সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাঙতেই হবে বিজিএমইএ ভবন

রিভিউ আবেদন খারিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাঙতেই হবে বিজিএমইএ ভবন

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ১৬ তলা ভবনটি শেষ পর্যন্ত ভাঙতেই হচ্ছে। এ বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের করা রিভিউ (পুনর্বিচেনা) আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেয়। তবে ভবনটি ভাঙতে কত দিন সময় লাগবে সে বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে আদালতে জানাতে হবে। ওইদিনই ভবন ভাঙতে চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেবে আপিল বিভাগ। আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম এবং রাজউকের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভবন ভাঙতে আদালতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে তিন বছরের সময় আবেদন করা হয়েছিল। আমরাও গুরুত্ব বিবেচনায় এক বছরের সময় চেয়েছিলাম। বিজিএমইএ বৃহস্পতিবারের মধ্যে সময়ের আবেদন জমা দিলে আদালত সে বিষয়ে আদেশ দেবে। প্রায় দুই দশক আগে রাজধানীর বেগুনবাড়ী খালের ওপর নির্মাণ করা হয় ১৬ তলা বিশিষ্ট বিজিএমইএ ভবন। জমির স্বত্ব না থাকা এবং জলাধার আইন লঙ্ঘন করে রাজধানীর হাতিরঝিলের দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প এলাকায় নির্মিত এই ভবনটি ভাঙতে ২০১১ সালে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। ওই রায়ের পর বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিল করে। আপিলের সেই আবেদন খারিজ হলে রিভিউ আবেদন করা হয়। গতকাল সেই আবেদনও নাকচ হলো। ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ লঙ্ঘন করে প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণি বা প্রকৃতি পরিবর্তনের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের জন্য বেগুনবাড়ী খালের একাংশ ভরাট করে ফেলা হয় এবং এতে খালের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে, এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া হাতিরঝিলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইকবাল কবির (বর্তমানে হাই কোর্টের বিচারপতি) ও মনজিল মোরসেদের বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (পরে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন) এবং বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে তা ভাঙার নির্দেশ দেয়। হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিলে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাই কোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাই কোর্টের দেওয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। শুনানি শেষে গত বছরের ২ জুন আপিল বিভাগ বিজিএমইএর আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। 

তিন বছর সময় চায় বিজিএমইএ : নিজেদের অবৈধ ভবন সরাতে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তিন বছর সময় চান পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, আমি মনে করি- তিন বছর সময় পাব। আদালত এটা দয়ার চোখে দেখবে। তখন আমরা অন্য জায়গায় ভবন করে চলে যাব।

প্রয়োজনীয় সময় বিবেচনা করা উচিত : পোশাকশিল্প মালিকদের কার্যালয় বিজিএমইএ ভবন সরাতে প্রয়োজনীয় সময় যাতে সংগঠনটি পায়, তা সক্রিয় বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘এমন কোনো কাজ আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি করেনি, যে কারণে এটিকে জাতীয়ভাবে ভিলেনে পরিণত করা হবে। আমি আশা করি এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’ বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদন গতকাল খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তিনি এ কথা বলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর