মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাপা চায় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের অন্তর্বর্তী সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাপা চায় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের অন্তর্বর্তী সরকার

পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে গতকাল জাতীয় পার্টির নেতারা রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নির্দিষ্ট সময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের প্রতিনিধি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, ভোটারের ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ আট দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সংলাপ শেষে এরশাদ জানান, সরকারই অন্তর্বর্তী সরকার করবে। গতবারও তাই করেছিল। এটা উনাদের (ইসি) এখতিয়ারভুক্ত নয়। পাবলিক পারসেপশন হলো সেনাবাহিনী যদি মোতায়েন করা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা তাই বলেছি জনগণ চাচ্ছে তাই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার হবে যারা সংসদে রয়েছে তাদের নিয়ে, বিএনপি তো সংসদে নেই। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে। তাই দুঃখজনক ঘটনা হলেও বিএনপি থাকতে পারবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরশাদের নেতৃত্বে ২৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন সংলাপে। তবে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এ দলে ছিলেন না।

 

এরশাদের আট প্রস্তাব : লিখিত বক্তব্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জানান, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপের মধ্যমে আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছি। আমরা বলে আসছি সাংবিধানিক পন্থা অনুসারেই সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সে অনুসারে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে রাজনৈতিক প্রতিনিধিরাই আসীন থাকবেন। তিনি জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ করা চলবে না। লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, ভোটের সময় সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের আনুপাতিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। অন্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে : নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনে কোনো বিতর্কিত কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রাখা যাবে না। নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে সব খরচ তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করতে হবে। প্রচারকাজের গাড়িবহর সীমিত রাখার বিধান রাখতে হবে; বার বার সীমানা নির্ধারণ না করে ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচনকালে প্রয়োজনে সংবিধানের ধারা-উপধারা সংশোধন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলেও একগুচ্ছ প্রস্তাব রেখেছে জাপা।

ইসির জন্য এরশাদের দোয়া : দুই ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় শেষে এরশাদ বলেন, আমরা খুব আশান্বিত, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, গ্রহণযোগ্য হবে, নিরপেক্ষ হবে। উনাদের কথায় আমার বিশ্বাস হয়েছে, উনারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মনেপ্রাণে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তাদের আশ্বাস যেন আল্লাহ পূরণ করেন।

চীন, রাশিয়ার সমর্থন পাইনি : রোহিঙ্গা বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দুবার গিয়েছিলাম। ত্রাণ দিয়েছি। কিন্তু যত রোহিঙ্গা আসছেন, আমাদের জন্য এদের ব্যবস্থাপনা করা কঠিন কাজ হবে। আমি দোয়া করি প্রধানমন্ত্রীকে, তিনি যেন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এদের পুনর্বাসন করতে পারেন। কিন্তু কাজটা সহজ হবে না। আমরা কোথাও সমর্থন পাইনি। চীন, রাশিয়া এমনকি বন্ধু দেশ ভারতও আমাদের সমর্থন দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক বেলা খেতে হয় খাব। রোহিঙ্গাদের খাবারের ব্যবস্থা করব। রাজনৈতিক সংলাপ আরও দরকার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় যথেষ্ট। ইসি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমরা সবাই সন্তুষ্ট। এদিকে নির্বাচন কমিশনে আজ বেলা ১১টার সংলাপে অংশ নিচ্ছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ আর বিকালে ইসলামী ঐক্যজোট।

 

সর্বশেষ খবর