শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবকটিতেই জয়ের টার্গেট আওয়ামী লীগের

ঠিক করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের, দুই সিটিতে প্রার্থীকে সবুজ সংকেত

রফিকুল ইসলাম রনি

সবকটিতেই জয়ের টার্গেট আওয়ামী লীগের

রংপুর, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। তফসিল ঘোষণা না করা হলেও প্রস্তুতি হিসেবে এখনই সম্ভাবনাময় প্রার্থী ঠিক করে রাখছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনে দুই প্রার্থীকে দলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ছয় সিটিতে জয়ী হয়ে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রংপুর সিটিতে ভোট গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়। এজন্য গত সিটি নির্বাচনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অগ্রসর হতে চায় দলটি। বিগত নির্বাচনের অপপ্রচার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রার্থীদের দুর্বল দিক চিহ্নিত করার কাজ সম্পন্ন করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সঠিক প্রার্থী মনোনয়ন এবং ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার বিষয়েই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন মর্যাদার লড়াই মনে করা হচ্ছে। সিটি নির্বাচনে হেরে বিএনপির হাতে কোনো রাজনৈতিক সুবিধা তুলে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। বরং সিটি নির্বাচনগুলোয় জয়ী হয়ে সরকারের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায় দলীয় শীর্ষ পর্যায়। আর এজন্য মেয়র প্রার্থী মনোনয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রমতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশনে বিজয় চায় আওয়ামী লীগ। সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সংসদ নির্বাচনে। তখন বিরোধী শক্তিগুলো দেশি-বিদেশি মহলকে বোঝাতে সক্ষম হবে, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনী পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন দলটি। দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট সিটিতে আওয়ামী লীগের পুরনো প্রার্থীরাই লড়বেন মেয়র পদে। বাকি তিন সিটিতে নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়। গত ৮ জুলাই গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সেদিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য কাজ গুছিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সিলেটে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও রাজশাহীতে সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে মাঠে নামতে নির্দেশ দেন তিনি। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের বিষয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে কোন সিটিতে কাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে রংপুর সিটি নির্বাচনের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী বছরের শুরুতে আরও পাঁচ সিটিতে নির্বাচন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে নির্বাচন কমিশনে। ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপে পর্যায়ক্রমে প্রথমে রংপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে। তবে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, এ ছয় সিটির মেয়াদ কাছাকাছি সময়ে শেষ হবে। তাই অনেক কর্মকর্তা সিটি নির্বাচন একসঙ্গে করার পক্ষে। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ছয় সিটি নির্বাচনে কীভাবে জয়লাভ করা যায় তা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েক নেতা আলাপ-আলোচনা করছেন। দলের আট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিজ বিভাগে সিটি নির্বাচনের কাজ শুরুর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, রংপুরে বর্তমান মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু আওয়ামী লীগের নেতা হলেও নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। এবার সেখানে চলছে নতুন হিসাব-নিকাশ। যে কোনো মূল্যে এই সিটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। সেজন্য শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকেই নিরাপদ মনে করছেন দলের হাইকমান্ড। পরিবর্তন আসছে খুলনায়। এখানে নতুন মুখ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের প্রার্থী হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। বরিশালের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ মারা যাওয়ায় নতুন প্রার্থী আনা হচ্ছে। গাজীপুর সিটির গতবারের প্রার্থী বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে যে কোনো একজন দলীয় প্রার্থী হবেন।

সর্বশেষ খবর