মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্বাচনী রোডম্যাপে ইসি

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচনী রোডম্যাপে ইসি

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের  এ খড়সা রোডম্যাপে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দল-সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপ, ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করার সময়সীমা রাখা হচ্ছে। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সম্পন্ন করা এবং সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল মেশিন প্রস্তুত করার সময়সীমা (টাইম ফ্রেম) নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে রোডম্যাপে। অন্যদিকে রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করা, মালামাল সংগ্রহ, ভোটের আগে দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ, নির্বাচনী আইন সংশোধনসহ বেশ কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। এমনকি আগামী ২২ মাসে ইসির বিভিন্ন কার্যক্রমের টাইম ফ্রেম নির্ধারণ করা থাকবে এই কর্মপরিকল্পনায় বা রোডম্যাপে। এদিকে গতকালও রোডম্যাপের খসড়া নিয়ে বৈঠক করেছেন ইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা। কাল আবারও বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে প্রাথমিকভাবে খসড়া চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর ইসির আনুষ্ঠানিক বৈঠকে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবেন নির্বাচন কমিশনাররা। এ ক্ষেত্রে চলতি মাসের মধ্যে এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কে এম নূরুল হুদা কমিশনের অধীনে। এ জন্য আগামী ২২ মাস সংসদ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ করতেই চলতি মাসের মধ্যে চূড়ন্ত করা হবে এই নির্বাচনী রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমাদের (ইসি) কী কী করণীয় তা নির্ধারণ করতে আমরা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছি। সোমবারও এ নিয়ে বৈঠক করেছি। আগামী বুধবার আবারও বৈঠকে বসব।’ কবে চূড়ান্ত হবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করব। পরিকল্পনায় কী কী বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনসহ আরও কিছু বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ কর্মপরিকল্পনায় ইসির সব বিষয় থাকবে।’  যা থাকছে খড়সা রোডম্যাপে : রোডম্যাপে অগ্রাধিকার পাচ্ছে—১. নির্বাচনী আইনের সংস্কার। ২. সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ। ৩. নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন। ৪. ভোটার তালিকা প্রস্তুত। ৫. ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত। ৬. রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সভা বা সংলাপ। ৭. ডিজিটাল ভোটিং মেশিন প্রস্তুত করা। এ ছাড়া আগামী ২২ মাসে ইসির বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনাও রাখা হবে রোডম্যাপে। এর মধ্যে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের উপনির্বাচন, সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনাও রাখা হবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। নির্বাচনী আইন সংশোধন : ইসির সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের রোডম্যাপে প্রথমে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে নির্বাচনী আইন সংস্কারকে। খড়সা রোডম্যাপে সংসদ নির্বাচনের আইন সংশোধনের জন্য জুলাইয়ের মধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এরপর নভেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এবং ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধনীর কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত করার আগে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ : চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়। সেপ্টেম্বরে ৩০০ আসনের খসড়া তালিকা প্রণয়ন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করার সময় নির্ধারণ করা হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন : অক্টোবরের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হবে। এ জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেবে ইসি। এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন যাচাই-বাছাই করে নতুন দলের নিবন্ধন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর নতুন দলের নিবন্ধন শেষ করে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার আগে দ্বিতীয় দফায় সব দলের সঙ্গে সংলাপ করার পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির। ভোটার তালিকা প্রস্তুত : ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে খসড়া প্রস্তুত করবে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ। এরপর ভোটারদের দাবি-আপত্তি শেষ করে ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে তা মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে। ডিজিটাল ভোটিং মেশিন প্রস্তুত : ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন প্রস্তুত করা হবে। এরপর তা ব্যবহারের বিষয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে প্রচারণা শুরু করা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে মকভোটিংয়ের ব্যবস্থাও করবে ইসি। নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ : একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ করা হবে। তফসিল ঘোষণার আগে সংগ্রহ করা হবে ব্যালট বাক্স, সিল। এ ছাড়া আগস্টের মধ্যে প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর