের খান ভারতের ভিসায় পাসপোর্ট নিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত বছর ১৯ অক্টোবর ভারতে যান। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতে অবস্থান করেন। কিন্তু কাদের খান ভিসা-পাসপোর্টে ভারতে অবস্থান করলেও এমপি লিটন হত্যা মিশন সফল করতে চোরাই পথে দুই থেকে তিনবার ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা গেছে। এমপি লিটন হত্যার পর চলতি বছর ৬ জানুয়ারি ভারত থেকে কাদের খান দেশে ফেরেন।

মিছিল ও সমাবেশ : এমপি লিটনের খুনি কাদের খানসহ জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শোভাগঞ্জ ও ছাইতানতলায় বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন আয়োজিত কর্মসূচিতে কাদের খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর